ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১;###;শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। এই দিন রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের বেশিরভাগ জেলা শত্রুমুক্ত হয়ে যায়। ঢাকায় চূড়ান্ত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে যায় যৌথ বাহিনী। ঢাকায় চলছে কারফিউ আর ব্ল্যাক আউট। পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল এ একে নিয়াজী পালাবার পাঁয়তারা করে। তার এই গোপন অভিসন্ধি বিবিসি ফাঁস করে দেয়। নিয়াজী স্বীয় দুর্বলতা ঢাকার জন্য হোটেলে ইন্টারকন্টিনেন্টালে দম্ভভরে বলেন, কোথায় বিদেশী সাংবাদিকরা, আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনও আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না। গবর্নর মালিকের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মুখ্য সচিব পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসার মুজাফফর হোসেন ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল নিয়াজীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে ‘আত্মসমর্পণের’ আবেদন হস্তান্তর করেন। এতে অবশ্য কৌশলে আত্মসমর্পণ শব্দটি বাদ দিয়ে অস্ত্রসংবরণ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এই আবেদনে আরও লেখা ছিল যেহেতু সঙ্কটের উদ্ভব হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, তাই রাজনৈতিক সমাধান দ্বারা এর নিরসন হতে হবে। আমি তাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দ্বারা অধিকারপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানাই। আমি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাই। এই আবেদন ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি পল মার্ক হেনরির হাতে দেয়া হয়। পাকিস্তানী মহলে বার্তাটি মালিক-ফরমান আলী বার্তা হিসেবে পরিচিতি পায়। মিত্রবাহিনীর জঙ্গী বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ করে এবং কুর্মিটোলার ওপর বার বার রকেট হামলা অব্যাহত রেখে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে। মিত্রবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটি জাহাজ ভর্তি পাকবাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালাবার সময় ধরা পড়ে। একটি জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়ে পাকবাহিনী সিঙ্গাপুর পালাবার পথে মিত্র নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। হেলিকপ্টার এবং স্টিমারে মেঘনা নদী পেরিয়ে মিত্র বাহিনী ভৈরব বাজারের ঘাঁটি থেকে সৈন্যবাহিনী সোজা ঢাকার দিকে এগোচ্ছিল। সম্মিলিত বাহিনীর গোলার মুখে পাক হানাদার বাহিনী মেঘনার তীরে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর অগ্রগতি রোধ করতে পারেনি। বাইরে থেকে পাকিস্তানী হানাদাররা যাতে ঢাকায় ঢুকতে না পারে, সেজন্য নদীপথে তাদের যতগুলো স্টিমার-গানবোট এগোনোর চেষ্টা করেছে মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় ধ্বংস হয়। ময়মনসিংহ শহরে পাক হানাদার বাহিনী ডাকবাংলো, কোওয়াটখালি, বড়বাজার, নিউমার্কেট, কালীবাড়ি ও সাহেব আলি রোড এলাকায় বহু নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। ৫৭ ডিভিশন গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল মিত্রবাহিনী কীভাবে রাজধানী ঢাকার মুক্তিযুদ্ধে নদীর বাধা অতিক্রম করবে। ভোররাত থেকে ভৈরববাজারের ৩/৪ মাইল দক্ষিণে হেলিকপ্টারে করে নামানো হলো ৫৭ নং ডিভিশনের সৈন্য। সারাদিন ধরে মেঘনা অতিক্রমের সেই অভিযান চলে। প্রথম বাহিনী ওপারে নেমেই ঘাঁটি গেড়ে বসে। কিছুটা উত্তরে ভৈরববাজারের কাছেই তখন পাকিস্তানী সৈন্যদের বড় একটা মজুদ। ব্রিজটার একটা অংশ ভেঙে দিয়ে নদীর পশ্চিম পারে ওতপেতে বসে আছে। আকাশে সূর্য উঠতেই তারা দেখতে পেল হেলিকপ্টার। নদী পার হচ্ছে, কিন্তু দেখেও তারা ঘাঁটি ছাড়তে সাহস পেল না। ভাবল ওটা বোধহয় মিত্রবাহিনীর একটি ধাপ্পা। ওদিকে ছুটে গেলেই আশুগঞ্জ থেকে মূল মিত্রবাহিনী ভৈরবাজার-ঢাকার রাস্তা ধরবে। সত্যিই কিন্তু পাকবাহিনীকে ভুল বোঝানোর জন্য মিত্রবাহিনীর একটা বড় কলাম তখন এমন ভাবসাব দেখাচ্ছিল যে, তারা আশুগঞ্জ দিয়েই মেঘনা পার হবে। পাকবাহিনীকে বোকা বানিয়ে একরকম বিনা বাধায় মেঘনা পাড়ি দেয়া হয়। হেলিকপ্টারে পার হলো কিছু সৈন্য। অনেকে আবার পার হলো স্টিমার ও লঞ্চে করে। আবার কিছু পার হলো দেশী নৌকাতে করে। ট্যাঙ্কগুলো নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সেই সমস্যাও দূর হলো এক অভাবনীয় উপায়ে। রাশিয়ান ট্যাঙ্ক সাঁতরাতে পারে ঠিকই, কিন্তু একনাগাড়ে আধঘণ্টার বেশি সাঁতরালেই ট্যাঙ্ক গরম হয়ে যায়। অথচ মেঘনা পার হতে আধঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে। তখন ঠিক হলো ট্যাঙ্কগুলো যতটা সম্ভব নিজেরাই সাঁতরে এগোবে। এরপর নৌকাতে দড়ি বেঁধে ট্যাঙ্কগুলো টেনে নদীর ওপারে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু এতে স্থানীয় মানুষের সাহায্য লাগবে। মিত্রবাহিনী অবাক হয়ে দেখল বাংলাদেশের কিছু রাজাকার ছাড়া সব মানুষই স্বাধীনতা চায়। সাহায্য চাওয়া মাত্রই ছুটে আসল হাজারো সাধারণ মানুষ। শত শত নৌকা নিয়ে এলো তারা। সেসব নৌকা বার বার মেঘনা পারাপার করল। বেশ কয়েক মাইল হেঁটে তারপর তারা পৌঁছেছিল ভৈরববাজার-ঢাকার মূল সড়কে এবং পরদিনই তারা রায়পুরা দখল করে নিল। উত্তরের বাহিনীও দ্রুত এগিয়ে আসছে। ময়মনসিংহের কাছে তারা দাঁড়াল। খবর ছিল যে, ময়মনসিংহে পাকবাহিনীর একটা ব্রিগেড রয়েছে, কিন্তু সে ব্রিগেডকে অনেক আগেই যে ভৈরববাজারের দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তা মিত্রবাহিনী জানত না। তাই মিত্রবাহিনী ময়মনসিংহে বড় লড়াই করার জন্য সেদিনটা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে শম্ভুগঞ্জে অপেক্ষা করল। এই দিন দুঃখজনক একটি ঘটনা ঘটে। রুহুল আমিন খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীতে নৌবাহিনীর জাহাজ পলাশ নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর ভারতীয় বিমানবাহিনীর সঙ্গে এক ‘ভুল বোঝাবুঝির যুদ্ধে’ গোলার আঘাতে শহীদ হন রুহুল আমিন। ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুইটি টাগবোট উপহার দিয়েছিলেন। সেগুলোকে কলকাতার গার্ডেন রীচ নৌ ওয়ার্কসপে দুইটি বাফার গান ও মাইনপড লাগিয়ে গানবোটে রূপান্তরিত করা হয়। গানবোট দুটির নামকরণ করা হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন নিয়োগ পান ‘পলাশের’ ইঞ্জিন রুম আর্টিফিসার হিসেবে। ৬ ডিসেম্বর মংলাবন্দরে পাকিস্তানী নৌঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে ‘পদ্মা’, ‘পলাশ’ ও মিত্র বাহিনীর গানবোট ‘পানভেল’ ভারতের হলদিয়া নৌঘাঁটি থেকে রওনা হয়। ৮ ডিসেম্বর সুন্দরবনের আড়াই বানকিতে বিএসএফের পেট্রোল ক্রাফট ‘চিত্রাঙ্গদা’ তাদের বহরে যোগ দেয়। ৯ ডিসেম্বর কোন বাধা ছাড়াই তারা হিরণ পয়েন্টে প্রবেশ করেন। পরদিন ১০ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় তারা মংলাবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। সকাল ৭টায় কোন বাধা ছাড়াই তারা মংলায় পৌঁছান। পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা মংলাতেই অবস্থান নেয় এবং পানভেল, পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হওয়া আরম্ভ করে। দুপুর ১২টায় তারা খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছান। এমন সময় তাদের অনেক উপরে তিনটি জঙ্গী বিমান দেখা যায়। পদ্মা-পলাশ থেকে বিমানের ওপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে জানান। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিমানগুলো পদ্মা ও পলাশের ওপর গুলি ও বোমাবর্ষণ শুরু করে। পলাশের কমান্ডার সবাইকে গানবোট ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু রুহুল আমিন পলাশেই অবস্থান নেন এবং আপ্রাণ চেষ্টা চালান গানবোটকে সচল রাখতে। হঠাৎ একটি গোলা পলাশের ইঞ্জিনরুমে আঘাত করে এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে রুহুল আমিন নদীতে লাফিয়ে পড়েন এবং আহত অবস্থায় কোনরকমে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। দুর্ভাগ্যক্রমে পাড়ে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করে। তাঁর বিকৃত মৃতদেহ বেশ কিছুদিন অযতেœ, অবহেলায় সেখানে পড়েছিল। সাধারণ মানুষ পরিবারের নারী সদস্যদের পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও রাজাকারদের হাত থেকে বাঁচাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রেখে আসত। মহকুমার বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে ভোলা ওয়াপদা কলোনিতে নির্যাতনের পাশাপাশি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা শহর ও আশপাশে বসবাসরত পরিবারের নারীদের সন্ধ্যার পর জোরপূর্বক ক্যাম্পে নিয়ে যেত, নির্যাতন শেষে ফেরত পাঠাত। আবার কোন কোন পরিবারে পাকিস্তানী সৈন্যরা বিশেষ করে রাজাকাররা বাড়িতে গিয়ে নারী নির্যাতন করত, বহু সম্ভ্রান্ত পরিবারে রাজাকাররা ঘরে গিয়ে দিনের পর দিন নারীদের পাশবিক নির্যাতন করেছে। তাদের অত্যাচারে নিরুপায় হয়ে বহু পরিবার তাদের মেয়েদের সন্ধ্যার পর পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাম্পে পাঠাতে বাধ্য হতো। এই দিন ভোলা মুক্ত হলে মুক্তিবাহিনীর একটি দল ওয়াপদা কলোনি থেকে ১৭ জন নারীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। ভোলায় পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর শুরুর দিকের গণহত্যাগুলো খেয়াঘাটেই সংঘটিত হতো। তারা খেয়াঘাটকে জলবধ্যভূমিতে পরিণত করে। সন্ধ্যা নেমে আসার পর খেয়াঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ত। পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে একাত্তরে খেয়াঘাটের চা বিক্রেতা মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাত হলেই পাকিস্তানী আর্মিরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধরে আনা মানুষগুলোকে হত্যা করার জন্য খেয়াঘাটে নিয়ে আসত। তারা গাড়ি ভর্তি করে মানুষ নিয়ে আসত, এদের মধ্যে নারী-শিশু ও ছিল। খেয়াঘাটেই তারা নিরীহ মানুষগুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করত। যুদ্ধের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা বেড়ে গেলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী খেয়াঘাটের পরিবর্তে ওয়াপদা কলোনিতে সাধারণ মানুষকে হত্যা করত এবং গর্ত করে লাশ মাটি চাপা দিত। গফরগাঁও থানার নতুন অফিস ইনচার্জ হাফিজুর রহমান, কোম্পানি কমান্ডার ফজলুল ওয়াহাব, কোম্পানি কমান্ডার নাজিমউদ্দিন খান ও প্লাটুন কমান্ডার আবদুল বারী মাস্টারের নেতৃত্বে ত্রিশালে পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। পাকসেনারা রাজাকারদের সঙ্গে ছলনা করে পালিয়ে যায়। রাজাকাররা অন্য উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে ১০৬টি রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করে। ত্রিশাল ঘাঁটি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহী উথান্টের সঙ্গে সাক্ষাত করে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি ব্যক্ত করেন। চীনের অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চি পেং ফি বলেন, ভারতের কার্যকলাপে তার সম্প্রসারণবাদী নগ্নরূপ প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সমাজতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদীরা নির্লজ্জের মতো ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের ত্রাণকর্তার ভূমিকা গ্রহণ করে বর্বরোচিত কাজ করেছে। সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করেছে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রুবাহিনীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যৌথবাহিনী এই তিন শহর ছাড়া রংপুর ও দিনাজপুর জেলা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত করে। রাতে পাকবাহিনী জামালপুর গ্যারিসন ছেড়ে ঢাকার দিকে পালাবার সময় শহরের অদূরে যৌথবাহিনীর মুখোমুখি হয়। এ-যুদ্ধে প্রায় ১৫০০ পাকসেনা হতাহত হয়। বাকিরা আত্মসমর্পণ করে। দিবাগত রাতে আল-বদরবাহিনীর গুপ্তঘাতকদল দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দিন হোসেন ও পিপিআই এর চীফ রিপোর্টার সৈয়দ নাজমুল হককে তাঁদের বাসভবন থেকে অপহরণ করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লীতে বলেন, যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত জাতিসংঘের আহ্বান ভারত প্রত্যাখ্যান করেনি বা গ্রহণও করেনি। প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় শুধু তখনই সম্ভব হবে যখন বাংলাদেশ সরকার কায়েম হবে এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত এক কোটি শরণার্থী তাদের বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে পারবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি যৌথ সামরিক কমান্ড গঠন ও রণকৌশল গ্রহণ করার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ভারতের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×