ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে ভূগর্ভস্থ পানি শূন্য হতে চলেছে

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

দিনাজপুরে ভূগর্ভস্থ পানি শূন্য হতে চলেছে

সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর ॥ ফসল উৎপাদনের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনাজপুর জেলা পরিবেশগত হুমকিসহ ভূকম্পের হুমকির মুখে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে না পারলে অচিরেই দিনাজপুরে ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত অভিজ্ঞজনরা অভিমত জানিয়েছেন। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুরের একজন কর্মকর্তা জানান, পৃথিবীর উপরিভাগের চাইতে কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ৭০গুণ বেশি। পৃথিবীর কেন্দ্রভাগে বেশ কয়েকটি ধাতব প্লেট রয়েছে, যা তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীল। কোন কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের কোন স্থানে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই ওই এলাকার কেন্দ্রবিন্দুতেও এর প্রভাব পড়ে। এ প্রভাবের কারণে কেন্দ্রবিন্দুর ওই সকল ধাতব প্লেটের প্রসারণ ঘটতে শুরু করে। কেন্দ্রবিন্দুর এ সকল ধাতবের প্লেটের প্রসারণজনিত কারণে যে কম্পন সৃষ্টি হয়, তা ভূগর্ভস্থ বালি মিশ্রিত পানির স্তরকে ধাক্কা দিয়ে থেমে যায়। কোন কারণে এই বালি মিশ্রিত পানির স্তর পানিশূন্য হয়ে পড়লে, ওই কম্পন পৃথিবীপৃষ্ঠকে স্পর্শ করবে। দিনাজপুর জেলায় যে হারে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার চলছে, এতে করে এখনই বেশ কয়েকটি বালি মিশ্রিত পানির স্তর থেকে পানি শুকিয়ে গেছে এবং অচিরেই ভূগর্ভস্থ আরও বেশ কিছু এ ধরনের পানির স্তর থেকে পানি শুকিয়ে যাবে। যার প্রভাবে কেন্দ্রের কম্পন সহজেই উপরিভাগে উঠে আসতে পারবে। এ কারণে এলাকায় ভূ-কম্পের সৃষ্টি হতে পারে বলে মত পোষণ করেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী। কৃষি বিশেষজ্ঞের মতে, দিনাজপুরে যে হারে বোরো চাষের জন্য পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে তা জেলার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে । সূত্রমতে, এ অঞ্চলে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদন করতে ৪২শ’ লিটার পানি ব্যবহার হয়ে থাকে, যা অন্য কোন ফসলের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ধান চাষের কৃষকের অধিক আগ্রহ হ্রাস করে পরিবেশবান্ধব ফসল উৎপাদনের দিকে কৃষককে ধাবিত করতে বিভিন্ন চেষ্টা চালানো হচ্ছে । দিনাজপুর জেলায় ফসল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুত সমিতির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় মোট ৭৯ হাজার ৪শ’ ৩০টি যন্ত্রচালিত নলকূপ সেচ কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ৭০টি অগভীর নলকূপ এবং ১ হাজার ৩শ’ ৬০টি গভীর নলকূপ। ৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ যুক্ত একটি অগভীর নলকূপ প্রতিঘণ্টায় ১৬ হাজার গ্যালন পানি উত্তোলন করে থাকে। এই হিসেবে দিনাজপুর জেলায় প্রতিদিন ঘণ্টায় গড়ে ১শ’ ২৪ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার গ্যালন পানি উত্তোলিত হচ্ছে। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে প্রায় ২ হাজার ৯শ’ ৯৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার গ্যালন পানি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে পানি উত্তোলিত হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে দিনাজপুরের সকল নদী, খাল এমনকি পুকুর জলাশয়গুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। হস্তচালিত নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। ধানের জমিতে পানির চাহিদা পূরণের জন্য ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর করে সেগুলো চালু রাখা হচ্ছে। এভাবে পানি উত্তোলিত হতে থাকলে অচিরেই দিনাজপুর ভূগর্ভস্থ পানির মওজুদ শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে যার প্রভাবে দিনাজপুরে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়াও অবকাঠামোগত পরিবর্তন ঘটতে পারে।
×