ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:১১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বিজয়ের আনন্দটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। আগামী সোমবার ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালী পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েছিল। সেই আনন্দ, সেই আবেগ যেন ফিরে ফিরে আসছে। সারা দেশের মতো শহর ঢাকায়ও চলছে বিজয় দিবসের প্রস্তুতি। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে উৎসব অনুষ্ঠান। গানে, কবিতায়, নৃত্যায়োজনে একাত্তরের ইতিহাস স্মরণ করার চেষ্টা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে দেখা গেল, উৎসবমুখর নন্দন মঞ্চ। একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে গানে গানে বলা হচ্ছে দেশবোধের কথা। যারা অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিল বলে দেশ পাওয়া, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন শিল্পীরা। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।’ চমৎকার আয়োজন আজ শুক্রবার পর্যন্ত চলবে। এদিকে, বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসব। ঢাকার সবচেয়ে বড় বিজয় উৎসব বলা চলে এটিকে। কারণ, একই সঙ্গে উৎসব চলবে ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে। শেষ হবে ১৬ ডিসেম্বর। সমাপনী দিনে জোটের পক্ষ থেকে বের করা হবে বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা। তারও আগে থেকে বিজয় উৎসব চলছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। শুরু হয়েছিল গত মঙ্গলবার। এখনও দারুণ জমজমাট। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের উৎসবে যোগ দিচ্ছে। তাদের অংশগ্রহণে চলছে নাচ, গান, কবিতা। একাত্তরের জাগরণী সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আজ যেন নতুন ব্যঞ্জনা নিয়ে সামনে আসে। এসবের বাইরে ঢাকার প্রতি প্রান্তে উড়ছে জাতীয় পতাকা। বাড়িতে গাড়িতে লাল সবুজের দোলা। বিজয়ের এই নিশান গর্বের সঙ্গে উর্ধে তুলে ধরছে প্রজন্ম। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের পতাকা নিয়ে সে কী উচ্ছ্বাস! বাইসাইকেলে পতাকা স্থাপন করছে তারা। কপালে বাঁধছে। দেখে কী যে ভাল লাগে! একই সময় সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন ভবনের সামনের দেয়াল দীর্ঘ পতাকা দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। সাজিয়ে নেয়া হচ্ছে লাল সবুজ রং দিয়ে। আলোকসজ্জার কাজ করতেও দেখা যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না নতুন পোশাক কেনা। লাল সবুজ রঙের পোশাকে দেশীয় বুটিক-বাটিকের দোকানগুলো পূর্ণ এখন। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতা। এমনকি বিদেশী ব্র্যান্ডের দোকানেও লাল সবুজ রঙের পোশাক দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎসবটা যেন শুরু হয়ে গেছে। অবশ্য এ ধরনের উদ্যাপনের পাশাপাশি ইতিহাসের আরেকটু গভীরে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিদগ্ধজনরা। তারা বলছেন, আনুষ্ঠানিকতা থাকবেই। বিজয়ের আনন্দ সবার। কিন্তু একাত্তরে যে যুদ্ধে বিজয় এসেছিল, সে যুদ্ধটাকে ভাল করে জানা চাই। নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এক মুক্তিযোদ্ধা বলছিলেন, আজ মুক্তিযুদ্ধ কথাটা ঘন ঘন ব্যবহৃত হতে দেখি। এখানে ওখানে সব সময় উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কোন কথা নেই। মুক্তিযুদ্ধ আছে। মুক্তিযোদ্ধা নেই। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করা বীরদের কাছে ইতিহাস শুনতে কেউ যায় না। বিশেষ করে তৃণমূলের মুক্তিযোদ্ধারা মারাত্মক অবহেলিত। চিকিৎসক তাদের কারও সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলছেন। কারও মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে কার্পণ্য করছে প্রশাসন। তার মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের এমন অবহেলা-অসম্মান করলে ভবিষ্যতে দেশের জন্য জীবন দিতে কেউ আর এগিয়ে আসবে না। আমরা কি তা-ই চাই? বিজয় দিবসের প্রাক্কালে নিশ্চয়ই এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা কি উত্তর খুঁজব না?
×