ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাই দূষণহীন শীতকাল

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

চাই দূষণহীন শীতকাল

নবেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে শীতকাল। কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে এ শীতকাল প্রকৃতিকে করে দেয় নিরাভরণ। গাছের পাতা ঝরে যায়, প্রকৃতি হয়ে পড়ে বিবর্ণ, যেন কোন এক জাদুকাঠির স্পর্শে ঘুমিয়ে পড়েছে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতের প্রভাব বিরাট আকার ধারণ করে। গ্রাম বাংলায় শীতকালের আসল রূপ দেখা যায়। ঘরে ঘরে চলে পিঠার আমেজ আর খেঁজুর রস তার সঙ্গী। কিন্তু শীতকাল আমাদের জন্যে যেমন খুশির বার্তা বয়ে আনে, একই সঙ্গে আবার ক্ষতির বার্তাও আনে। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে ধুলার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ ধুলো বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। এক জরিপে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে শহরাঞ্চলের ৮০ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ বায়ু দূষণের মধ্যে দিয়ে বসবাস করছে। কিন্তু গ্রাম, শহর, নগর কোনটাই এ দূষণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। শীতকালে গ্রামের মতো বিভিন্ন শহরে ইটভাটার কাজ শুরু হয়। বলা হয়, ইটভাটাই বায়ু দূষণের জন্যে ৫৮ শতাংশ দায়ী। ভাটায় সারাক্ষণ ইঞ্জিনের গাড়ি যাতায়াত করে, সেগুলো থেকে ধোঁয়া বের হয় আবার ইট পোড়ানোর সময়ও কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণ করে। বায়ু দূষণ মানুষ এবং প্রকৃতির জন্য খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বায়ুর বৈশ্বিক মানদ-কে অনুসরণ করে পরিবেশ অধিদফতর বায়ুর পর্যবেক্ষণ করে। বায়ুর মানমাত্রার সূচক ১০০ এর ওপরে উঠলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী, বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা ‘পিএম ২.৫’ এর মানমাত্রা হচ্ছে প্রতি কিউবিক মিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। বাংলাদেশে প্রতি বছরে এ মাত্রা বেড়েই চলছে। বায়ু দূষণের ফলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগের সংক্রমন বেড়ে যাচ্ছে। কাশি, ফুসফুসের ক্যান্সার, ফুসফুসের সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, এ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ, স্ট্রোক, চোখে ছানি পড়া, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের সমস্যা প্রভৃতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসা করতে গিয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে অত্যধিক ব্যয়ভারের কারণে। পবিবেশ দূষণ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলের সচেতন হওয়া জরুরী। এ জন্যে পরিকল্পিতভাবে কারখানার ধোঁয়া কমিয়ে আনতে হবে। দেশের ইটভাটাগুলোতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সরকারী-বেসরকারী প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ করার সময় ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি ছিটাতে হবে। প্রচুর বনায়ন করতে হবে, কারণ শীতকালে যেসব গাছের পাতা ঝরে না, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে জোরালো ভূমিকা রাখে। তাছাড়া সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে মাস্ক ব্যবহার করা খুবই দরকার। ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার’ বলেছে, বায়ু দূষণ রোধ করতে পারলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়বে এক বছর তিন মাসের বেশি। তাছাড়া বায়ু দূষণ রোধ করা গেলে সবচেয়ে বড় উপকারটি হবে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়তা’, যা বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রকোপ রোধে বায়ু দূষণ রোধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট থেকে
×