ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু বিপিএলের বর্ণিল উদ্বোধন আজ

প্রকাশিত: ১১:৫২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

বঙ্গবন্ধু বিপিএলের বর্ণিল উদ্বোধন আজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ প্রতিযোগিতার ৬ আসর আয়োজিত হয়েছে। শুধুমাত্র প্রথম দুই আসরে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকলেও পরবর্তী চার আসরে তা আর দেখা যায়নি। এবার ফিরে আসছে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কারণ এবারের সপ্তম আসরটি একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সার্বিক আয়োজনে, নেই কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি। জাতির পিতার স্মরণে সপ্তম এই আসরের নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু’ বিপিএল। যার শুরুটা আজ থেকেই হয়ে যাবে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই আসরের উদ্বোধন করবেন। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে এবং যারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন তাদের অনেকে শনিবার পৌঁছে গেছেন, বাকিরা আজ চলে আসবেন। তিনি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ঘোষণার আগে ও পরে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতেও থাকবে আয়োজন। সেজন্য পূর্ব গ্যালারির সামনে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল মাঠে বিশাল মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এই অনুষ্ঠান। তবে দর্শকদের প্রবেশাধিকার থাকবে ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। সন্ধ্যা ৬টায় আসার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিপিএলের মতো বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচের প্রতিযোগিতাটির সম্পূর্ণ নিজেদের তত্ত্বাবধানে করবে বিসিবি। অবশ্য অংশ নেয়া ৭ দলের মধ্যে পুরো মালিকানা বিসিবির শুধু দুটির। বাকি ৫ দলের মালিকানার জন্য স্পন্সর পেয়েছে বিসিবি। তাদের নেয়া এই চ্যালেঞ্জ কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে আছে নানা সংশয়। কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজি না থাকাতে খুব বেশি পারিশ্রমিক পাবেন না তারকারা। তাই খুব বড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা সেভাবে এবার থাকছেন না। সে কারণেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে দুর্দান্ত রূপ দিতে চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্সের প্রত্যাশায় দেশী-বিদেশী নামী শিল্পী, তারকা অভিনেতাদের সম্মিলন ঘটানো নিশ্চিত করা হয়েছে। শুরুতেই বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উন্মাদনা ছড়িয়ে দিতে চায় বিসিবি এর মাধ্যমে। গত কয়েকদিন ধরেই তাই এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার ও পোস্টারিং করা হয়েছে। এই আয়োজনে থাকবেন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় বলিউড তারকা সালমান খান, ক্যাটরিনা কাইফ এবং ভারতের তুমুল জনপ্রিয় তিন কণ্ঠশিল্পী সনু নিগম, অরিজিৎ সিং ও কৈলাস খের, বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা মাহফুজ আনাম জেমস ও পপ স¤্রাজ্ঞী মমতাজ। অবশ্য সাধারণ দর্শকদের জন্য মাঠে বসে সরাসরি এই অনুষ্ঠানটি দেখার সুযোগ কম। মাত্র ৫০০০ সাধারণ দর্শক সুযোগ পাবেন টিকেট কেটে তা উপভোগের। প্রধানমন্ত্রী থাকবেন অনুষ্ঠানে তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সীমিত করা হয়েছে দর্শকদের আগমন। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি ধারণক্ষমতার পূর্ব গ্যালারির সামনে মঞ্চ হওয়াতে অনেক দর্শকই মাঠে এসে তা উপভোগ করতে পারবেন না। তবে সাধারণ দর্শকদের কথা মাথায় রেখে এবং তাদের মাঠে বসে দেখার মতো একটি পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যবস্থা নিয়েছে বিসিবি। দেশের বিভিন্ন জনসমাগমের স্থলে বড় স্ক্রিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হবে। এর আগের দুটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ করা হয়েছিল প্রেস বক্সের নিচে মাঠের উত্তর পার্শ্বে। কিন্তু এবার ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট’স বক্সে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। তাই সরাসরি ভালভাবে দেখার সুবিধার্থে মঞ্চটা পূর্ব গ্যালারির সামনে করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট’স বক্সের সামনে বিশেষভাবে স্থাপিত একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বঙ্গবন্ধু বিপিএলের। শনিবার টাইটেল স্পন্সরশিপের ঘোষণার সময়ে বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ম্যাচগুলোও আকাশ ডিটিএইচ সেবার মাধ্যমে বড় স্ক্রিনে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর বিভিন্ন স্থানে দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবার বিশেষ এই বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর হয়েছে আকাশ ডিটিএইচ। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই বিসিবি বিশেষ এবারের বিপিএল কেমন আয়োজন করতে যাচ্ছে তার একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। উঠন্তি মুলা যেমন পত্তনেই চেনা যায়, তেমনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু বিপিএলেরও একটি ছায়া দেখা যাবে। যেহেতু জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের উপলক্ষ হিসেবে এই বিশেষ বিপিএল তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে তার ছোঁয়া। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ প্রামাণ্য চিত্রও থাকবে। দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের ছোঁয়ার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য চিত্র। লেজার শো, রঙ্গিন ডিসপ্লে তো থাকবেই। শেষে আতশবাজিতে বর্ণিল করা হবে মিরপুর স্টেডিয়ামকে। তার আগে বিপিএলে অংশ নিতে যাওয়া সাত দলকে নিয়েও থাকছে আয়োজন। নিজামউদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সব দলেরই ক্রিকেটার ও কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা উপস্থিত থাকবেন এটাই আশা করছি।’ মাঠের লড়াই শুরু হবে ১১ ডিসেম্বর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চোখ ধাঁধানো আয়োজন করতে পারলে সেই ম্যাচগুলোয় দর্শকদের আগ্রহ নিশ্চিতভাবেই অনেকখানি বেড়ে যাবে। বাংলাদেশে ক্রিকেটের প্রসার এবং জনপ্রিয়তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ১৯৯৭ সালে। সে বছর আইসিসি ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ দল। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথমবার মর্যাদার বিশ্বকাপে খেলতে নেমেই ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তানকে হারিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। পরের বছরই আইসিসি টেস্ট মর্যাদা দেয় বাংলাদেশ দলকে। এর মাধ্যমে দেশের সব ক্রীড়াকে ছাপিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যায় ক্রিকেট! উন্নতির পথ করে নিতে ক্রিকেট অবকাঠামোয় একে একে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনের ছোঁয়ায় ক্ষুদ্রতম ফরমেট টি২০ ক্রিকেটে ভাল করার চিন্তা থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বিপিএল টি২০ মাঠে গড়ায় ২০১২ সালে। শুধুমাত্র ২০১৪ সালে বিরতি দিয়ে একে একে ৬টি আসর আয়োজিত হয়েছে। প্রথম দুই আসরে বিপিএল বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকলেও পরবর্তী চার আসরে আর এমন কোন আয়োজন ছিল না। এবার বিসিবি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছে মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তির বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ার কারণে। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে এবার সপ্তম আসরে অনেক বড় বিদেশী তারকা ক্রিকেটারকেই এবার নানা কারণে পায়নি বিসিবি। কিন্তু তা পুষিয়ে দিতে এবং বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দর্শকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে শুরুতেই থাকছে এই বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী আয়োজন। মাঠের অভ্যন্তরে হওয়ার কারণে উইকেট ও আউটফিল্ডের ক্ষতি হওয়ারসমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়। সেজন্যই উইকেট বাঁচাতে বিশেষভাবে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। এরপরও কিছু ক্ষতি হয়ে গেলে তা পুষিয়ে নিতে মাঝে ২ দিন সময় থাকবে বিসিবির কাছে। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ক্রিকেটীয় লড়াই শুরুর অনেক আগেই হবে। প্রস্তুতি নিয়ে বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি খুব ভালভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পারফর্মারদের অনেকে ইতোমধ্যে চলে এসেছেন, বাকিরা কাল (রবিবার) চলে আসবেন। আজ রাত (শনিবার) থেকেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের রিহার্সেল শুরু হয়ে যাবে, আগামীকালও (রবিবার) তা চলবে। আশা করছি খুব ভাল একটা আয়োজন উপহার দিতে পারব আমরা।’
×