ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ পাচার প্রতিরোধে বিএফআইইউ’র নতুন নীতিমালা

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

অর্থ পাচার প্রতিরোধে বিএফআইইউ’র নতুন নীতিমালা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার তথা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের আওতায় গত মঙ্গলবার গাইডলাইন্স জারী করেছে মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কার্যরত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিএফআইইউ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ফোকাস গ্রুপ গাইডলাইন্স এর খসড়া প্রণয়ন করে। পরবর্তীতে বিএফআইইউ গাইডলাইন্স জারীর পূর্বে সকলের মতামতের জন্য গাইডলাইন্স ওয়েবসাইটে সকলের মতামতের জন্য প্রকাশ করে। সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারের সাথে আলোচনা এবং প্রাপ্ত মতামত/সুপারিশ পর্যালোচনা করে গত মঙ্গলবার চূড়ান্ত নীতিমালা সম্বলিত সার্কুলার জারী করা হয়। সার্কুলার অনুযায়ী বিএফআইইউ এর গাইডলাইন্স এর আলোকে প্রতিটি ব্যাংক বাণিজ্যভিত্তিক মানিলন্ডারিং ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে নিজস্ব গাইডলাইন্স বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, পাচারকৃত অর্থের বেশীরভাগ অর্থাৎ, ৮০ শতাংশেরও বেশী বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে পাচার হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন ও সংবাদ মাধ্যমেও বাংলাদেশ হতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী মানিলন্ডারিং বা অর্থ পাচার হচ্ছে। এছাড়াও বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডি’র যৌথ উদ্যোগে প্রণীত ‘বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি নিরূপণ প্রতিবেদন’এ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও বিদেশে অর্থ পাচারকে ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) কর্তৃক অর্থ পাচার বিষয়ক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রেড মিসইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ বাইরে চলে গেছে। এমন প্রথম ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। একইভাবে উক্ত রিপোর্টে ট্রেড মিসইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ দেশে প্রবেশ করেছে এমন প্রথম ৫০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। মূলত বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধিকাংশই ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন সংবাদ পত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক এ ইউনিটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। এছাড়া, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সভার সভাপতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় অর্থ পাচারের পূর্বেই তা চিহ্নিতকরণ এবং পাচার রোধে সম্ভাব্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএফআইইউ-কে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সার্বিক প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যভিত্তিক মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি মঙ্গলবার বিএফআইইউ কর্তৃক এ গাইডলাইন্স জারী করা হয়। চীন কিংবা ভারতের মতো দেশগুলো থেকে অর্থপাচার বেশি হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশই বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের জন্য বাণিজ্যভিত্তিক মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে নতুন নীতিমালা জারী করল বিএফআইইউ। এতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারকে উচ্চ ঝুঁকি বিবেচনায় এ সম্পর্কিত কেস বিশ্লেষণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান। পাচারকৃত অর্থ চিহ্নিত করার নিমিত্তে কৌশলগত বিশ্লেষণের জন্য একজন উপমহাব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন। বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যাংকের করণীয় বিষয়ে গাইডলাইন জারীকরণ। বৈদেশিক বাণিজ্যের কাজে নিয়োজিত সকল ব্যাংক কর্মকর্তাকে বাণিজ্যভিত্তিক মানিলন্ডারিং বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনয়ন। বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারের মামলা তদন্তে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
×