ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উদ্দেশ্য সরকারের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত ॥ বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস

বরিশালে কোস্ট গার্ডের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে ভবন নির্মাণের হিড়িক

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

 বরিশালে কোস্ট গার্ডের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে ভবন নির্মাণের হিড়িক

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ কোস্টগার্ডের জন্য বরিশালে প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণের খবরেই সরকারের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহল। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত জমিতে প্ল্যান বহির্ভূতভাবে যেনতেনভাবে দায়সারা ভবন নির্মাণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন কতিপয় ব্যক্তি। স্থানীয়রা জানায়, জেলা প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণকৃত জমিতে কতিপয় প্রভাবশালী দায়সারা ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এজন্য তারা (স্থানীয় বাসিন্দা) বিকল্প স্থান অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন। জেলা প্রশাসক ও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা বলেন, বিষয়টি তারা শুনেছেন। ফলে তারা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কোস্টগার্ডের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য তাদের চাহিদানুযায়ী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য বরিশালের কর্ণকাঠিতে জমি নির্ধারণ করা হয়। অধিগ্রহণ হলে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ জমির মালিক জমির মৌজা মূল্যের তিনগুণ এবং স্থাপনা বাবদ দ্বিগুণ পাওয়ার কথা। তারই সূত্র ধরে অধিগ্রহণ হওয়ার পূর্বাভাস পেয়েই স্থানীয় প্রভাবশালী সুরুজ মোল্লা ও তার সহযোগীরা ওই স্থানে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। প্ল্যান বহির্ভূত দায়সারাভাবে নির্মাণ করা এমন ভবনের সংখ্যা এখন সেখানে ২০টি। যা অধিগ্রহণ করতে গেলে সরকারকে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা বেশি দিতে হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সুরুজ মোল্লা, জুয়েল হাওলাদার, ওমর ফারুক, রেজাউল করিম ওই এলাকায় চারতলার ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া সোহাগ চৌকিদার, জাকির মৃধা, পারভেজ হাওলাদার, আলেয়া পারভিন, তানভির হোসেন, সোহেল হাওলাদার, মোশাররফ হোসেন খান, রেজাউল করিম, এমদাদুল হকসহ অন্যরা দুইতলা এবং একতলা ভবন নির্মাণ করেছেন অধিগ্রহণ হওয়ার সম্ভাব্য স্থানে। ভবন নির্মাণকারীরা বলছেন, তারা সেখানে থাকার জন্যই এই ভবনগুলো নির্মাণ করেছেন। প্ল্যান আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তারা প্ল্যান নিয়েছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণের খবর পেয়েই উল্লেখিতরা অধিক টাকা পাওয়ার আশায় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। তারা আরও জানান, জেলা প্রশাসকের অফিস থেকেই এরা অধিগ্রহণ হওয়ার খবর পেয়ে সুযোগটি কাজে লাগাতে যেনতেনভাবে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য ভবন বাবদ দ্বিগুণ অর্থ আদায় করা। স্থানীয়দের তথ্যমতে, গণপূর্ত বিভাগ তাদের নিয়ম অনুযায়ী ভবনের যে মূল্য নির্ধারণ করে তা সাধারণত প্রকৃত মূল্যের অনেক বেশি হয়ে থাকে। ফলে ভবনের দ্বিগুণ দাম পাওয়ার এই সুযোগটি কাজে লাগাতে ওইসব প্রভাবশালীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সুরুজ মোল্লা ও তার সহযোগীরা এর আগেও বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় ও ফায়ার সার্ভিসের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও একই পন্থায় সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। এ বিষয়ে প্রভাবশালী সুরুজ মোল্লার বক্তব্য আনতে গেলে তিনি সংবাদকর্মীদের আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন। অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদ কিভাবে ভবনের প্ল্যান দিয়েছেন সে বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ প্ল্যান দিতে যাবে কেন? প্ল্যান দেয়ার কাজ তো ইউনিয়ন পরিষদের নয়। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কমান্ডার লে. মাহবুবুল আলম সাকিল বলেন, প্রভাবশালীদের অপতৎপরতার বিষয়টি আমরা শুনেছি। তাই বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও আমরা ভাবছি। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, কোস্টগার্ডের অর্থ সরকারী অর্থ। কোন অবস্থাতেই এই অর্থ লোপাট করতে দেয়া হবেনা। তিনি আরও বলেন, এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×