ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেঞ্চি কবুতর পালন করে স্বনির্ভর

প্রকাশিত: ১২:১৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

ফেঞ্চি কবুতর পালন করে স্বনির্ভর

তখন সামশেদ আলম ছোট। মায়ের সঙ্গে নানু বাড়ি বেড়াতে যেতেন। নানুদের বাসায় রং বেরঙের কবুতর পালন করত। ছোট্ট সামশেদ কবুতর পালনের খুব ইচ্ছে হতো। মা বাধা দিত। একবার ঈদের সালামির টাকা জমালেন। ভাইদের নিয়ে গেলেন পাড়ার এক কবুতর পালকের কাছে। ৪০ টাকা দিয়ে এক জোড়া কবুতরের বাচ্চা নিলেন। শুরুটা এক জোড়া দিয়ে হলেও এখন তার কবুতরের সংখ্যা এক শ’ জোড়া পেরিয়ে গেছে। প্রায় বিশ বছর আগে শুরু করা শখের কবুতর পালন এখন আর শখ নেই। পরিণত হয়েছে পেশায়। দুটি বাণিজ্যিক ফেঞ্চি কবুতরের খামারের মালিক। সব খরচ বাদে তার মাসিক আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়ায় তার কবুতর খামার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ কবুতর কিনতে আসে। তিনি স্টুডেন্টদের কাছে কবুতরের দাম কম রাখেন। অনলাইনেও কবুতর বিক্রি করেন। বাণিজ্যিকভাবে সফল একজন কবুতর খামারি। কবুতরপ্রেমীদের কাছে পরিচিত এক মুখ। কবুতর বিভিন্ন প্রজাতির হয়। সামশেদ পালন করেন ফেঞ্চি কবুতর। যা একদিকে সাইজে বড়। অন্যদিকে দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাহারি রং। লাইফস্টাইল ও ভিন্ন। চমকপ্রদ। উৎপাদন ক্ষমতা অনেক ভাল। খাঁচার মধ্যে এই কবুতর পালন করা যায়। ফেঞ্চি কবুতর পালন করার কারণ হিসাবে তিনি জানান, এ কবুতরগুলোর চাহিদা বেশি, এরা খুব ভাল ডিম বাচ্চা করে। ২ মাসের বাচ্চা বিক্রি করার উপযোগী হয়। অবশ্য অনেকে এক মাসের বাচ্চাও বিক্রি করে। তার কাছে আমেরিকান ফান্টেল, ইন্ডিয়ান ফান্টেল, লাহোর কালো হলুদ সিলবার বল্টুবার গ্রেবার লাল বল্টবারলেস, তুরিবাজ, ইন্ডিয়ান নোটন, বাশিরাজ কোকা, হেলনেট, জার্মান বিউটি হুমা, মাক্সি রেচার হুমা, সবজি হুমা, বারব হুমা, আমেরিকান বুম্বাইয়া, হলেন্ড জেকোবিন এল্মোন্ড কাইট হলুদ, আমেরিকান সো কিং, মিউটিসন ফ্রিলবেক, রয়েল ¯েœা টাম্বলার, ইন্ডিয়ান কাল্পরা কালদম, মসাল দম, মুক্কি লাল হলুদ কফি, উজবেক টাম্বার, ঝর্ণা শাটিন, বোকারা, পমারিয়ান পটার ইত্যাদি প্রজাতির কবুতর রয়েছে। সামশেদ আলমের কবুতরের খামারের নাম সামশেদ পিজিওন লফট। তিনি বাসার ছাদে খাঁচায় কবুতর পালন করেন। তিনি বলেন, ঢাকায় অসংখ্য ছাদ খালি পড়ে আছে। এসব ছাদে ঘর তুলে যে কেউ অনায়াসে কবুতর পালন করতে পারেন। তার মতে, বিদেশ ফেরত অনেকেই হতাশ হয়ে মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়ে। তারা দুই/এক জোড়া কবুতর দিয়ে শুরু করতে পারেন। সৎভাবে ইনকামের জন্য সবাই সামশেদকে বাহবা দেয় বলে তিনি জানান। তার মতে কবুতর বিনোদনের অন্যতম উৎস। খুব শান্ত, মায়াবী পাখি। মানুষের সহচার্য পছন্দ করে। ছেলেমেয়েদের গ্যাজেট আসক্তি কবুতর পালনে দূর হতে পারে। অবসর সময়ে বাজে নেশায় যুব সমাজ না জড়িয়ে কবুতর পালন করতে পারে। সামশেদ কবুতরের খামারের আয় দিয়ে একটি ছাগলের খামারও শুরু করেছেন বলে জানান। সামশেদ আলম জানান, বাণিজ্যিকভাবে এই কবুতর পালন করা সম্ভব। বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে স্বনির্ভর হতে পারে। তবে এজন্য একটু জেনে শুনে নেয়া ভাল। তিনি বলেন, ভাল কোয়ালিটির লাহোর বা ফান্টেল কবুতর বেশ লাভজনক কারণ এরা খুব ভাল বাচ্চা করে। সব সময় এই সব প্রজাতিরগুলোর চাহিদা থাকে। বর্তমানে এক জোডা এস্টেন্সিল লাহোর এর দাম ৫ লাখ টাকা। সামশেদ নিজেই কবুতরের অসুখ হলে চিকিৎসা করেন। তবে নতুন যখন ছিলেন তখন কবুতরের ঠা-া জ্বর হতো। বেশ ঝামেলায় পড়তেন তিনি। সামশেদের ভাই তাকে কবুতর পালনের কাজে সহায়তা করে। সামশেদের মতে, ফেঞ্চি কবুতর পালনে অমৃত সম্ভাবনা রয়েছে। তার কথার সত্যতা মিলে কবুতর রফতানির চিত্র থেকে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে জর্দানে ফ্রিলবেক রফতানি করা হয়েছে। সামশেদের কাছে জানা গেল, বাংলাদেশে অনেক কবুতর ব্রিডার আছেন, যারা নিদিষ্ট প্রজাতির কবুতরের ব্রিড নিয়ে কাজ করেন। তাদের কবুতরও রফতানি করার মত বলে জানা যায়। ভবিষ্যতে খামার আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে সামশেদের। তিনি জানান, এই সেক্টরে সরকারী সহযোগিতা পেলে কবুতর রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্্রা অর্জন করা সম্ভব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আমাদের দেশের কবুতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বলে তার কাছে জানা যায়।
×