ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যস্ততম সড়কেও উন্মুক্ত ময়লার কন্টেনার ;###;দূষণে বিষাক্ত নগরীর বাতাস ;###;বাড়ছে রোগব্যাধি ;###;রাতে প্রতিটি বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের পরামর্শ ;###;কঠোর আইন প্রয়োগের তাগিদ

এ কেমন ॥ ক্লিন ঢাকা

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

এ কেমন ॥ ক্লিন ঢাকা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত নিউ ইস্কাটন। আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে পুরোটাই এখন ঘনবসতি। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গেটের সামনে পাঁচটি ময়লার কন্টেনার রাখা। এলাকার সব ময়লা আবর্জনা ভ্যানে করে রাস্তায় রাখা হয়। তারপর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তা ডাস্টবিনে তোলেন। এমন দৃশ্য রাত দিন সব সময়। ময়লার দুর্গন্ধে পথ চলা দায়। নাক বন্ধ করে পথ চলেন এলাকাবাসী। পথচারীরাও চরম বিরক্ত। প্রশ্ন হলো ক্লিন সিটি করার ঘোষণা যখন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে তখন রাস্তায় রাস্তায় এমন দৃশ্য কেন। যখন উন্নত শহরের আদলে রাজধানী ঢাকা গড়ে তোলার স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু তখন উন্মুক্ত অবস্থায় থাকা ময়লার কন্টেনার কি বার্তা দেয়। এত গেল ইস্কাটনের গল্প। এবার মালিবাগ রেল গেট এলাকার গল্পটি আরও ভিন্ন। সেখানেও মূল সড়কে রাখা হয়েছে ময়লা। এর মধ্যে দিনভর তা তোলা হয় কন্টেনারগুলোতে। এর দু’পাশে দুটি কাঁচা বাজার। প্রতিদিন এই দুই বাজারে অন্তত ৩০টি পশু জবাই হচ্ছে। যার উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলা হচ্ছে বিনের নিচে অর্থাৎ সড়কে। এর বাইরে সাধারণ বর্জ্য তো রয়েছেই। আবাসিক বাণিজ্যিক মিলিয়ে এই এলাকা। ব্যস্থতম সড়কে রাতদিন পথচারীদের ভিড়। যানজট যেন লেগেই থাকে। সব মিলিয়ে এখানকার ময়লা পুরো এলাকার পরিবেশ দূষিত করে তুলেছে। যারা প্রতিদিন এখানে বর্জ্য ফেলছেন তারাও গন্ধে অতিষ্ঠ। প্রতিদিনের বর্জ্য নিয়মিত না নেয়ার কারণে পচা গলা গন্ধ আরও প্রকট হয়। সাধারণ দোকানিরা বলছেন, অনেক সময় মাস্ক কিংবা নাকে রুমাল দিয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না। মৌচাক এলাকায় সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের সামনের ব্যস্ততম সড়কে যেন ডাস্টবিনের মহড়া। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১২ বছরের বেশি সময় ধরে এই এলাকার ডাস্টবিনগুলো যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনের সামনের অংশ রাস্তায়। পাশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। পেছনে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবাসিক এলাকা। আবাসিক বাণিজ্যিক মিলিয়ে রাতদিন ময়লার বিশাল কর্মযজ্ঞ চলে এই এলাকায়। রাত ১০টার সময়ও এখানে কন্টেনারে ময়লা ওঠানামার কাজ হয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানিয়েছেন, এলাকাবাসী এখানে সব সময় ময়লা ফেলছেন। তাই আমাদের রাতদিন ঘাটতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি সঙ্কটের কারণে সব সময় ময়লাবাহী ট্রাক আসে না। তবে রাস্তার ওপরে থাকা সব আবর্জনা আমরা কন্টেনারে তুলে রাখি। যেন সবখানে না ছড়াতে পারে। রাজধানীর উত্তর সিটির বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে সড়কে ডাস্টবিন রাখার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। দূষণে জর্জরিত নগরীকে যা আরও বিষিয়ে তুলছে। গ্রীন সিটি, স্মার্ট সিটি বা ক্লিন সিটি যাই বলা হোক না কেন কোন উন্নত শহর ব্যবস্থাপনায় এ রকম চিত্র নেই। নগর বিশেষজ্ঞসহ সাধারণ মানুষ বলছেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে এ রকম দৃশ্য রাস্তায় দেখা যায়। তাছাড়া পরিকল্পনার অভাব তো রয়েছেই। রাতের বেলায় নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ির সামনে ময়লা রাখার কথা। তা সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে তুলে নেয়া হলেই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটবে। উন্নত শহরগুলোতে এই ব্যবস্থা কার্যকর। কেউ এই নিয়ম না মানলে জেল জরিমানার পর্যন্ত বিধান রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ময়লা আবর্জনা ও দুর্গন্ধের কারণে মানবদেহে নানা রকম রোগব্যাধি আক্রমণ করতে পারে। বর্জ্যরে দূষণ থকে পেটের পীড়া, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট, আলসার, গ্যাস্ট্রিক এমনকি লিভার ও কিডনি নষ্ট হতে পারে। হেলথ এ্যান্ড হোপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, নানা রকম দূষণের কবলে ঢাকার মানুষ। এর মধ্যে বর্জ্যরে দুর্গন্ধ একটা বড় সমস্যা। এই সমস্যা নগরবাসীর জন্য নতুন না হলেও সময়ের পালাবদলে এখন কমার কথা। দৃশ্যত তা কমছে না। সড়কে ময়লাযুক্ত কন্টেনারগুলোও উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়। ফলে মানুষ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যে দেশে বঙ্গবন্ধুর জন্ম সে দেশের রাজধানী এত অপরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না। তিনি বলেন, আমরা একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে এসেছি। আমাদের কাজ করতে হবে। মানুষ ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলে, এটা হতে দেয়া যায় না। প্রতিটি দোকানে ডিএনসিসি নির্ধারিত ডিজাইনের ওয়েস্ট বিন এবং দুটি করে ফুল বা গাছের চারা রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে, অন্যথায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না। অন্যান্য শহর কেমন ॥ ইতালির ভেনিসে কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করছেন বাংলাদেশের সোহেব মিয়া। তিনি বলেন, ইতালিতে বিভিন্ন শহরে ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলা হয় না। এটি একদিকে যেমন আইনত দ-নীয়, অপরদিকে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলা অধিবাসীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখানে বসবাসরত প্রবাসীরাও এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তিনি জানান, ময়লা ফেলার জন্য রাস্তার পাশে তিন রঙের তিনটি ডাস্টবিন রয়েছে। একটি গৃহস্থালি ময়লা, একটিতে প্লাস্টিক ও কাচ জাতীয় ময়লা ও অপরটিতে কাপড় জাতীয় ময়লা ফেলা হয়। সবাই নিজ দায়িত্বে নির্দিষ্টস্থানে ময়লা রেখে যান। কেউ রাস্তায় কোন ময়লা ফেলেন না। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বড় শহর ইরানের রাজধানী তেহরান। তেহরানের অধিকাংশ অংশই ছোট ছোট পাহাড়ের ওপর। ৭৩০ বর্গকিলোমিটারের এই শহর এক সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত। যার জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। কখনও তেহরান শহরে বৃষ্টির পানি জমেছে এমন নজির এখনও দৃষ্টিপাত হয়নি। এছাড়া শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও এতটা উন্নত যে দুর্গন্ধযুক্ত পানি কখনও নগরবাসীকে দেখতে হয় না। ঘরের ময়লা আবর্জনা তেহরানবাসীর রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হয়। রাত ১২টার পর সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি সেসব স্থান থেকে ময়লা ভোরের আগেই অপসারণ করে। যদি কোন নাগরিক ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে না রাখে তাহলে তাকে গুনতে হয় বড় জরিমানা। আবার সিটি কর্পোরেশনও যদি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে তাহলে জেল ও চাকরিচ্যুত হতে হয়। তাছাড়া তেহরানে প্রতিটি রাস্তা বা গলির পাশে কয়েক বাড়ি পর পর ময়লা ফেলার জন্য প্লাস্টিকের বড় ডাস্টবিন রয়েছে। সবাই এসব ডাস্টবিনে ময়লা ফেলেন। উন্নত প্রায় সব দেশে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ময়লা ফেলা হলেও বাংলাদেশে যেখানে-সেখানে মানুষ ময়লা ফেলে কেন? আসলে অভাবটা কিসের শিক্ষার নাকি সচেতনতার? এসব নিয়ে কড়াকড়ি আইন কেন হয় না। এমনটাই প্রশ্ন গুটি কয়েক সচেতন নাগরিকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, কেউ কষ্ট করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলে না। এটা অসচেতনতার বিষয়। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০টি করে ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ৫ হাজার ৭০০টি ছোট আকারের ডাস্টবিন বসানো হয়েছিল। যাতে ময়লা মিনি ডাস্টবিনে ফেললে সড়কগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। কিন্তু বেশির ভাগ ডাস্টবিন চুরি হয়ে গেল। বাসা-বাড়ির ময়লা এনে ডাস্টবিনে ফেলে ছোট বিনগুলো নষ্ট করা হলো। নগরবাসীদের সহযোগিতা ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মানদ- ॥ সর্বশেষ জাতিসংঘের হ্যাবিটেট প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই শহরে এখন প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪ হাজার ৫০০ মানুষ বাস করে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে ইউএন হ্যাবিটেট। ঘনবসতির দিক দিয়ে এক নম্বর অবস্থানে আছে ঢাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের মুম্বাই। তৃতীয় অবস্থানে কলম্বিয়ার শহর মেডেলিন এবং চতুর্থ অবস্থানে ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলা। বাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বর্তমানে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ বাস করছে। এই চিত্র নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজধানী শহর ঢাকা। জনসংখ্যার ভারে কার্যত ঢাকা এখন নুইয়ে পড়ছে। উপরন্তু জনসংখ্যার চাপ ক্রমাগত বাড়ছেই। কিন্তু সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। সত্যি বলতে সে ধরনের অবস্থায়ও নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপ সংস্থার মতে, বিশ্বের বসবাসের উপযোগিতার বিবেচনায় সবচেয়ে অযোগ্য শহর ঢাকা। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য সুবিধা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামোসহ ৩০টি মানদ-ের বিবেচনায় ঢাকার স্থান তলানিতে। প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকার অবস্থা আর কত খারাপ হলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো জাকার্তা থেকে তার দেশের রাজধানী সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বলেছেন, জনবহুল জাকার্তা নগরীর নানা সমস্যার কথা বিবেচনা করে প্রেসিডেন্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্বের আরও অনেক ছোট বড় দেশ তাদের রাজধানী শহর সরিয়ে নিয়েছে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা নতুন কোন শহরে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, মিয়ানমার বা নাইজিরিয়ার মতো দেশ। ইন্দোনেশিয়া যদি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, সেই তালিকায় এখন তাদের নামও যুক্ত হবে। রাজধানী ঢাকা নগরীর এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, একদিন একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক রাজধানী বিকল্প কোন শহরে সরিয়ে নেয়ার চিন্তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ঢাকা নগরীর অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিকাশের চিন্তার সঙ্গে এর অবস্থা অসঙ্গতিপূর্ণ হয়ে গেছে। ঢাকার পরিবহন জট, আবাসন এবং বিভিন্ন সামাজিক সেবা, তার কোনটির অবস্থাই ভাল নয়। বিশ্বের অনেক দেশে যখন এ রকম পরিস্থিতি হয়েছে, তারা উদ্ভাবনী উপায়ে এর সমাধানের চেষ্টা করেছে। এর একটি সমাধান হচ্ছে দুই কেন্দ্রিক দেশ। একটি হবে প্রশাসনিক কেন্দ্র, একটি হবে বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ভারতের ক্ষেত্রে যেমন দিল্লী এবং মুম্বাই, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমন করাচী এবং ইসলামাবাদ। ইউরোপের অনেক দেশেই প্রশাসনিক রাজধানী যেখানে, সেখানে কোন বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় না। লন্ডন একটি ব্যতিক্রম। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান প্ল্যানিংয়ের অধ্যাপক ড. মুসলেহউদ্দীন আহমেদ বলছেন, একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে তিনি কখনই একটি শহরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে রাজি নন, কারণ নগরকে পুনরুজ্জীবিত করার অনেক উপায় আছে। নগরীর ২১৮ কিলোমিটার ফুটপাথের মধ্যে ১০৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটারই দখলে। এর মধ্যে ২০ ভাগ হকার, ২৫ ভাগ দোকান মালিক, আর ২ ভাগ রাজনৈতিক দলের অফিসের দখলে। পাবলিক টয়লেট ও যাত্রীছাউনি ফুটপাথের ১২ শতাংশজুড়ে। সিটি কর্পোরেশনের বেশিরভাগ ডাস্টবিনও ফুটপাথ ও রাস্তায়। পথচারীদের সহজ ও মুক্ত চলাচলে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও, সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। নগরবিদদের মতে, শুধু হকার সরিয়ে ফুটপাথ দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়। দরকার সঠিক পরিকল্পনা। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, অতিরিক্ত জায়গা বের হলে আমরা যদি হকারদের সঙ্গে একটি সহাবস্থানের ব্যবস্থা করতে পারতাম তাহলে অন্যান্য দেশের মতো আমরাও পথচারী বান্ধব এবং হকার সমৃদ্ধ নগর তৈরি করতে পারতাম। এদিকে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আদলে খুলনা সিটি কর্পোরেশন কেসিসি দিনের পরিবর্তে রাতে নগরীর বর্জ্য অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য কেসিসি অস্থায়ী ভিত্তিতে ৩শ’ পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকায়ও রাতে ময়লা ফেলা হয়। তবে রাজধানী ঢাকায় কেন বাড়ি বাড়ি থেকে রাতের বেলায় অন্তত আবাসিক বর্জ্য অপসারণ করা যাবে না। নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘নগরীতে যখন যথোপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবেন তখনই আপনি প্রত্যাশা করতে পারেন যে, জনগণকে বললে জনগণ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবে না। উপযুক্ত পরিবেশ, ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশনের যে একটি নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট থাকার কথা, সেটাও এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিতভাবে পাওয়া যায়নি। নগরবাসীর যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলার পেছনে ব্যবস্থাপনার দায় আছে বলেও মনে করেন এই পরিবেশ আন্দোলনকারী। তিনি বলেন, ‘আপনি কি মনে করেন সিঙ্গাপুরের মানুষরা ফেরেশতা? তারা বেহেশত থেকে আসছে? তারা আমাদের মতো মানুষ। আমার দেশের লোকেরা যখন সিঙ্গাপুরে যায়, তখন তারা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে না। আইনের প্রয়োগটাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
×