ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাজারে সুস্থ্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা হবে : বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

 বাজারে সুস্থ্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা হবে  : বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজারে সুস্থ্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, দ্রুত পেঁয়াজ আনতে গিয়ে প্রতিকেজির প্লেন ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম এমন একটা পর্যায়ে থাকা উচিত, যেখানে কৃষকের লোকসান হবে না। দামও মানুষেরও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। এজন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের অনেক কাজ করার আছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার কাওরান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের উদ্যোগে ‘ব্যবসায়ী এবং ক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে সমস্যার গভীরে গিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। এভাবে বাণিজ্য ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে দেশের মানুষ উপকৃত হবেন। মানুষের জন্য সেবা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব, ভোক্তা যাতে প্রতারিত না হয়, সেজন্য সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, বাজারে নিরপেক্ষ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে মানুষ সঠিক মূল্যে পণ্য ক্রয় করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে এ দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে। প্রতিযোগিতা কমিশনকে এমন ভাবে কাজ করতে হবে, যাতে অশুভ তৎপরতা চালিয়ে কেউ ভোক্তার ক্ষতি করতে না পারে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পেঁয়াজ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। দেশের চাহিদার প্রায় চারভাগের এক ভাগ পেঁয়াজ প্রতিবছর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সঙ্কট মোকাবেলায় উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ আমদানি করে ভর্তুকি দিয়ে কমমূল্যে দেশের মানুষের কাছে বিক্রয় করতে হচ্ছে। তবে চাহিদা মোতাবেক দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হলে সমস্যা তৈরি হতো না। দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। দ্রুত পেঁয়াজ আনতে গিয়ে প্রতিকেজিতে প্লেন ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫০ টাকা। সাধারণ ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে এটা করা হয়েছে। তবে আমদানি বাড়ায় ইতোমধ্যে স্থানীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ কারণে প্রতিদিন বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কমছে। টিপু মুনশি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে ধর্মীয় উৎসবের সময় পণ্যের মূল্য কমিয়ে ভোক্তাদের সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে পবিত্র রমজান মাস এলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রবনতা দেখা যায়। এ অবস্থা মোকাবেলায় ভোক্তাদেরও সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরেন কমিশনের সদস্য মো. আব্দুর রউফ। আলোচনা সভায় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশে এ এ পর্যন্ত চারটি বড় ধরনের মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটেছে। একটি হলো, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালে। ওই সময় সমস্যা সঙ্কুল বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। দ্বিতীয়টি হলো, ২০০৭ সালে। ওই সময় খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগাম বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারেনি। ফলে ১১-১২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়ে যায়। এছাড়া ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ওই সময় মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়। তিনি বলেন, একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান, যেখানে আমি কাজ করেছি, তারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে বেশ অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে শেয়ারবাজার রমরমা হয়ে যায়। তবে এবার যেন মূল্যস্ফীতি ততটা বেড়ে না যায়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
×