ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নয়নে কাজ করতে প্রস্তুত হোন

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নয়নে কাজ করতে প্রস্তুত হোন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের উন্নয়নে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হতে জনপ্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বিডিনিউজের। নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার আবেদন থাকবে, বাংলাদেশ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যায়। ভবিষ্যতে আর যেন কাউকে মুক্তিযোদ্ধা, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এই কথা বলতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে না হয়। দেশের উন্নয়নে কাজ করার জন্য জনপ্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে যে কোন কাজে সততাটা কিন্তু সব থেকে বড় শক্তি। সরকারের সততার দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের তোলা দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, সেটা তারা (বিশ্বব্যাংক) করেছিল আমাদেরই নিজস্ব কিছু লোকের প্ররোচনায়। যারা এই প্ররোচনা দিয়েছিল তারা সবচেয়ে বেশি লাভবান এবং সুযোগ পেয়েছিল আমার হাত দিয়ে। এই প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনুসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোনের ব্যবসাটাও আমার দেয়া। গ্রামীণ ব্যাংক যখন প্রথম করে সেই ৮৫ সালে। ৮৬ সাল থেকে আমার সঙ্গে সাক্ষাত। আমি এটার উপর নিজেই প্রচার করেছি ক্ষুদ্র ঋণের যে ধারণা। জাতিসংঘে তার জন্য রেজুলেশন আনা সেটাও আমি যখন ৯৬ সালে ক্ষমতায়। সেখানে আমাদের সরকারই সেটা উপস্থাপন করে পাস করিয়েছি। অথচ সেই লোকই গেল পদ্মা সেতু বন্ধ করতে। কেন? ব্যাংকের একটা এমডির পদের জন্য। আমার প্রশ্ন ছিল একটা নোবেল প্রাইজ পাওয়া লোক একটা ব্যাংকের এমডির পদের জন্য লালায়িত কেন? শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বনামধন্য দুই পত্রিকার এডিটর তারা গিয়ে আমেরিকার কাছে ধরণা এবং যেহেতু হিলারি ক্লিনটনের বন্ধু... কাজেই সেখানে গিয়ে ধরণা দেয়া হলো এবং পদ্মা সেতুতে টাকা বন্ধ করে বলল দুর্নীতি। আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। যে প্রমাণ করতে হবে যে দুর্নীতি হয়েছে। ওই সময় তার পরিবারের সদস্যদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে তিনবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট ডেকে ধমকিয়েছে এবং ভয় দেখিয়েছে। সে বলেছে, আমার মা কখনও মিথ্যা বলে না এবং এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি। ... বলে... তোমার বিরুদ্ধে তদন্ত করব। বলে ... আমার বিরুদ্ধে আপনারা তদন্ত করতে পারেন, যেভাবে পারেন। আপনারা যা খুশি করতে পারেন। আজকে সততার সঙ্গে ছিলাম বলেই এটা মোকাবেলা করতে পেরেছি। শেষ পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়েছে এবং কানাডার কোর্ট বাধ্য হয়েছে রায় দিতে যে সম্পূর্ণ অভিযোগ ভুয়া, মিথ্যা। এটা কিছুই না। সততা নিয়ে না চললে কখনও এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারতাম না। শেখ হাসিনা বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশই পরিবার হিসেবে নিয়ে আমি দেশের উন্নয়নটা করতে চাচ্ছি।’ সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে নবীন কর্মকর্তাদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা কর্মচারীকে এটা চিন্তা করতে হবে, আমরা দেশের মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম। নিজের পরিবারের প্রতি যেমন একটা দায়িত্ববোধ থাকবে ঠিক সেইভাবে নিজের দেশের মানুষের জন্যও সেই দায়িত্ববোধটা থাকতে হবে। সেই চিন্তা নিয়েই স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবেন সেটাই আমরা চাই। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ৯০ শতাংশ ব্যয় নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের দেয়া অর্থ যেন যথাযথভাবে দেশের উন্নয়নে ব্যয় হয়। উন্নয়নটা যেন পরিকল্পিতভাবে হয়। মিতব্যয়ীতার সঙ্গে আমরা আরও উন্নয়ন যাতে করতে পারি সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্ত স্থাপনে উৎসাহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন কর্মকর্তা ইচ্ছা করলে একটি জেলা-উপজেলা বা ইউনিয়নের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। সেই ধরনের ইনোভেটিভ আইডিয়া, পরিকল্পনা, চিন্তা-চেতনা থাকতে হবে; দেশের প্রতি ভালবাসা, কর্তব্যবোধ থাকতে হবে।’
×