ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দূষণের মারাত্মক রূপ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

দূষণের মারাত্মক রূপ

শীত এখনও জাঁকিয়ে বসেনি। এরমধ্যেই দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ মারাত্মক আকারে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর বায়ুদূষণ শহরের মধ্যে ঢাকা শহর অন্যতম।এর আগে দিল্লী ছিল প্রথম তালিকায়। তবে এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য অনুযায়ী, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ২১২, যা খুব হতাশাজনক, অস্বাস্থ্যকর। দিল্লীর স্কোর ১৯৬। সে হিসেবে ঢাকার বায়ু দূষণের মাত্রা দিল্লীকেও ছাড়িয়ে গেছে। নির্মল ও পরিচ্ছন্ন বায়ু আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অনিবার্য। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আনুমানিক ৭ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় বায়ু দূষণের কারণে। এদের মধ্যে ৪ মিলিয়ন মানুষের বসবাস হলো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। বায়ু দূষণের ফলে মৃত্যুবরণকারী নব্বই ভাগেরও বেশি মানুষ গরিব দেশগুলোর বাসিন্দা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি হিসেবে দেখা যায়, বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৯ জনই বেশি মাত্রায় দূষিত বায়ু শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যবহার করে। সংস্থাটি আরও জানায়, বায়ু দূষণ এমন একটি মারাত্মক প্রভাবক যার জন্য ২৪ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষের হার্টের অসুখ, ২৫ শতাংশ স্ট্রোক, ৪৩ শতাংশ পাল্মনারি রোগ এবং ২৯ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার হয়ে থাকে। বায়ু দূষণের অর্থনৈতিক প্রভাবও কম নয়। প্রতিবছর বিশ্ব অর্থনীতির ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় বায়ু দূষণের কারণে। এছাড়া গ্রাউন্ড-লেভেল ওজোন-দূষণের জন্য আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীর প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন ২৬ শতাংশ হারে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমাগতভাবে অবনতি হচ্ছে। নগর পরিবেশ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর ও রাজধানী ঢাকাকে আমরা বসবাসের যোগ্য করে তুলতে পারিনি। অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিবেশ দূষণের জন্য প্রধানত দায়ী। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকাসহ দেশের সামগ্রিক বায়ু দূষণের ৫৬ শতাংশের উৎস হলো ইটভাটা। এর প্রায় সবগুলোই নাকি সম্প্রতি রচিত পরিবেশ বিধিমালা অনুযায়ী অবৈধ। এছাড়া বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে পরিবহন খাতেরও বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের জন্য যানবাহনের ভূমিকা প্রায় ১৬ শতাংশ। ২০১৩ সালে ‘এটমসফেরিক পলিউশন রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, অন্যান্য দূষকের তুলনায় বায়ুতে পার্টিকুলার ম্যাটারের অবস্থান স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। বায়ুতে অবস্থানকারী এই পার্টিকুলারগুলো যানবাহনের মতো মাবনসৃষ্ট উৎস থেকে আসে। যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। এর ফলে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, লেড ইত্যাদি বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি তথা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। শহরগুলোতে গড়ে ওঠা শিল্প-কলখানাও বায়ু দূষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধুমাত্র ইটভাঁটি, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন ও শিল্প কারখানা নয়, পরিবেশ আইন অমান্য করে উন্মুক্তভাবে ইট-বালি পরিবহন ও ভবন নির্মাণের সময় খোলা জায়গায় অথবা রাস্তার উপরে সেগুলো রেখে দেয়ার ফলেও বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ শুধুমাত্র ধোঁয়া দূষণ নয়, ধূলি দূষণকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে বায়ুদূষণ রোধে সমন্বিত কর্মসূচী নিতে হবে। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতে সময়মত রাস্তা মেরামত না করার জন্য মারাত্মক ধূলিদূষণ হতে দেখা যায়। গাছপালা কেটে অপরিকল্পিত নগরায়ণও দায়ী। সুস্থ নিঃশ্বাসের জন্য গাছপালার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সম্প্রতি রাজশাহী শহরে বেশ কয়েকটি কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হেনেছে। প্রতিটি ঝড়ের শুরুতে মনে হয়েছে আমরা যেন কোন এক মরু“ভূমিতে অবস্থান করছি। প্রচণ্ড বেগে ধেঁয়ে আসা বাতাসের সঙ্গে ধুলো-বালি নিমিষের মধ্যে শহরকে সাদা বানিয়ে দিয়েছিল। শুধু ঝড়ের সময়েই নয়, নগরীর ব্যস্ততম এলাকাতে যানবাহন চলাচলের সময় প্রায় সবসময়ই ধূলিঝড় হচ্ছে বলে মনে হয়। রাস্তার ওপর পড়ে থাকা মাটি ও বালি প্রতিনিয়ত এপাশ থেকে ওপাশ, আবার ওপাশ থেকে এপাশ করছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দীর্ঘদিন থেকে একই অবস্থা বিরাজ করলেও নাগরিকদের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ বা প্রতিকার হচ্ছে বলে মনে হয় না। সার্কিট হাউস রোড, ঢাকা থেকে
×