ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালের ট্রিপল মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

বরিশালের ট্রিপল মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জেলার বানারীপাড়া উপজেলার চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামি ১৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন র‌্যাব-৮ এর চৌকস সদস্যরা। আজ রবিবার দুপুরে র‌্যাব-৮ এর সদর দফতর থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ভোরে বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের বাড়িতে তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই লোমহর্ষক ঘটনার রহস্য উন্মোচনে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-৮ ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ও র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে জাকির হোসেন (৩৫) নামের এক গ্রাম্য কবিরাজকে আটক করে। জাকির হোসেন ওই বাড়ির নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি (জাকির) জিন হাজির ও ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে বিভিন্নরোগের চিকিৎসা করে বলে প্রথমে প্রচার করে। তিনি বাড়ির সবার বিশ্বস্ততা অর্জন করেন বলে জানান। এর সুযোগ নিয়ে বাড়িতে জিন আসবে বলে রাতে দরজা খোলা রাখার কথা বলেন তিনি। রাতে ওই বাড়িতে কৌশলে প্রবেশ করে একজন সহযোগিকে নিয়ে পর্যায়ক্রমে কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম, বোন জামাই শফিকুল আলম ও খালাতো ভাই ইউসুফ হোসেনকে হত্যা করে। র‌্যাব সূত্রে আরও জানা গেছে, জাকিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী র‌্যাব-৮ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপর আসামি জুয়েল হাওলাদারকে (৩৪) বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন পশ্চিম মতাশুর মুহুরীকান্দা এলাকা থেকে আটক করে। আকট দুইজনই প্রাথমিকভাবে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। জাকির হোসেন ও জুয়েল হাওলাদারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী র‌্যাব-৮ ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেনের ভাড়াবাড়ি নগরীর সাগরদীর মুন্সিবাড়ী থেকে হত্যাকান্ডের পর প্রবাসীর বাড়ি থেকে ছিনতাই করে আনা স্বর্ণালঙ্কার, তিনটি মোবাইল সেট ও একটি চাক্কু উদ্ধার করেছেন। পরে আটক আসামি ও আলামতগুলো বানারীপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, জাকির দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের বাড়িতে নতুন ভবন নির্মাণে শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি জ্বীনের ওঝাঁ বা বাদশা পরিচয় দিয়ে নিজের দক্ষতা প্রকাশ করে পরিবারের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক করে তোলে। যাতায়াতের সূত্র ধরে প্রবাসীর বাড়িতে বেশি মাত্রার স্বর্ণালঙ্কার থাকার ধারনায় সদ্য কাজে যোগদান করা অপর সহযোগি নির্মাণ শ্রমিক জুয়েলের সাথে সে (জাকির) চুরির পরিকল্পনা করে। ঘটনার রাতে জ্বীন নিয়ে আসার নামে বাড়ির দরজা খোলা রাখার পরামর্শ দেয়া হলেও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থেকে বেড়াতে শফিকুল আলম ও খালাতো ভাই ইউসুফের উপস্থিতি তাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে উভয় ঘাতক মিলে একে একে তিনজনকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, যুবক ইউসুফ প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্ঠা করলে আটককৃতরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে তাকে হত্যার পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুরে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয়। এ ঘটনা মরিয়ম বেগম ও শফিকুল আলম আঁচ করতে পারায় তাদেরকেও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক আতিকা ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে লোভের বশবর্তী হয়ে আটককৃতরা তিনটি হত্যাকান্ডের মতো ঘৃণ ঘটনা ঘটিয়েছে। অপরদিকে প্রবাসীর বাড়ি থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বানারীপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) জাফর আহম্মদ জানান, নিহত মরিয়ম বেগমের পুত্র সুলতান মাহমুদ বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তিনি আরও জানান, ওই মামলায় কোনো নামধারী আসামি করা হয়নি, তবে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করলেও নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। পাশাপাশি এরইমধ্যে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পূর্ব রায়পাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের পুত্র গ্রাম্য কবিরাজ জাকির হোসেন ও তার সহযোগি জুয়েলকে আটক ও কিছু মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। অপরদিকে তিনটি লাশের সুরতহাল শেষে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শনিবারই সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে স্বজনরা দেশের বাহিরে থাকায় ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহগুলো মর্গের ফ্রিজে রাখা হয়েছে। স্বজনরা দেশে ফিরে মরদেহগুলো গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করবেন।
×