ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় আলুর আবাদ বেড়েছে

প্রকাশিত: ১২:১৩, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

বগুড়ায় আলুর আবাদ বেড়েছে

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ চাহিদা অনুযায়ী বিএডিসির প্রত্যায়িত বীজ না পাওয়া, হিমাগারে অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় সংরক্ষিত বীজ, বাজার থেকে বেশি দামে কেনা বীজ এবং ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবের পর আলু আবাদ প্রধান বগুড়া অঞ্চলে এবার আলুর আবাদ ভাল। অবশ্য গত ক’বছর ধরেই বগুড়ায় আলুর উৎপাদন বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে এবারের মৌসুমে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। তবে চাষীরা অধিক জমিতে আবাদ করায় উৎপাদন ১৩ লাখ মে. টনের কাছে পৌঁছবে। আলু উত্তোলন শুরু হয়নি। নবান্নকে ঘিরে আগাম জাতের কিছু আলু উত্তোলন করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আলু উত্তোলন শুরু হবে। বগুড়ার দই ও মরিচের মতো বগুড়ার এক ধরনের লাল আঠালো আলুর (স্থানীয় নাম হাগরাই) কদর দেশজুড়ে। যা বগুড়া ব্র্যান্ডে পরিচিতি পেয়েছে। গরম ভাতের সঙ্গে এই লাল আলু ভর্তার স্বাদই আলাদা। বাইরে থেকে যারা বগুড়া আসেন এই লাল আলুও কিনে নিয়ে যান। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন, কৃষকদের উচ্চফলনশীল আলু আবাদে জৈবসার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে আলুর উৎপাদন বাড়বে। বগুড়ার শিবগঞ্জ, সোনাতলা, ধুনট, গাবতলি, সারিয়াকান্দি, শেরপুর উপজেলায় আলুর ক্ষেত সতেজ রয়েছে। বগুড়া সদরের কালিবালার আলু চাষী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আলু গাছ সতেজ রয়েছে। তীব্র শীত না থাকায় কোল্ড ইনজুরির কবলে পড়েনি। তা ছাড়া আলু বেড বেঁধে দেয়ায় গাছগুলো বেড়ে উঠে ছোট শাখা-প্রশাখা গজিয়েছে। গত বছর ভাল ফলন পেয়েছেন। আশা করছেন এবারও পাবেন। একই কথা এলাকার কৃষকের। তারা জানালেন, সময় মতো আলু আবাদ শুরু হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল কিছুটা বিঘœ ঘটায়। পরে চাষীরা মৌসুম ধরতে পারে। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূল থাকলে ভাল ফলন মিলবে । কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভাষ্য, বগুড়ায় গত ২০১১-১২ মৌসুমে আলুর ফলন পাওয়া যায় ১১ লাখ ৭ হাজার ২শ’ ২৫ মেট্রিক টন। পরবর্তী মৌসুমে ১১ লাখ ৩৪ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। এরপর দিনে দিনে আবাদ ও ফলন বাড়ে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। ফলন ছিল ১৩ লাখ মেট্রিক টন। বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এ বছর চাষের জমি নির্ধারণ হয় ৫৫ হাজার ৪৫৪ হেক্টর। আর ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৮ হাজার মেট্রিক টন। তবে চাষীরা নিজ উদ্যোগে বেশি জমিতে আবাদ করায় লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১৩ লাখ মে. টনে ঠেকতে পারে। কৃষকের আশা ফলন বাড়লে এবং বাজার ব্যবস্থা ঠিকঠাক মতো থাকলে কৃষক আলুর ভাল দাম পাবে। আবার ভোক্তারা আলুর সহনীয় দামের মধ্যেই থাকবেন। নবান্নের কারণে উত্তেলিত আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল কাশেম আযাদ জানান, চলতি বছর আমন ধান কাটতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আলু আবাদে অনেক চাষী পিছিয়ে পড়েছে। তবে কৃষক আমন ধান কেটেই আলু চাষে ঝাঁপিয়ে পড়ে। খাওয়ার ও বাজারে বিপণনের জন্য ৬০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে আলু উত্তোলন করা যায়। হিমাগারের রাখার জন্য আলু জমিতে ৯০ থেকে ৯৫ দিন রাখতে হয়। বগুড়ার ৩৩ হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ক্ষমতা ২ লাখ মে. টন। এর মধ্যে বীজও রাখতে হয়। বীজ রাখার জন্য বিশেষায়িত হিমাগার না থাকায় কৃষকদের প্রত্যায়িত বীজের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বগুড়া আঞ্চলিক বীজাগারের ওপর নির্ভর করতে হয়। কোন বছরই বিএডিসির বীজাগার চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যায়িত বীজ দিতে পারেনি। এবার চাহিদা ছিল ৮৪ হাজার টন বীজ। বিএডিসি দিতে পেরেছে ৩৩১০ মে. টন। বাকি বীজ কৃষকদের কিনতে হয়েছে হিমাগার ও স্থানীয় বাজার থেকে বেশি দামে। এই বীজ উন্নতমানের হয় না। তারপরও বগুড়ার আলু চাষীরা আলু আবাদ ধরে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন। বগুড়া অঞ্চলে বিএডিসির প্রত্যায়িত বীজের জাতের মধ্যে রয়েছে এ্যাস্টোরিও, গ্রানুলা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, ক্যারেজ, লেডিরোজেটা। লাল রঙের ছোট আঠালো হাগরাই জাতের আলু বগুড়ার মাটিতেই ভাল ফলে। যে কারণে এই আলু বগুড়া ব্র্যান্ডের সম্মান পেয়েছে। তবে এই আলু আবাদের জমি কম। প্রতি বিঘায় ফলন খুব বেশি হয় না। যে কারণে কৃষক অধিক উৎপাদনের আলুর চাষে আগ্রহী বেশি। কয়েক আলু চাষী বললেন, চাষীরা আলুর ভাল দাম পেলে আগ্রহ আরও বাড়বে।
×