ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয় বাংলা

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

জয় বাংলা

জয় বাংলা বাংলাদেশের সুমহান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। অমল ধবল স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিয় অমোঘ বাণী, যা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনুরণন তোলে প্রত্যেক বাঙালীর হৃদয় মন ও মননে। যতদিন বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন পর্যন্ত থাকবে জয় বাংলা স্লোগান। সত্যি বলতে কি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের অগ্নিঝরা ভাষণের পর পরই প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুঘণ্টা বেজে যায় দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বিভক্ত তথাকথিত পাকিস্তানের। আর এর চূড়ান্ত সূচনা ঘটে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও বর্বর সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালী জাতির ওপর অকস্মাত ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচার গণহত্যার মাধ্যমে। অতঃপর অসহায় নিরুপায় বাঙালী নিতান্ত বাধ্য হয়ে দেশ স্বাধীন করার দৃঢ়সংকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। এ সময়ে হাতে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের পাশাপাশি মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে জয় বাংলা ধ্বনি। সশস্ত্র সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের এই অনিবার্য ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে লক্ষ কোটি কণ্ঠে, আকাশে-বাতাসে চরাচরে এবং অচিরেই বিশ্বব্যাপী। যে কারণে মাত্র নয় মাসের সম্মুখ সংগ্রাম ও যুদ্ধে শক্তিশালী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত ও পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সমর্থ ও সক্ষম হয় বাঙালী জাতি। লাভ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব। অনিবার্য স্থান করে নেয় বৈশ্বিক মানচিত্রে। তবে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, এই জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিষ্ঠুর-নৃশসংভাবে হত্যাযজ্ঞের পর সামরিক স্বৈরশাসক ও একনায়ক খুনী জিয়া-এরশাদ আমলে। যা হোক, দীর্ঘদিন পরে হলেও ইতিহাস তার নিজস্ব নিয়মে ফিরে এসেছে স্বমহিমায়। ঠাঁই করে নিয়েছে জয় বাংলা স্লোগান বাঙালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যে। তবে এর জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হলো উচ্চ আদালতের রায়ের, এই যা আক্ষেপ। যা হোক, এখন থেকে রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠান-উৎসবে বাধ্যতামূলক হচ্ছে জয় বাংলা স্লোগান। এখন থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বস্তরে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জয় বাংলা স্লোগান দিতে ও বলতে হবে। প্রশ্ন হলো, অন্য সব অনুষ্ঠানেও কেন নয়, খেলাধুলা, বিনোদন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে! স্বীকার করতে হবে যে, জয় বাংলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্লোগান। বাঙালীর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অমিয় বাণী। বাংলাদেশের সংবিধানে ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষা বাংলা আছে, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, জাতীয় প্রতীক আছে। কিন্তু কোন জাতীয় স্লোগান নেই। অতঃপর আসুন, সবাই উচ্চকণ্ঠে সমস্বরে বলি, জয় বাংলা। এর মাধ্যমে যে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আরও শাণিত ও অমোঘ হবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির চিরকালের গর্ব এবং অহঙ্কার। এর সঙ্গে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের বিষয়টিও অঙ্গাঙ্গি ও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হাজার হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিতে পরিপুষ্ট ও সমৃদ্ধ বাঙালী জাতি তার নিজস্ব ভূখ-, স্বাধীনতা, স্বকীয়তা ও স্বাধিকার খুঁজে পেয়েছে ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে। তবে মনে রাখতে হবে যে, বাঙালীর এই সব সংগ্রাম কেবল যুদ্ধের ময়দানেই অর্জিত হয়নি বরং এ ক্ষেত্রে বাঙালী জাতির অনিবার্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে তার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-চিত্রকলাসহ অন্যান্য মাধ্যমেও। উদাহরণত অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট অমর একুশে সাহিত্য সম্ভারের কথা উল্লেখ করা যায়। অনুরূপ হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করেও। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল সৃজনশীল গল্প ও কবিতা-নাটক-সঙ্গীত রম্য রচনাসহ অগণিত আখ্যানের আধার, স্বভাবতই যা অনুপ্রাণিত করেছিল মাঠ পর্যায়ে যুদ্ধরত অগণিত মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনগণকে। মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য ও সার্থকতা নিহিত সেখানেই। জয় বাংলা।
×