স্থাপত্যবিদ্যা, সাহিত্য, শিল্প এবং সংস্কৃতি- এই চার ধারাকে নিজের ভেতর ধারণ করেছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম কবি রবিউল হুসাইন। ভাষা ও সাহিত্যে অবদান রাখায় ২০১৮ সালে একুশে পদক পান তিনি। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার ছাড়াও অন্যান্য সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ঝিনাইদহের শৈলকূপার সন্তান রবিউল হুসাইনের জন্ম ১৯৪৩ সালে। কুষ্টিয়ায় মেট্রিক আর ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে তিনি ভর্তি হন ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির (বর্তমান বুয়েট) আর্কিটেকচার ফ্যাকাল্টিতে। স্থপতি রবিউলের ঝোঁক ছিল ইটের কাজের দিকে। তার নকশায় বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) ভবনটি ছিল তার প্রিয় একটি কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তি ও স্বাধীনতা তোরণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট, ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল, ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম ও একাডেমিক ভবন কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে রবিউল হুসাইনের নকশায়। কবি রবিউল হুসাইন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য, শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্রিটিক এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটেও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবনেই তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস মিলিয়ে দুই ডজনের বেশি বই রয়েছে তার। এ বছরের ২৬ নবেম্বর, তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শিশু-কিশারদের জন্য চিত্রা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘ছড়িয়ে দিলাম ছড়াগুলি’ বই থেকে রবিউল হুসাইনের কয়েকটি ছড়া-কবিতা উল্লেখ করা হলো-
*
মুজিব মুজিব নামে
বাংলার অহঙ্কার
কাদামাটি দিয়ে
শাদা কাত পুঁটি মাছ
নদী জাল নিয়ে
সাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে
যতদূর যাওয়া যায়
ততদূর চলে গেল
অবশেষে অবলীলায়
বাংলার স্বাধীনতা
বাংলার পতাকা
উড়িতেছে আকাশে
শান্তির বলাকা
মুজিবের নামে তাই
যতকিছু বলি না
কোনটাই শেষ নয়
যাবতীয় ধারণা
হাজার বছর পরে
বাংলার মাটি-নদী
এতদিনে প্রাণ পেল
গভীরতা অবধি
যার বলে স্বাধীনতা
এতদিনে বাংলায়
বাঙালি তা ভোলে না
তাকে নিয়ে গান গায়
চারিদিকে মৌমাছি
প্রজাপতি প্রতিক্ষণ
বাংলার মাটি-বায়ু
গুন্ গুন্ সারাক্ষণ
মুজিব মুজিব নামে
চারিদিকে ধ্বনি ওঠে
গাছে গাছে এত তাই
রাশি রাশি ফুল ফোটে
*
উড়িয়ে দিই বিজয় পাখি
একটি দেশ পরাধীনতায়
ছিল হাজার বছর
সেই দেশটি বাংলাদেশ
সবাই জানে সে খবর
মূলত এই স্বাধিকার
জনগণের ন্যায্য দাবি
যুগে যুগে শাসক-শোষক
দেয়নি তো ওই স্বপ্ন-চাবি
তাই বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করি
মানি নাই তো অধীনতা
যেমন করেই হোক না কেন
পেতেই হবে স্বাধীনতা
ধীর মনোবল বুকে নিয়ে
পাক সেনাদের মুখোমুখি
জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি
মরণপণে শত্রু রুখি
আজ স্মরণ করি বঙ্গবন্ধু
মুক্তিসেনা বীর বাঙালি
উড়িয়ে দিয়ে বিজয় পাখি
ডানা মেলে ঝিলিমিলি
যাদের জন্যে আজ আমরা
স্বাধীন দেশের স্বাধীন জাতি
সেই তিরিশ লক্ষ প্রাণের জন্য
জ্বালিয়ে রাখি বুকের বাতি
*
একটু আব্বা বলি
জেলের জীবন ছেড়ে যখন
খোকা এলো ঘরে
রেণু রেণু ডাক পড়ে যায়
সারা বাড়ি জুড়ে
হাসু তখন একটু বড়
কামাল তত নয় অত
বাবার কোলে ওঠে গিয়ে
আদর কাড়ে ইচ্ছে মত
আব্বা আব্বা বলে হাসু
দুই গালে যে দেয় চুমা
মুজিব তখন বলেন হেসে
আরে পাগলী ওরে থামা
কামাল তখন অনেক দ্বিধায়
হাতে নিয়ে ছোট্ট বই
হাচু আপা হাচু আপা
একটা কথা কই
একটি হাতের আঙ্গুল ধরে
বলো বলো কামাল মনি
গালটি টিপে আদর দিয়ে
কী বলবে বলো শুনি
ছোট্ট কামাল গুটি গুটি
ঠোঁটে মুখে আধো বুলি
তোমার আব্বুকে আমি
একটু আব্বু বলি
রেণু রেণু শোন শোন
মুজিব তখন বলে ওঠেন
কামাল কী যে-বলে দেখ
আর চোখের জলে ভাসেন
*
একটি আশার ভালোবাসা
একটি আকাশ
বইছে বাতাস
একটি ফুল
নীল তুল্তুল্
একটি ফল
সবুজ ফসল
একটি বিল
উড়ছে চিল
একটি নৌকো
ওই যে-সাঁকো
একটি ছেলে
মাঠে খেলে
একটি কাক
উড়ে যাক
একটি ময়ূর
সময় দুপুর
একটি খুকি
দেয় যে উঁকি
একটি পুকুর
জলের মুকুর
একটি চাদর
মায়ের আদর
একটি আশা
ভালোবাসা
শীর্ষ সংবাদ: