ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাদের

বিএনপির মরাগাঙে আর জোয়ার আসবে না

প্রকাশিত: ১০:২২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

  বিএনপির মরাগাঙে আর জোয়ার আসবে না

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, বিএনপি এখন মরাগাঙে পরিণত হয়েছে। ¯্রােতহীন এই গাঙে আর কখনও জোয়ার আসবে না। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদার জিয়ার দুই বছরের কারাভোগের মধ্যে দুই মিনিটের জন্যও বিএনপির নেতারা আন্দোলন করতে পারেনি। তারা শুধু দলীয় আবাসিক অফিসে প্রেস কনফারেন্স করছে। জনগণ এখন তাদের আন্দোলন/সংগ্রাম প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই বলা যায়, বিএনপির নেতৃত্ব মরাগাঙে আর কোনদিন জোয়ার আসবে না। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি এখন নালিশী পার্টিতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশে নালিশ করে বেড়াচ্ছে। কেননা তাদের এখন নেতৃত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিএনপির পরিণতি মুসলীগ লীগের মতো হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। তাদের নেতিবাচক রাজনীতির কারণে এদের পরিণতি হবে মুসলিম লীগের মতো। আওয়ামী লীগে বসন্তের কোকিল দরকার নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সুবিধাবাদী, খারাপ লোকের আমাদের দরকার নেই। এরা দলে ঢুকে উইপোকার মতো সব খেয়ে ফেলে। রবিবার দুপুরে বরিশাল মহানগরীর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকার মানেই উন্নয়নবান্ধব সরকার। শেখ হাসিনা আজকে শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বে প্রশংসিত, সমাদৃত একজন বিশ্ব নেত্রী হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন। আজকে বিশ্বের সেরা দুজন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একজন হচ্ছেন শেখ হাসিনা, আজকের বিশ্বের সৎ তিনজন প্রধানমন্ত্রীর একজন হচ্ছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের গত ৪৪ বছরের সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই, শেখ হাসিনা আছেন বলে আজকের বাংলাদেশ জিডিপিতে এশিয়ার সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই আজকে ঘরে ঘরে বিদ্যুত। আর বেশিদিন নয় যেদিন বরিশালের মানুষ পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করবে। বিশ্বব্যাংক যখন সরে গিয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর বীর কন্যা তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন -কেউ না করলে আমরা আমাদের নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করব। আজ পদ্মা সেতু হচ্ছে, ফ্লাইওভার হচ্ছে, মেট্রোরেল হচ্ছে, ফোরলেন হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, বরিশাল একটি ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টার। এখানে অবশ্যই ফোরলেন যুক্ত হবে। বরিশাল থেকে ফরিদপুর এডিবির অর্থায়নে আমরা ফোরলেন করব। বরিশাল- ভোলা সেতু নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ আমরা শেষ করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন- বরিশালের রাস্তাঘাটসহ সড়ক ও সেতুর কোন অভাব বা ঘাটতি যেন না থাকে। শেখ হাসিনা আছে আপনারা সব পাবেন। কি দিয়েছে বিএনপি। দেখান কেউ, আমি চ্যালেঞ্জ করছি এই বরিশালে বিএনপির এমন কোন কাজ আছে যেটা দৃশ্যমান। যে কাজ দেখিয়ে মানুষকে বলতে পারে আমাদের পক্ষে রায় দাও। একটা রাস্তা, একটা ব্রিজ কিছুই করেনি, কোথাও কোন উন্নয়ন নেই। বিএনপির আছে সন্ত্রাস, দিয়েছে দুর্নীতি, লুটপাট, হাওয়া ভবন। হাওয়া ভবন মানে খাওয়া ভবন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোন হাওয়া ভবন নেই। বিএনপির সময়ে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু এখন বিএনপি যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন ভূতের মুখে রাম রাম ধ্বনির মতো শোনায়। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতিবাচক রাজনীতি করতে করতে আজকে জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনেও ব্যর্থ এখন বিএনপি আন্দোলনের দল নয়, নির্বাচনেরও দল নয়, তাদের অপর নাম নালিশী দল। নয়াপল্টনে আবাসিক এক প্রতিনিধি আছে, সেখানে বসে বসে প্রেস ব্রিফিং করে, গলাবাজি করে। তারা আন্দোলন ডাকে, লোকে সারা দেয় না। বিএনপির আন্দোলনের মরাগাঙে আর জোয়ার আসে না। নেতা এখানেও (বরিশালে) আছে বিএনপির। দুই বছরে দুই মিনিটও একটা আন্দোলন করতে পেরেছে তারা? নালিশ, এখন দেশ ছেড়ে বিদেশীদের কাছেও নালিশ করে তারা, কথায় কথায় নালিশ। এজন্য বলি এটা এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। মন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতা নেই, নেতা কোথা থেকে আসবে, সবাই কারাদন্ডে দন্ডিত। এখন টেমস নদীর ওপার থেকে অর্ডার দেয়, আর পুতুল ফখরুল নাচে। টেমস নদীর ওপার থেকে নির্দেশ আসে আর যেমনি নাচাও তেমনি নাচে পুতুলের কি দোষ। ফখরুলও তেমনি নাচে, নাচে আর নাচে। কোন রেজাল্ট নেই। আন্দোলন করে সরকার হটাবে কিন্তু আপনাদের নিজেদের অস্তিত্ব কোথায়। উইকেট দুটি চলে গেছে। জেনারেল মাহাবুবের উইকেটের পতন, তারপর মোর্শেদ খান আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, এত বড় উইকেট এটাও গেছে। আরও উইকেট যাবে, যারা অপেক্ষায় রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্ব এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে আছে। মন্ত্রী আরও বলেন-বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির জন্য এদেশে মুসলিম লীগের পরিণতি ভোগ করবে। কাজেই বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হবেন না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন-আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখবেন। দলের মধ্যে বিভেদ, কলহ করবেন না। ঘরের মধ্যে ঘর, মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না। লোকের অভাব নেই, বরিশাল একটি ছোট্ট সিটি, সেই সিটিতে সম্মেলনে আমাদের কত কর্মী। এটা তো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আমি বার বার বলি, এখনও বলছি- পোস্টার-ব্যানার দিয়ে নেতা হওয়া যাবে না, বিলবোর্ডে সুন্দর ছবি দিয়ে নেতা হওয়া যাবে না। নেতা হতে হলে মানুষের হৃদয় জয় করতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে, ভালবাসা অর্জন করতে হবে। আমাদের সুবিধাবাদী, খারাপ লোকের দরকার নেই, খারাপ লোকেরা এসে সব উন্নয়ন-অর্জন উইপোকার মতো খেয়ে ফেলবে। ওবায়দুল কাদের বলেন-ত্যাগী কর্মীদের কোনঠাসা করে রাখলে আওয়ামী লীগ বাঁচবে না। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলদেশের উন্নয়নকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার মঞ্চে বার বার দরকার। দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটি গঠন অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন নেতৃত্ব পেল বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ। রবিবার বিকেলে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নগরীর ক্লাব রোডের বরিশাল ক্লাবে কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে সভাপতি হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচিত হয়েছেন। সম্মেলনস্থলে ছাত্রলীগ সভাপতি অসুস্থ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাৎক্ষণিক তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকালে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই জসিমের বুকে ব্যথা অনুভব হয়। একপর্যায়ে সে মাটিতে শুয়ে পরে। দ্রুত শেবাচিমে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার শারীরিক দুর্বলতা চিহ্নিত করেন। জানা গেছে, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন সম্মেলনে অংশ নিতে সদর আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীমের কর্মীসমর্থকদের সংগঠিত করতে বেশ তৎপর ছিলেন। সম্মেলন শুরুর আগেই ছাত্রলীগ নেতা সাগরদী থেকে বিশালাকারের মিছিল নিয়ে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সম্মেলনে যোগদান করেন। কিছুক্ষণ পরেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
×