ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলে লজ্জার দিন, ৪০ হাজার ডলার পুরস্কারের ঘোষণাতেও কাজ হলো না, নেপাল ১-০ বাংলাদেশ, অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া পেলেন লাল কার্ড

নেপালের কাছে হেরে স্বর্ণপদকের স্বপ্ন ধূলিসাত

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

নেপালের কাছে হেরে স্বর্ণপদকের স্বপ্ন ধূলিসাত

স্পোর্টস রিপোর্টার, নেপাল থেকে ॥ জনপ্রিয় ব্যান্ড দল মাইলসের একটি সাড়া জাগানো গানের কলি হলো, ‘কত স্বপ্ন ছিল দু’ চোখে, কত আশা ছিল এই বুকে। কত প্রেম, কত কথা, কত হাসি-গান, সে হাসি নেইতো আজ, হয়ে গেছে ম্লান। এক ঝড় এসে ভেঙ্গে দিয়ে গেলা, তাই জীবনটা এলোমেলো।’ ... রবিবারের সন্ধ্যায় দশরথের রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে খেলা শেষ হওয়ার পর এই গানটিই মনে পড়ছিল বার বার। মনে পড়ার কারণ অবশ্যই আছে। কেননা একটু আগেই যে ফুটবলের ফাইনালে ওঠার স্বপ্নটা দুমড়ে-মুচড়ে গেল বাংলাদেশের! অলিখিত সেমিফাইনালে তারা হেরে গেল স্ব^াগতিক নেপালের কাছে, ১-০ গোলে। ২০ বছর পর একই ভেন্যুতে ফাইনালে ওঠার পুনরাবৃত্তি করতে পারল না লাল-সবুজ বাহিনী। ১৯৯৯ সালে এই নেপালকেই ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়ে এসএ গেমসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণ জিতেছিলেন আলফাজরা। রবিবার ফাইনাল শুরু কয়েকঘণ্টা আগে বাংলাদেশ দলকে একটি বার্তা পৌঁছে দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। জানানো হয়, ‘নেপালকে হারালেই ৪০ হাজার ইউএস ডলার দেয়া হবে পুরো দলকে’। কোন সন্দেহ নেই, ফুটবলারদের উদ্দীপ্ত করতেই এমন ঘোষণা। কিন্তু তাতে কোন সুফলই আসেনি! ড্র করা তো দূরে থাক, হেরেই বসে জামালরা। অথচ জিতলে ২০১০ সালের পর আবারও তারা চলে যেত ফাইনালে। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে খেলে হিমালয়ের দেশটি। ভরা গ্যালারিতে জামালরা পারেননি নিজেদের মেলে ধরতে। এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশের সামনে সমীকরণ ছিল ফাইনালে উঠতে হলে অবশ্যই জিততে হবে। আর নেপালের ফাইনালে যেতে ড্র হলেই চলবে। পরিপূর্ণ দর্শক-সমর্থন নিয়েই বাংলাদেশেকে দাপটের সঙ্গে খেলে হারায় তারা। অবশ্য ম্যাচে রেফারিং নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না বাংলাদেশ দল। গোল হজমের পর খেলার সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেজাজ হারাতে থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল। রেফারির সঙ্গে তর্ক করে একবার হলুদ কার্ডও দেখেন। ম্যাচের যোগ করা সময়ে তার হাতের ধাক্কায় প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় মাটিতে পড়ে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দু’দলের খেলোয়াড়রা তর্কে জড়ান। রেফারি জামালকে দ্বিতীয় কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। লাল কার্ড দেখে জামাল বের হওয়ার একটু পরই রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ফাইনালে যাওয়ার আনন্দে ফেটে পড়ে নেপাল দল। এই আসরে ভারত না থাকায় সবাই বাংলাদেশকেই চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। অথচ তারা ফাইনালেই উঠতে পারেনি! ফাইনালে উঠেছে ভুটান এবং নেপাল, যারা মুখোমুখি হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। ৪ খেলায় নেপাল ও ভুটানের পয়েন্ট যথাক্রমে ১০ ও ৯। এ আসরে লীগভিত্তিক খেলার শীর্ষ দুই দল ফাইনালে ওঠে। ভুটান আগেই ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে ফেললেও নেপালের জন্য রবিবারের শেষ লীগ ম্যাচটি ছিল অগ্নিপরীক্ষা। আর সেই পরীক্ষায় পাস করেছে তারা অনেক ঘাম ঝরিয়ে। ম্যাচের ১১ মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। কাউন্টার এ্যাটাকে দ্রুত গতিতে বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ফুকে পড়া নেপাল অধিনায়ক সুজল শ্রেষ্ঠার ছোট পাস পান সুনীল বালকে। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোকে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠান তিনি (১-০)। পাঁচ মিনিট পরই সমতায় ফেরার সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। সতীথেরও কাছ থেকে বল পেয়ে রবিউল হাসান যে শট নেন, তা পোস্টেও বাইরে দিয়ে চলে যায়। গোটা আসরে বাংলাদেশের ছন্নছাড়া খেলা দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এই দলটিই গত এক বছরে অসাধারণ খেলেছে। তারাই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কাতারকে কাঁপিয়ে দেয়ার পর ভারতকে তাদেরই মাটিতে রুখে দিয়েছিল। এসএ গেমসের এই অ-২৩ দলে আছেন জাতীয় দলের ১৬ ফুটবলার। তারপরও লজ্জার এই ব্যর্থতার দায়ভার কে নেবেন? কাজী মোঃ সালাউদ্দিন কিভাবে ও কোন মুখে ২০২২ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে খেলতে দেখার স্বপ্ন দেখেন, সেটা নিয়ে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে তীব্র সমালোচনার ঝড় শুরু হয়ে যাওয়ার কথা।
×