ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সালমাদের স্বর্ণপদক

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

 শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সালমাদের স্বর্ণপদক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সাউথ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) প্রথমবার মেয়েদের ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবার। স্বর্ণপদক জয়ের স্বপ্ন নিয়েই নেপালে গিয়েছিল বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। সেই ঐতিহাসিক স্বপ্ন সফল হয়েছে। রবিবার পোখারায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ের পর ২ রানে শ্রীলঙ্কা মহিলা ক্রিকেট দলকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথম ব্যাট করে অবশ্য ব্যাটারদের চরম ব্যর্থতায় নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ৯১ রান তুলতে পেরেছিল সালমা খাতুনের দল। পরে বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে লঙ্কান মেয়েদের নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ৮৯ রানেই আটকে দেয় বাংলাদেশ। ফলে এসএ গেমসে প্রথমবার মেয়েদের ক্রিকেট ইভেন্টেই স্বর্ণ জিতলেন সালমারা। প্রাথমিক পর্বে নেপাল ও মালদ্বীপ মহিলা ক্রিকেট দলকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। লঙ্কান মেয়েদেরও অনায়াসে হারিয়ে দেয় ৭ উইকেটে। তবে ফাইনাল মানেই অন্যরকম লড়াই, চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বর্ণপদক জেতার চাপ। সেই ম্যাচে আবার লঙ্কান মেয়েদের মুখোমুখি হয় সালমার দল। টস জিতে আগে বাংলাদেশের মেয়েদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় শ্রীলঙ্কা। ওপেনার মুরশিদা খাতুন বেশ দাপটের সঙ্গেই ব্যাট চালাতে থাকেন। তবে ইনিংসে চতুর্থ ওভারে থারিকা সিউবান্দির শিকার হন তিনি। ১৫ বলে ৩ চারে ১৪ রান করেছিলেন মুরশিদা। তার সঙ্গী আয়েশা রহমান শুকতারা শুরু থেকেই অনেকখানি নিস্পৃহ ছিলেন। তবে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৩৬ রান তুলে বেশ ভাল শুরুরই ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু ইনিংসের সপ্তম ওভারেই ঘটে চরম বিপর্যয়। প্রথম বলেই শুকতারা সাজঘরে ফেরেন ১৪ বল খেলে মাত্র ২ রান করে। উমেশা থিমাশীনির সেটাই প্রথম আঘাত। এরপর এই ডানহাতি অফস্পিনারই বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেন। ওই ওভারে আরও তিনটি শিকার করেন তিনি। দ্বিতীয় বলে ১৫ রান করা সানজিদা ইসলাম, চতুর্থ বলে ফারজানা হক পিঙ্কি শূন্য ও ষষ্ঠ বলে রিতু মনি শূন্য রানে বিদায় নেন। মেডেনসহ ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে চরম বিপর্যয়ে ফেলেন থিমাশীনি। অধিনায়ক সালমাও বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে ভাল ইনিংস খেলতে পারেননি, সাজঘরে ফিরে গেছেন মাত্র ৩ রান তুলেই। পরে ফাহিমা খাতুনের দৃঢ়চেতা ব্যাটিংয়ে করা ২১ বলে ১ চারে করা ১৫ এবং এককভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়া নিগার সুলতানা জ্যোতির ৩৮ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় করা অপরাজিত ২৯ রানে বড় ধরনের লজ্জা এড়িয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ৮ উইকেটে মাত্র ৯১ রান ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছে। থিমাশীনি ৪ ওভারে দুটি মেডেনসহ ৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। একেবারেই ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়েও শুরুটা দুর্দান্ত করেছে বাংলাদেশের বোলাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন সালমা, পঞ্চম ওভারে নাহিদা আকতার ও ষষ্ঠ ওভারে খাদিজাতুল কুবরা। ফলে দলীয় ১৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে লঙ্কান মেয়েরা। কিন্তু অধিনায়ক হর্শিতা মাধবী একাই বাংলাদেশী বোলারদের চাপে ফেলেন। মাঝে কাভিশা দিলহারি রানআউটে (৪) সাজঘরে ফেরার পরও পথ হারায়নি লঙ্কানরা। পঞ্চম উইকেটে হর্শিতা ও লিহিনি আপসারা ২৩ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন আরও। তবে হর্শিতা ৩৩ বলে ৪ চারে ৩২ রান করার পর জাহানারা আলমের শিকার হলে পুনরায় জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু আপসারা ২৮ বলে ২ চারে ২৫ রান করে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউটের খপ্পরে পড়েন। এরপরও শেষ ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রানের প্রয়োজন ছিল লঙ্কান মেয়েদের, হাতে ছিল ৫ উইকেট। কিন্তু সে লক্ষ্য তারা ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশী বোলারদের দারুণ বোলিং এবং লঙ্কান ব্যাটারদের রান আউটে আত্মাহুতি দেয়াতে। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৮৯ রানে থামে তারা। চার ব্যাটার হন রানআউট। নাহিদা ২ উইকেট নেন। ২ রানের জয়ে ঐতিহাসিক সাফল্য পায় বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। ২০১০ সালে প্রথম ও সর্বশেষবার যে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা এসএ গেমসে হয়েছিল তাতে বাংলাদেশের পুরুষ দল স্বর্ণ পদক জিতেছিল। এবার মেয়েরাও প্রথমবার সুযোগ নিয়ে স্বর্ণালী গৌরব ছিনিয়ে আনল দেশের জন্য। স্কোর ॥ বাংলাদেশ মহিলা দলের ইনিংস- ৯১/৮; ২০ ওভার (নিগার ২৯*, সানজিদা ১৫, ফাহিমা ১৫, মুরশিদা ১৪; থিমাশীনি ৪/৮, রানাথুঙ্গা ১/৬)। শ্রীলঙ্কা মহিলা দল ইনিংস- ৮৯/৯; ২০ ওভার (হর্শিতা ৩২, আপসারা ২৫, সন্দামীনি ১০; নাহিদা ২/৯, সালমা ১/১২)। ফল ॥ বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল ২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাহিদা আকতার (বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল)।
×