ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংশোধন করা হচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন

বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্টের অভাবে পাড়ায় পাড়ায় মনগড়া রিপোর্ট বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্টের অভাবে পাড়ায় পাড়ায় মনগড়া রিপোর্ট বাণিজ্য

নিখিল মানখিন ॥ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট নেই। ফলে রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই রোগ নির্ণয়ের সঠিক রিপোর্ট পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এ সেক্টরে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির সঙ্কট রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ শাখাকে আরও আধুনিকীকরণ ও কার্যকর করে তোলা দরকার। প্রতিটি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে দক্ষ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট প্রেরণের জন্য অনেক কনসালট্যান্ট পদ সৃষ্টি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ সোসাইটির সদস্য সংখ্যা মাত্র ১৮০। সাইনবোর্ড সর্বস্ব অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই, হাতুড়ে টেকনিশিয়ানে চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। তাদের মনগড়া রিপোর্ট নিরীহ মানুষদের হয়রানি হওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, একই রোগ পরীক্ষায় একেক প্রতিষ্ঠান থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। তাই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট সৃষ্টিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া দরকার। সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এএন নাসিমউদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, সঠিক রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার ওপর কোন রোগীর মানসম্মত চিকিৎসার বিষয়টি নির্ভর করে। রোগ নির্ণয়ের রিপোর্ট সঠিক না হলে চিকিৎসকের পক্ষেও সঠিক চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হয় না। তাই চিকিৎসা সেক্টরে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে প্যাথলজি ও ডাক্তারী পরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধন করছে সরকার। কোন প্রতিষ্ঠান তা না করলে একবছর কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা অর্ধদ- অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। এ আইন সংশোধন হলে রক্ত, মল-মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই, এনজিওগ্রাম, ইসিজি ও ইটিটি পরীক্ষার মূল্যতালিকা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ‘সহজে দৃশ্যমান স্থানে’ প্রদর্শন করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিরাপদ জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকার। রাজধানীসহ সারাদেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা তৈরির পাশাপাশি কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগ এ অভিযান পরিচালনা করছে। অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে জনসাধারণকেও সোচ্চার হতে হবে। এ সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। তিনি বলেন, দেশে দক্ষ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের সঙ্কট রয়েছে। এই সুযোগে তথাকথিত অনেক অদক্ষ ও ভুয়া টেকনিশিয়ান অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রোগ নির্ণয়ের কাজ করে থাকেন। বিএমএ সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান বলেন, এমনিতেই দেশের অনেক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। অবস্থায় রোগ নির্ণয়ের জায়গাটি ত্রুটিপূর্ণ হলে দক্ষ চিকিৎসকদের পক্ষেও প্রত্যাশিত মানের চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হবে না। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে দক্ষ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট তৈরিতে হাত দেয়া উচিত। আর তা হলে ভুল রিপোর্টের কারণে চিকিৎসাসেবা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালের প্যাথলজি ও ডাক্তারী পরীক্ষার মূল্যতালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধন করছে সরকার। কোন প্রতিষ্ঠান তা না করলে একবছর কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা অর্ধদ- অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। ২০০৯ সালের এ আইন সংশোধন হলে রক্ত, মল-মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই, এনজিওগ্রাম, ইসিজি ও ইটিটি পরীক্ষার মূল্যতালিকা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ‘সহজে দৃশ্যমান স্থানে’ প্রদর্শন করতে হবে। বর্তমানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে বিভিন্ন ‘সেবা’র মূল্যতালিকা প্রদর্শনের কথা বলা হলেও সেবাগুলো নির্দিষ্ট করা ছিল না। অভিযোগ রয়েছে, পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট না থাকার সুযোগ নিয়ে অলিগলিতে বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। সাইনবোর্ড দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে ফাঁদে পড়ছেন সহজ সরল অনেক মানুষ। রোগী মারার কারখানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব সেন্টার থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম বিভ্রান্তিতে পড়ে থাকেন। নানা সমালোচনার মধ্যেও সরকারী হাসপাতালের এক শ্রেণীর ডাক্তারের সহায়তায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যথেচ্ছ টেস্টবাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। লোকজন ডায়াগনস্টিক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বার বার অভিযোগ তুলেও প্রতিকার মিলছে না।
×