ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ারবাজারে সূচক তিন বছরে সর্বনিম্ন

প্রকাশিত: ০৭:১০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

শেয়ারবাজারে সূচক  তিন বছরে সর্বনিম্ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ব্যাপক পতনে শেষ হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। এদিন সূচকের সঙ্গে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামগ্রিক অর্থনীতির নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নেতিবাচক সংবাদ এবং ব্যাংকের সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে। এছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সর্বশেষ প্রান্তিকের ঘোষণাও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থার সংকট কাজ করছে। জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৯৬ পয়েন্টে। যা ৩ বছর ১ মাস ৭ দিন বা ৭৫৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর রবিবারের চেয়ে নিম্নে অবস্থান করছিল ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচকটি। ওই দিন ডিএসইএক্স অবস্থান করছিল ৪ হাজার ৫৯২ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০৪১ ও ১৫৮৩ পয়েন্টে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৪৯ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ৮৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৩২ কোটি ৪১ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৩টির বা ১৫ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৭৩টির বা ৭৭ শতাংশের এবং ২৭টি বা ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সিনোবাংলার। এদিন কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকার এবং ৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে ন্যাশনাল টিউব। ডিএসইর সার্বিক লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে : ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, এসকে ট্রিমস, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মা, জেনেক্স ইনফোসিস এবং ওয়াটা কেমিক্যাল। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২২০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৮৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৩৯টির, কমেছে ১৮৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির দর। সিএসইতে ১৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার এখনও বেশি। মানুষ কিন্তু ব্যাংকে টাকা রাখছে; পুঁজিবাজারে আনছে না। সে কারণে পুঁজিবাজারে নগদ টাকার অভাব দেখা দিয়েছে। অর্থনীতির এখন খারাপ অবস্থায়। পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। তারল্য সংকট কাটছে না। রিজভী বলেন, তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি কম লভ্যাংশ দিয়েছে, দুর্বল মুনাফা দেখিয়েছে। সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমছে। তার নেতিবাচক প্রভাবও বাজারে পড়ছে। অর্থনীতির প্রভাব ছাড়াও পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট আছে বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাব আছে। সেই কারণে বাজারের থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা চলে যাচ্ছে। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো সঠিক নিয়মে তাদের হিসাব দেখাচ্ছে না। কোম্পানিগুলোর ৩০ শতাংশ এবং পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারনের নিয়ম পালন করানো যায়নি। আইসিবি ঠিকমত কাজ করছে না। বার বার বলেও ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনা যাচ্ছে না। সরকারি কোম্পানি বাজারে আসছে না। এভাবে একটা ভালো পুঁজিবাজার আমরা আশা করেতে পারি না। তবে আশা ছাড়ছেন না জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, আমি আশা করি সামনের দিনগুলোতে পুঁজিবাজার ভাল হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ভাল কাজ করছে; নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কাজ করছে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ নিজেদের জায়গা থেকে কাজ করছে। সব ঠিক থাকলে জানুয়ারি থেকে পুঁজিবাজার ভালো হতে পারে।
×