ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রণোদনায় বাড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহ

প্রকাশিত: ১২:১৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রণোদনায় বাড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহ

রেমিটেন্স এখন পৃথিবীর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সার্বিকভাবে এখন রেমিটেন্স এবং এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ প্রায় সমান। উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থায়নের ক্ষেত্রে রেমিটেন্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হতে চলেছে। বর্তমানে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সুবাতাস বইছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। আর সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৯ শতাংশ। প্রতিবছর দুই ঈদের পর রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। আগস্টে কোরবানির ঈদের পর ধারণা করা হয়েছিল সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা কম রেমিটেন্স পাঠাবেন। কিন্তু এবার তেমন হয়নি। সেপ্টেম্বরে ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। যা মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। এর আগে গত মে মাসে রোজার ঈদকে সামনে রেখে ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল জুলাই মাসে; ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। উচ্চ আয়ের দেশের মানুষের গড় আয় যেখানে ৪৩ হাজার ডলার, সেখানে নিম্ন আয়ের দেশে তা মাত্র ৭৯৫ ডলার। এই বৈষম্যের কারণে নিম্ন আয়ের দেশের মানুষেরা উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি জমায় অধিকতর উপার্জনের লক্ষ্য নিয়ে। আবার উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমছে, অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বাড়ছে। ফলে উচ্চ আয়ের দেশগুলো বাধ্য হয়ে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে অভিবাসী শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নবম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো রেমিটেন্স। রেমিটেন্সের বিপরীতে সরকার বিশেষ প্রণোদনা দেয়া শুরু করেছে জুন মাস থেকে। এ সুবিধা ওয়েজ আর্নার্স রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বিদেশ থেকে পাঠানো প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক প্রচলিত বিধিবিধান পরিপালন করে উপকারভোগী অর্থাৎ বেনিফিশিয়ারির হিসাবে জমা অথবা উপকারভোগীকে দেয়ার সময় ওই অর্থের ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেবে। একজন প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর প্রতিবারে সর্বোচ্চ ১৫০০ মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থের জন্য প্রণোদনা হিসাবে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেবে। প্রণোদনা, জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৫১ কোটি ০৪ লাখ (৪.৫১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসেছিল ৩৮৬ কোটি ৮৯ লাখ (৩.৮৬ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবেই এই তিন মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। রেমিটেন্সের ওপর প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেমিটেন্সে এ ধরনের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ আগস্ট তা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না।তবে রেমিটেন্সের পরিমাণ এই অঙ্কের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে। আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো বিদেশে থাকা বাংলাদেশীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মতো। স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজীভাব এবং হুণ্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রেমিটেন্স বাড়ছে।
×