ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ শেখ হাসিনা ॥ শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

সিডনির মেলব্যাগ ॥ শেখ হাসিনা ॥ শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক

সিডনি এখন আগুনের ভয়াবহ বিভীষিকা দেখছে। এত কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়নি আগে। বন বাদাড়ে আগুন লাগে এটা জানতাম। কিন্তু প্রকৃতির এমন ভয়াবহ ধ্বংস লীলা ভাবা যায় না। এ দেশে বুশফায়ার কিংবা বনে আগুন স্বাভাবিক। প্রতিবছর এসব হয়। কিন্তু এমন বীভৎস পোড়া গন্ধ আর বিষাক্ত বাতাস কখনও দেখিনি। অফিস থেকে বের হয়ে দেখি শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। প্রচুর মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। গৃহবন্দী এই জীবন থেকে বাঁচাতে পারে কেবল প্রকৃতিই। আবার যদি অঝোর ধারায় বর্ষা নামে, তবেই সম্ভব আগুন নেভানো। তার কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই। এর পরও সরকারী ছুটি বা বন্ধ বলে কিছু নেই। সবাই যার যার মতো কাজ করছে। জীবন চলমান। আমাদের সঙ্গে সম্ভবত এটাই তফাত। আমাদের সমাজে যে কোন ছুতোয় কাজ করতে না পারলেই মানুষ খুশি। কিন্তু এদেশে কাজ না করলে কোম্পানি যেমন বেতন দিতে পারবে না, তেমনি সরকারও গদির লোভে অযথাই টাকা দেবে না। এক সময় এরশাদ আমলে আমরা ইচ্ছে মতো বন্ধ দেয়ার রেওয়াজ দেখেছি। রাস্তাঘাটে তালাবদ্ধ আর মিছিল-মিটিং হলেই হঠাৎ করে কার্ফু দিয়ে সব বন্ধ করে দেয়া হতো। আর টিভি জুড়ে মন ভোলানো কোন সিনেমা বা অনুষ্ঠান। অর্থনীতির কি হবে বা কি হচ্ছে, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও। শেখ হাসিনার আমলে সে সংস্কৃতি পুরো বন্ধ হয়ে গেছে। আজ দেশে কোন হরতাল বন্ধ নেই। এগুলো বলার আগে একটা কথা বলতে চাই। ১৯৯৯ সালে দেশে একবার বন্যা হয়েছিল। তখনও তিনি দেশ শাসনে। সে সময় অস্ট্রেলিয়ার সরকার সামান্য কিছু সাহায্য পাঠিয়ে বড় বড় কথা বলার পর শেখ হাসিনা জবাব দিতে ছাড়েননি। তখন তাঁর অবস্থান এত শক্ত ছিল না। দেশও ততটা এগোয়নি। তিনিও তেমন সময় পাননি দেশ গোছানোর। তার পরও তিনি বলে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যা আপনাদের থাকলে দেখা যেত কত ধানে কত চাল। দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গেই বলেছিলেন, তিনি ও তাঁর সরকার পারবেন মোকাবেলা করতে। পেরেছিলেনও। কিন্তু আমরা তাঁকে পরের বছর দেশ শাসনের সুযোগ না দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটকে জয়ী করেছিলাম। যে মেয়াদে বাংলাদেশ জঙ্গী আর সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে চলেছিল। ভাগ্যিস ওয়ান ইলেভেন নামে অপ্রত্যাশিত এক পরিবর্তন ঘটেছিল। সেটা রাজনীতির জন্য অসুখকর বা অস্বস্তির হলেও দেশ ও সমাজকে মুক্ত করেছিল ভয়াবহ দুঃশাসন থেকে। এর পরের ইতিহাস আমাদের জানা। কথাগুলো বললাম এই কারণে যে, এই ক’দিন আগে আদালত প্রাঙ্গণে তুমুল শোরগোল করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বিষয়টাই ঘোর আপত্তির। আইনজীবী কি করে আওয়ামী বা বিএনপিপন্থী হয়? আইন, চিকিৎসা বা সাংবাদিকতার মতো পেশায় যদি এমন দলভাগ দেখা যায় এবং তা গৌরবের সঙ্গে স্বীকার করা হয়, তখন আমরা কি এটা বুঝি না যে, আইন, চিকিৎসা ও সংবাদ কিছুই ঠিকমতো কাজ করছে না? বলুন তো বিএনপির ডাক্তার কেন চাইবেন আওয়ামী রোগী ভাল হয়ে উঠুক? আওয়ামী আইনজীবী কেন চাইবেন তার বিএনপি মক্কেল ছাড়া পাক? এ এক অদ্ভুত নিয়ম দেশে। তারা এবার কি করলেন? খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আসল কাজ না করে হৈ হট্টগোল। তাদের মনোভাব বা মনোবেদনা বুঝতে পারি। তাদের রাগ ও ক্রোধ অনুমেয়। কিন্তু তারা আইনের মানুষ। তারা কি জানেন না আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া অপরাধ? আসল জায়গা কোনটা? রাজনীতির মাঠে বিএনপি কি করছে? সেখানে তাদের কোন অস্তিত্ব দেখতে পাই আমরা? ক’দিন আগে খবরে দেখলাম বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বললেন, এটাই সময়। তাদের এক দফার জন্য আন্দোলনে যেতে হবে এখনই। সিনিয়র নেতাদেরও তাই মত। কিন্তু মওদুদ কি বললেন? না, এখনও সময় আসেনি। তাদের উচিত মওদুদ সাহেবকে প্রশ্ন করা, কখন সময় আসবে? এর ভেতর একটা বিষয় স্পষ্ট, তাদের নিজেদের ভেতর সমঝোতা নেই এবং তারা দিশাহারা। এখন শেখ হাসিনাকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কি করবে তারা? অথচ তিনি সত্যভাষী। তিনি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, খালেদা জিয়া আগেও হুইল চেয়ারে ছিলেন। কথাটা কি মিথ্যা? শারীরিক কারণ বা অন্য কোন কারণে তিনি জামিন পাবেন কি না, তা বলা অনুচিত। বাংলাদেশের সামনে এখন যে সব চ্যালেঞ্জ তার প্রতিবন্ধক রাজনীতি হতে পারে না এবং সেটা হতে দিলে বাংলাদেশ এগুতে পারবে না। সে দিন একটি ভিডিও ক্লিপ দেখে মন ভাল হয়ে গেল। পাকিস্তানের এক লেখক ইসলামাবাদে এক সেমিনারে কথা বলছিলেন। সবার সামনে মিডিয়ায় এমন খোলামেলা কথা পাকিস্তানীরা সচরাচর বলে না। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বললেন, আমাদের এক সময়ের দরিদ্র কাজিন আজ বাঘ। আমরা কি দেখছিÑআজ বাংলাদেশ কোথায় আর আমরা কোথায়? তার দেয়া উদাহরণগুলো অসাধারণ। তিনি বললেন, পাকিস্তানের মুদ্রায় যখন উপাসনালয়ের ছবি, বাংলাদেশের মুদ্রায় তখন মা-সন্তান আর বইয়ের ছবি। এটা তাকে মুগ্ধ করেছে। তার মতে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে নারী শক্তিই এগিয়ে দিচ্ছে দেশকে। তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন খোলামেলা। তার মতে, বাংলাদেশের মুসলমানরাই পাকিস্তানের চাইতে সাচ্চা মুসলমান। যারা কথায় কথায় শিয়া সুন্নি আহমদিয়ার গলা কাটে না। প্রতিবেশী হিন্দু বা যে কারও সঙ্গে মিলে মিশে থাকে। বাংলাদেশের ভেতরে যে সমস্যাই থাকুক না কেন আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ জাতি। সামান্য বা বড় যে সমস্যাই থাকুক, তা বাগে রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। ইসলামাবাদের ষষ্ঠ সাহিত্য সম্মেলনে এই ভদ্রলোক মারাত্মক একটি কথা বলেছেন। তার মতে, বাংলাদেশের গলায় ফৌজি শাসন ঝুলছে না। আর নেতৃত্ব দূরদর্শী বলেই আমরা তাদের ফেলে এগিয়ে চলেছি তরতর করে। এর পরও আমাদের ভয় যায় না। সন্দেহ থেকে যায়। আমাদের মেরুদ- ভেঙ্গে দিয়ে যাওয়া পাকিস্তান আর উপনিবেশের শাসন ঘোরে মনে। যে যাই বলুক এখন বাইরের দেশেও আগুন পানি বা যে কোন সমস্যায় মনে হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বলিষ্ঠতার ধারেকাছে কেউ নেই। পাকিস্তানীরা যেমন তা মানছে, অচিরেই ভারতের লোকজনও তা বলতে শুরু করবে। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তা টেস্ট বুঝে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে খেলার ফল যাই হোক, ইডেনে সৌরভ গাঙ্গুলীর গোলাপি বলের ইতিহাসে উজ্জ্বল শেখ হাসিনা ম্লান করে দিয়েছেন মমতা দিদিকে। এটাই তাঁর ক্যারিশমা। বিএনপিপন্থী আইনজীবী, দুর্মূল্য পেঁয়াজ, দু-একটা চোরাগোপ্তা হামলা কিংবা শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করে তাঁকে দমানো যাবে না। সামনে যেসব কাজ বাকি, সেগুলো পূর্ণ করে দেশকে আত্মনির্ভরশীল ও উন্নত করতে তাঁকেই লাগবে আমাদের। রাষ্ট্রপতি যথার্থই বলেছেন আগুনের ছাই থকে উঠে আসা মানবী তিনি। তাঁকে স্যালুট। [email protected]
×