ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

প্রতিবন্ধীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী। ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, যা সমাজের প্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘কানাকে কানা আর খোঁড়াকে খোঁড়া বল না- শৈশব থেকে আমরা এই শিক্ষা পেয়েছি। শিশুদের শৈশব থেকে এই শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা মানবিক হয় এবং যাতে তারা আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে চলতে পারে- এটিই সবচেয়ে বড় কথা।’ মনে রাখা আবশ্যক, অটিজম অথবা প্রতিবন্ধিতা কোন রোগ অথবা অসুস্থতা নয়। অটিজম অথবা প্রতিবন্ধিতায় যারা ভুগছেন তারা সমাজের মূলধারার সঙ্গে যাতে বসবাস করতে পারেন সে লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে সরকার। সরকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধীদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের প্রকৃত উন্নয়ন করতে হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিতেই হবে, যাতে তারা উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে না থাকে। সরকারের নানা উদ্যোগে বিষয়টি পরিষ্কার। বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সামাজিকভাবে অবহেলা, অবজ্ঞা ও বৈষম্যের শিকার। আমাদের দেশেও প্রতিবন্ধীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক নয়। সমাজে তাদের ডাকতে শোনা যায়- ল্যাংড়া, কানা, খোঁড়া, আন্ধা, পাগলা, আতুড়, বোবা ইত্যাদি নানান অবজ্ঞা সূচক নামে। প্রতিবন্ধিতাকে ভাবা হয় পিতা-মাতার কৃতকর্মের ফল, পূর্বপ্রজন্মের কৃতকর্মের ফল, কৃসংস্কার ইত্যাদি। ধর্মীয় অপব্যাখ্যাসহ নানাভাবে প্রতিবন্ধী পরিবারকে প্রতিনিয়ত হেয় করা হয়। চিকিৎসা শাস্ত্র মতে, মানব শিশুর অপুষ্টি, সুষম খাদ্যের অভাব, চিকিৎসাহীনতা, অপচিকিৎসা, গর্ভকালীন পরিচর্যার অভাব, জন্মগত ত্রুটি, দুর্ঘটনাসহ নানান কারণে মানুষ প্রতিবন্ধিতার শিকার হচ্ছে। এ জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কোনভাবেই দায়ী নয়। এ ব্যর্থতার দায় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা সকলের। প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। এক্ষেেেত্র আমরা অতীতে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখেছি বেসরকারী পর্যায়েও। সিলেট চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে সিলেটে একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। মেলায় তাৎক্ষণিকভাবে অর্ধশতাধিক প্রতিবন্ধীকে চাকরি দেয়া হয় এবং আরও শতাধিক প্রতিবন্ধীকে দেয়া হয় চাকরির প্রতিশ্রুতি। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণযোগ্য। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। প্রতিবন্ধীরা সমাজের অংশ হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা সমাজে অবহেলা ও উদাসীনতার শিকার। সব ধরনের অধিকার নিয়ে সমাজে বসবাস করার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মেধা বিকাশের পথটি মসৃণ করতে হবে। অবহেলা কিংবা উদাসীনতা প্রদর্শন না করে প্রতিবন্ধীদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের প্রয়াসও চালাতে হবে সমভাবেই। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বিস্তৃৃত করতে পারলে তারা কারও বোঝা হয়ে থাকবে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। মনে রাখা দরকার, তাদের অর্থনৈতিক কর্মসংস্থান হচ্ছে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পথে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রতিবন্ধীদের দিয়ে কিছুই হবে না- এই মনোভাব সমাজ থেকে দূর করতেই হবে যে কোন মূল্যে।
×