স্টাফ রিপোর্টার॥ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন , আমি গর্বের সাথে বলতে পারি আজকের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। সাধারণ মানুষের এই আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে যেমন উচুঁ নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, অন্যদিকে সদা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিচারকগণ মামলার প্রতিটি পর্যায়ে সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে এবং বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৯” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন , ডিসেম্বর বাঙালি জাতির মহান বিজয়ের মাস। বাঙালি জাতির জন্য চির স্মরণীয় মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সারা জীবনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল ঘরে তোলার মাস। এই মাস আমাদের জন্য যেমন বেদনার, তেমনী পরম আনন্দ এবং গৌরবের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের নির্যাতন স্বীকার এবং অগণিত ভাই-বোনের পঙ্গুত্ববরণের বিনিময়ে পাকিস্তানী শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে এ মাসেই আমরা হয়েছি স্বাধীন, পেয়েছি সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তাই আমার বক্তব্যের শুরুতেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, বাংলাদেশের মহান ¯’পতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা ও অসীম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের নৃসংস হত্যাকা-ে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৭ জন সদস্য সহ জেল হত্যাকান্ডে নিহত জাতীয় চার নেতাকে। যাঁরা মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য সেদিন বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, অকাতরে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তাঁদের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানা”িছ।
সেইসাথে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি সারা দেশ থেকে আগত বিজ্ঞ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দকে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন ,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম স্বপ্ন ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করা। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল। বঙ্গবন্ধুর শাসন আমল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন থেকে শুরু করে বহু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। দুঃখের বিষয় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তি এক নৃসংস হত্যাকা-ের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হিমালয় পর্বতের মতো দেয়াল তৈরি করে দেশে বিচারহীনতার সংষ্কৃতি চালু করে এবং আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের পথরুদ্ধ করে। কিš‘ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদর্শীতা, সাহসিকতা এবং বলতে গেলে কিছু অলৌকিক ক্ষমতায় এই দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে পিতার স্বপ্ন্ বাস্তবায়নের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছেন। তাঁর সাহসী ভূমিকার কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-, জাতীয় চার নেতা হত্যাকা- ও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধ সহ বড়বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার হয়েছে। দেশ থেকে বিচারহীনতার সংষ্কৃতি দূর হয়েছে। সে কারণেই বিজ্ঞ বিচারকগণ এখন স্বাধীনভাবে বিচারকাজ চালিয়ে যেতে পারছেন। গত দুই মাসে ঢাকার স্কুল ছাত্রী তিশা, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি ও সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলা, হোলি আর্টিজান হামলা মামলা, বাস চাপায় দিয়া-রাজীব নিহত হওয়ার মামলা সহ বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলার রায় হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি এসব মামলার রায়ের ব্যাপারে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ ছিলো না। বিজ্ঞ বিচারকরা স্বাধীনভাবে ও সাহসিকতার সঙ্গে তাঁদের রায় প্রদান করেছেন।
আমি মনে করি, তাঁদের এই সাহস ও স্বাধীনতা এমনিতেই হয়নি। এর পিছনে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গভীর আন্তরিকতা, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, নিরলস পরিশ্রম এবং জনকল্যাণমুখী চিন্তাধারা। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ২০০৭ সালের পহেলা নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথক ও স্বাধীন হলেও তা ছিল কাগজে-কলমে। এর বাস্তবায়ন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অধস্তন আদালতে নতুন পদ সৃষ্টি করে সেখানে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিগত ১০ বছরে ১০২৮ জন সহকারী জজ/ সমপর্যায়ের বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১৮ সালে আরো ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ¯’াপন করে সেগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ঢাকা ও চট্রগ্রামে ২টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ¯’াপন করা হয়েছে এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগীয় শহরে আরো ৫টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হচ্ছে । ঢাকায় ১টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার বিশ্বাস করে যে, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও আইনের শাসন পরষ্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে উন্নয়নের জোয়ার চলছে তা প্রবাহমান রাখতে হলে অবশ্যই আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।