ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন বৈষম্যমূলক ॥ জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ১২:৪১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

 ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন বৈষম্যমূলক ॥ জাতিসংঘ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতে পাস হওয়ায় নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনকে মুসলমানদের জন্য ‘বৈষম্যমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর। ওই আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনটি মৌলিক চরিত্রের দিক দিয়েই বৈষম্যমূলক এবং এ বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে এই আইনের বৈধতা ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং আমাদের আশা মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে ভারতের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে আদালত তা বিবেচনায় নিয়ে নাগরিকত্ব আইনটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’ খবর বিডিনিউজের। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রস্তাব গত ১০ ডিসেম্বর ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয়। পরে তা উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও পাস হয় এবং বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে তা আইনে পরিণত হয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া হিন্দু, খ্রীস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা রয়েছে এই আইনে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা ছিল, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোন ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। সংশোধনে ওই সময় কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। তবে তাতে বাইরে থেকে আসা মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। ওই আইনের প্রতিবাদে গত দুদিন ধরে সহিংস বিক্ষোভ চলছে ভারতের বিভিন্ন অংশে। বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুজন। শুক্রবার সংঘাত ছড়িয়েছে রাজধানী দিল্লীতেও। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বলছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেয়াই আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য। ওই তিন দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘিষ্ঠ নয়, ফলে তাদের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয় না। জেরেমি লরেন্স বলেন, ওই আইনে ছয়টি ধর্মের মানুষের মতো মুসলমান শরণার্থীদের জন্য একই রকম সুরক্ষার কথা বলা হয়নি। আর এর মধ্য দিয়ে সংবিধানে বর্ণিত সবার জন্য সমতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এই আইনের বৈধতা ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে পর্যালোচনা হবে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি ভারতের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, আদালত তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করবে।’ শিলংয়ে বিক্ষোভে লাঠিপেটা, দিল্লীতে সংঘর্ষ ॥ এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএবি) বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন শহরে তুমুল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মধ্যে উত্তরপূর্বের রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ওপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে। শুক্রবার দিল্লীতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানায় এনডিটিভি। বৃহস্পতিবার রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া অসম এখনও অশান্ত রয়েছে। বিতর্কিত এ সিএবি আইনের বিরুদ্ধে উত্তাল ভারতের উত্তরপূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে কর্তৃপক্ষ মেঘালয়ে ১২ ঘণ্টার জন্য কার্ফু তুলে নিলে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা রাজ্য ভবনের কাছে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়লে সংঘর্ষ বেঁধে যায় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। মোবাইলে তোলা ভিডিওতে পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসে আহত কয়েকজনকে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। সিএবির প্রতিবাদে শুক্রবার দিল্লীতে পার্লামেন্ট ভবন অভিমুখে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে তারা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে বাইরে বের হতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে গণমাধ্যমকর্মীরাও আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ পরে অর্ধশতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটকের খবর নিশ্চিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় বড় জমায়েতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার অসমে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত দুজনের নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। গণআন্দোলনের ডাক মমতার ॥ ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)’র বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছেন দেশটির পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসহ সাধারণ মানুষকে আগামী সোমবার থেকে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মিছিলে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুর একটায় আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু হয়ে শেষ হবে জোড়াসাঁকোতে। মঙ্গলবার মিছিল শুরু হবে দক্ষিণ কলকাতায় যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে এবং শেষ হবে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে গিয়ে। বুধবার জেলায় জালায় হবে মিছিল। শুক্রবার দিঘায় মমতা বলেন, কোন এনআরসি নয়, কোন ক্যাব নয়। আইন পাস হলেও আমাদের সরকার তা কার্যকর করবে না। সবাইকে বলছি, ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সবাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করুন। সব রাজ্যে গণআন্দোলন করুন। বাংলাতেও গণআন্দোলন গড়ে তুলুন। মমতার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রীও। যে কোন মূল্যে নাগরিকত্ব বিল তাদের রাজ্যে আটকানো হবে বলে জানিয়েছেন তারা। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমারিন্দর সিং বলেছেন, এই বিল অসাংবিধানিক। পঞ্জাবে এই বিল আটকাতে প্রয়োজনে আইন পাস করা হবে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও বলেছেন, সংবিধানের দেয়া অধিকার খর্বকারী নাগরিত্ব সংশোধনী বিল কোন মতেই কেরল সরকার কার্যকর করতে দেবে না।
×