ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে চীনপন্থী বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

 হংকংয়ে চীনপন্থী বিক্ষোভ

এশীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হংকংয়ে রবিবার চীন বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। চীনের এই আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে চলা বিক্ষোভে সেখানকার অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। বিক্ষোভের প্রতি সেখানকার সাধারণ মানুষের সমর্থন অব্যাহত থাকার বিষয়টিকে এসিড টেস্ট হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এদিকে এই বিক্ষোভের আগের দিন শনিবার চীনপন্থীরাও রাস্তায় নামে। তারা চলমান বিক্ষোভকে রাষ্ট্রবিরোধী আখ্যা দিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে স্লোগান দেয়। খবর এপি ও স্ট্রেইট টাইমসের। হংকংয়ে বেজিং বিরোধী বিক্ষোভ সমর্থক সেখানকার দ্য সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্ট জানিয়েছে, রবিবারের চীন বিরোধী বিক্ষোভে তারা অভাবনীয় সাড়া পেয়েছে। সংগঠনটি চীন বিরোধী এই বিক্ষোভকে মানবাধিকার রক্ষার বিক্ষোভ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। রবিবার দুপুর তিনটা থেকেই বিক্ষোভকারীরা হংকংয়ের ভিক্টোরিয়া পার্কে জড়ো হতে থাকে। খবর দ্য স্ট্রেইট টাইমস ও এপির। এদিকে চীনপন্থীরা ড্রাম বাজিয়ে, ‘গায়ে চায়না আই লাভ ইউ’ লেখা টি-শার্ট পরে রাস্তায় নামে। অনেকে তাদের মুখে হৃদয় আকৃতির চীনা পতাকাকে সেঁটে রাস্তায় নামে। শত শত বিক্ষোভকারী চীনা পতাকা উঁচিয়ে ধরে স্লোগান দেয়। বিক্ষোভকারীরা হংকংয়ে চলা চীন বিরোধী বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে একে ষড়যন্ত্র আখ্যা দেয়। হংকং পুলিশ চীনপন্থী বিক্ষোভকারীদের প্রশংসা করে তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। চীনপন্থী বিক্ষোভকারীরা চীন বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ‘দাঙ্গাবাজ’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা দেশকে সুরক্ষার বদলে হংকংয়ের অর্থনীতি নষ্ট করছে। হংকংবাসীর স্বাধীনতা ভুলুণ্ঠিত করছে। তারা সহিংসতা ছড়াচ্ছে যা কোন সমাজের জন্য সুখকর নয়। চীনের পক্ষের বিক্ষোভকারীরা চীন বিরোধীদের তেলাপোকা বলে স্লোগান দেয়। এ সময় বেজিং বিরোধী বিক্ষোভে আহতদের ছবি প্রদর্শন করে। এক চীনপন্থী বলেন, বিরোধীরা হংকংয়ের সব কিছুকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তিনি বলেন, আমি এখন ঘরের বাইরে বেরুতে ভয় পাই। চীন বিরোধীদের অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে তিনি বলেন, ওদের (চীন বিরোধী) স্বাধীনতা আছে, কিন্তু আমাদের নেই। টাটা টিএসজি তার দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে শনিবারের বিক্ষোভে যোগ দেন। তবে বিক্ষোভ শেষ হওয়ার পরপরই চীনপন্থীরা তাদের হাতে থাকা চীনের প্রশংসা করে লেখা, প্ল্যাকার্ড ও পতাকা রেখে নিরাপদে চলে যায়। এ সময় বিক্ষোভস্থলে চীনা পতাকার স্তূপ জমে। চীন বিরোধীরা রবিবারের বিক্ষোভকে মানবাধিকার দিবস আখ্যা দেয়। এরপর হংকংয়ের চীনপন্থ’ী প্রশাসন জানায়, এখানকার জনগণ প্রশ্নাতীত স্বাধীনতা ভোগ করছে। এছাড়া তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভের ক্ষেত্রে কোন ধরনের বিধিনিষেধ নেই। গত পাঁচ বছরে ৪৪ হাজার গণ জমায়েত ও ৬ হাজার মিছিল হয়েছে। হংকং পুলিশ শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, হিসাব করলে দেখা যায় দৈনিক ২৭টি করে এই ধরনের অনুষ্ঠান হয়েছে। হংকংয়ের নয়া পুলিশ প্রধান ক্রিস ট্যাং শনিবার বেজিংয়ে বলেন, পুলিশ অহিংস আন্দোলনে অত্যন্ত মানবিক আচরণ করে। তবে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে চলা বিক্ষোভে সেখানকার অর্থনীতি একেবারে খাদের কিনারে এসে ঠেকেছে বলে জানান হংকংয়ের বাণিজ্য ও অর্থনীতি উন্নয়ন মন্ত্রী এ্যাডওয়ার্ড ইয়া। তিনি বলেন, হংকংয়ের এই ভঙ্গুর অর্থনীতি ঠিক করতে আগামী বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। হংকংয়ের অর্থমন্ত্রী পল চ্যান বলেন, বিক্ষোভের মাশুল আমাদের গুনতে হবে। আগামী বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য হংকংয়ের সাধারণ জনতা ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি। চলমান আন্দোলনে হংকংয়ের সাধারণ মানুষকে এখন টিয়ারগ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব সইতে হচ্ছে। ৪২৮ বর্র্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলটিতে ৬ মাস ধরে চলছে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন। হংকং বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ছোট্ট আয়তনের হংকংয়ে প্রায় ৭৪ লাখ লোকের বাস। সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে হংকংয়ের বিক্ষোভ দমাতে চীনপন্থী প্রশাসন ১০ হাজার রাউন্ডের বেশি টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে।
×