ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাবিতে হল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

  জাবিতে হল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

জাবি সংবাদদাতা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন তিনটি হলের নির্মাণ কাজে ‘অনিয়ম ও অর্থ লোপাটের’ অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্ট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ও ভবন প্রদক্ষিণ করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন তিনটি ছাত্রী হলের কাজের সিডিউলের সঙ্গে মহাপরিকল্পনার ব্যাপক গরমিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে মহাপরিল্পনার সিডিউলের সঙ্গে তিন জায়গায় অসঙ্গতি থাকায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। ফাউন্ডেশনে পাইলিংয়ের পরিবর্তে কম মূল্যের ম্যাট পদ্ধতি ব্যবহার, সীমানা প্রাচীর ও গ্যাস সংযোগ না দিয়েও এ কাজের সমমূল্যের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফিকির আঁটা হয়েছে সিডিউলে। অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ডিটেইলস প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) ঘেঁটে দেখা যায়, ছেলে ও মেয়েদের জন্য ৬টি ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হলের ফাউন্ডেশন হবে পাইল ফাউন্ডেশন পদ্ধতিতে, প্রতিটি হলের নিচ তলাসহ অন্যান্য সব তলায় থাকবে গ্যাস সংযোগ এবং প্রতিটি হলেই থাকবে আলাদা সীমানা প্রাচীর। তবে এর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে নির্মাণাধীন তিনটি হলের কাজের সিডিউলে। ডিপিপির সঙ্গে কাজের মিল পাওয়া যায়নি। পাইল ফাউন্ডেশনের বিপরীতে ম্যাট ফাউন্ডেশনে নির্মাণ হচ্ছে হল তিনটি। গণপূর্ত অধিদফতরের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী, পাইল ফাউন্ডেশনে প্রতি বর্গ মিটারের খরচ ধরা হয় ৪০ হাজার ৫৩৩ টাকা আর ম্যাট ফাউন্ডেশনে ২৮ হাজার ৭৫২ টাকা। ডিটেইলস প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) অনুযায়ী মেয়েদের প্রতিটি হলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৭ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। তবে হলের কাজের সিডিউলে অসঙ্গতি ও কাজের ঘাটতি দেখানোর পরেও সিডিউলে মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৭৭ কোটি ২৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘তিনটি হলে প্রায় চৌদ্দ কোটি টাকা লোপটের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। আমরা কতজন এই দুর্নীতির বিরোধিতা করছি তা বিষয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি দেয়া হচ্ছে, এই ছুটিও তো শেষ হবে। আপনি (ভিসি) কান বন্ধ রাখলেও আপনার বিরুদ্ধের স্লোগান বাতাসে ভাসবে। আপনি একজন উপাচার্য বা অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থ। তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান রেখে আপনি সাময়িকভাবে সরে যান। এই আন্দোলনের ফলাফল হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর মুক্ত হবে। তাই যতক্ষণ না আপনার অপসারণের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত হচ্ছে ততক্ষণ এই আন্দোলন জারি থাকবে।’ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, ‘আমরা দেখছি ছাত্রীদের যে তিনটি হলের কাজ চলছে, সেখানে নাকি সাড়ে ১৪ কোটি টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া বিগত প্রত্যেকটি চুরি, লুটপাট ও সিডিউল ছিনতাইয়ের ঘটনার যেমন বিচার হয়নি, তেমনি এই ১৪ কোটি টাকা গায়েবের ঘটনার বিচার না হলে জাহাঙ্গীরনগর আবার উত্তাল হবে।’ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন, জামাল উদ্দিন রুনু, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, তারেক রেজা প্রমুখ। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা ও ডিপিপির নিয়ম মেনেই কাজ হচ্ছে। গ্যাস সংযোগ তো থাকতেই হবে। পাশাপাশি অবস্থিত প্রতিটি হলে সীমানা প্রাচীর দিলে ঘিঞ্জি দেখা যেতে পারে। কোনো নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কাজ না করে টাকা নিতে পারবে না। ফাউন্ডেশনের কাজ পাইল না ম্যাট পদ্ধতিতে হবে সেটা নির্ভর করবে মাটি পরীক্ষার পর। যেহেতু আমাদের মাটি ভালো তাই পাইল করার প্রয়োজন নেই।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গত বছর ২৩ অক্টোবর ১৪শ’ ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় একনেক। প্রকল্পের অধীনে এক হাজার আসন বিশিষ্ট ছেলেদের ৩টি ও মেয়েদের ৩টি হলের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মেয়েদের ৩টি হলের কাজ শুরু হয়েছে।
×