ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিচ্ছিন্ন চরের জীবন

পুতুল খেলার বয়সে বিয়ে, স্বামীর ঘরে এসে হলেন সাবালিকা !

প্রকাশিত: ১২:০৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

পুতুল খেলার বয়সে বিয়ে, স্বামীর ঘরে এসে হলেন সাবালিকা !

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী, ৭ ডিসেম্বর ॥ পুতুল খেলার বয়সে বিয়ের পর স্বামীর ঘরে এসে সাবালিকা হয়েছেন চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের উত্তর চর রায় সাহেবের আরিফা (১৬) ও সারমিন (১৮)। এর মধ্যে আরিফার বিয়ে হয়েছে ১২ বছর বয়সে আর সারমিনের বিয়ে হয়েছে ১৩ বছর বয়সে। দুই জনই এখন সন্তানের জননী। সরেজমিনে রায় সাহেব গুচ্ছগ্রাম-১ এ গিয়ে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। আলাপকালে তারা জানান, অপরিণত বয়সে বিয়ের কথা। আরিফা জানান, তার বাবার নাম মনসুর হাওলাদার। অভাবের সংসার ছিল তাদের। একই চরের খালেক মৃধার ছেলে বশার মৃধার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। বিয়ের দুই বছর পর অর্থাৎ ১৪ বছর বয়সে ছেলের মা হন । নাম আফরিন, বয়স ১ বছর। স্বামী নদীতে মাছ ধরেন। কোন রকম চলে তাদের দিন। পুতুল খেলার বয়সে বিয়ে পর, এখন স্বামীর সংসারে সন্তান নিয়ে খুব একটা ভাল নেই। শরীরের নানা রোগবালাই লেগেই আছে। কোন স্বাস্থ্যকর্মী তাদের চরে যাননা। স্বামীকে মুখ ফুটে অনেক রোগের কথা বলতে পারেন না। তাই সব কিছু নীরবে মেনে নেন। স্বপ্ন দেখেন তার সন্তান একদিন বড় হবে, লেখাপড়া করবে। কিন্তু তাদের আবাসস্থল থেকে স্কুলের দূরত্ব অনেক। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলো নৌকা। তাই সন্তানের স্কুলে পাঠানোর স্বপ্ন তার মাঝে মাঝে ধোঁয়াশে হয়ে যায়। ওই গুচ্ছ গ্রামে একটি স্কুল হলে আফরিনরা হয়তো পড়াশোনায় কিছু দূর আগাতে পারত। সারমিনের স্বামীর নাম রাকিব খান। তার স্বামীও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরেন। ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। ১৬ বছর বয়সে মা হন তিনি। সন্তানের নাম আফসান। বয়স দুই বছর। পূর্ব কালাইয়া গ্রামে তার বাবার বাড়ি। তার বাবা হানিফ হাওলাদার একজন অভাবী মানুষ। বিয়ের সময় সারমিন পূর্ব কালাইয়া হাসান সিদ্দিকী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ত। তিনিও স্বপ্ন দেখেন । তার সন্তান আফসান পড়ালেখা করে মানুষ হবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন তেঁতুলিয়া নদীর লোনা জলে বিলিয়ে যাবে কিনা সেই আশঙ্কা তার। তার আফসোস বিয়ের বয়স ৫ বছর হলেও এখন পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে শহরে যাওয়া হয়নি। চর রায় সাহেবে সারমিনরা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শহরে যাননা। শহরের লাল নীল বাতি তাদের চোখ ধাঁধায় না। সারমিনদের বসতির চারদিকে তেঁতুলিয়া নদী বেষ্টিত। তাই ঘর থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া হয়না। এই গুচ্ছ গ্রামে ৬০টি ঘরের মধ্যে ৪৫টি ঘরে বসতি রয়েছে। লোক সংখ্যা প্রায় ২শ’। তার মধ্যে অর্ধশত রয়েছে শিশু। তারা কেউ পড়ালেখা করেনা। ওই গুচ্ছ গ্রামের নারীরা স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারেননা। গুচ্ছ গ্রামটি প্রতিষ্ঠার পর কোন স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা পাননি তারা। বেশি অসুস্থ হলে তারা শহরে যান।
×