ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতামালা’ ১৪তম পর্ব অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

‘বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতামালা’  ১৪তম পর্ব অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতামালার ১৪তম পর্ব রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ আয়োজনের ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল ১১টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে স্মারক বক্তৃতাপর্বে এবারের বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. পবিত্র সরকার এবং নাট্যসমালোচক ও সংস্কৃতিবিদ অংশুমান ভৌমিক। অনুষ্ঠানে বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন। এ সময় দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সচিব বদরুল আনম ভূইয়াসহ অনেক সুধীজন। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. পবিত্র সরকার বক্তব্যে উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যেভাবে সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছিল-চোখে না দেখেও যে নেতা হিসেবে বুকে ঠাঁই দেয়া যায়, যার ডাকে সাড়া দেয়া যায় সেই নেতাই হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে আমরা ছোটখাটো কয়েকজন মিলে কিছু কাজ করেছিলাম। আমি তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। তখন ঐ বিশাল মানুষটির ছায়া আমাদের প্রেরণা দিয়েছে। ১৯৬৯ সালে ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়ে আমি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাই। পড়াশোনার পাশাপাশি অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে যাই পূর্ব বাংলার পত্রপত্রিকা ও বইপত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বাংলা বাইয়ের সংগ্রহ ছিল এমন যে অন্য কোথাও ছিল কিনা সন্দেহ। দুই বাংলার বই ছিল লাইব্রেরিতে এবং বাংলা ও ইংরেজী পত্রিকা। সেগুলো পুরোনো হলে তারা একটি আলমারিতে সংরক্ষণ করতো। সেখান থেকেই সব খবর জানতে পারতাম। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। ১৯৫২-১৯৫৪ সালের নির্বাচন, আইয়ুব খান, রাশা, রবীন্দ্র শতবার্ষিকী তা থেকে ১৯৬৬ ছয়দফা এই খবরগুলো আমরা রাখছি। কিন্তু বয়স কম ছিল বলে আমরা তখন বুঝতে পারি নাই এই খবরগুলো কোথায় গিয়ে পৌঁছবে। পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের কাছে যখন খবর পৌঁছল বাংলায় স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ছয়দফা থেকেই আমাদের অনুমান করা উচিত ছিল। ১৯৬৯ এ একটি বিষয় আমি লক্ষ্য করি যে, ইয়াহিয়া খান ৫টি বই নিষিদ্ধ করেন। অনুষ্ঠানে ‘একাত্তরের কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর ডাক’ শিরোনামে- বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাট্য সমালোচক ও সংস্কৃতিবিদ অংশুমান ভৌমিক। এ সময় তিনি বলেন ডাকে’র অনেক মানে। ডাকের দৌলতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের খবর উড়ে এসেছে কলকাতায়। মণীন্দ্র রায়ের চিঠি বই হয়ে বেরিয়েছে। বেরিয়েছে জাহানারা ইমামের না-পাঠানো চিঠি। কত একাত্তরের চিঠি এখনও অগ্রন্থিত। তেমনি আর এক ডাক হলো আহ্বান। তেমনি এক ডাক বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো,বাংলাদেশ স্বাধীন করো। এই ডাক শুনতে শুনতে ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু পূর্ব বাংলায় নয়, পশ্চিম বাংলাতেও এই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন সংস্কৃতিকর্মীরা। যতীন সরকার যথার্থই লিখেছিলেন-পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল আবেগাপ্লুত সহমর্মিতা। সে সহমর্মিতার মূল উৎস ছিল বাঙালিত্ব। বাঙালিদের একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হবে, বাংলা ভাষায় যারা কথা বলে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, সব কাজকর্ম হবে বাংলায়। আবহমান বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহক সেই রাষ্ট্রটি, এরকম একটি সম্ভাবনা সকল বাঙালির বুকে শিহরণ জাগাতো। সহায়তার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বেশকয়েকটি সংগঠন তৈরী হয়েছিল। ২৭ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের অধিবেশনে বাংলাদেশের জন্য গঠনমূলক উদ্যোগ নেবার সিদ্ধান্ত হয়। দেখাদেখি ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও নাগরিক উদ্যোগ শুরু হয়। বদরুদ্দীন উমর সম্পাদিত পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (এম-এল) এর মুখপত্র গণশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগ ছিল অনীকের। বলাই বাহুল্য যে, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বকে তারা নিপাতনে সিদ্ধ বলে মেনে নেননি।
×