ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর অনশন স্থগিত পাটকল শ্রমিকদের

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর অনশন স্থগিত পাটকল শ্রমিকদের

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন তিনদিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শনিবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও উপস্থিতির হার ছিল কম। আমরণ কর্মসূচী চলাকালে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় শ্রমিকদের উপস্থিতির হার কম বলে জানিয়েছে শ্রমিক নেতা ও মিল কর্তৃপক্ষ। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী খুলনা-৩ আসনের (খালিশপুর ও দৌলতপুর) সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণা করেছে শ্রমিকরা। শুক্রবার রাতে খুলনা শ্রম অধিদফতরে আয়োজিত বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানালে শ্রমিক নেতারা সম্মতি দেন। তারা বলেন, সাধারণ শ্রমিকদের কাছে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এ প্রস্তাব দেয়া হবে। তারা যদি মেনে নেয় তাহলেই শুধু এটি বাস্তবায়ন হতে পারে। মতবিনিময় সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই পাটকল এবং শ্রমিকদের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুলনার বন্ধ হওয়া পাটকলগুলো চালু হয়েছে। এ সরকারের আমলে মজুরি কমিশন ২০১৫ পাস হয়েছে এবং এ সরকারই তা বাস্তবায়ন করবে। শ্রমিকদের চলমান অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার জন্য তিনি শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান। শ্রমিকদের স্বার্থে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করবেন। এছাড়া জাতীয় মজুরি কমিশন ২০১৫ বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আগামী ১৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেল তিনটায় বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, ১৫ ডিসেম্বরের সভায় দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১৭ ডিসেম্বর থেকে আবারও অনশন কর্মসূচী পালন করা হবে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ নেতা মোঃ মুরাদ হোসেন জানান, শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরণ অনশন কর্মসূচী আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার কতিপয় শ্রমিক কাজে যোগ দিলেও পরে আবার তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। তিনি জানান, শ্রমিকরা দুপুর ২টায় মিলগেটে সমবেত হয়ে পরে বিকেল তিনটায় কাজে যোগ দিয়েছে। জেজেআই (যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রি) প্রকল্প প্রধান মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, এই মিলের শ্রমিকেরা অধিকাংশই অনশন কর্মসূচীতে যোগ দেয়নি। কিছুসংখ্যক শ্রমিক যোগ দিলেও শনিবার থেকে তারা কাজে যোগ দিয়েছে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান নজরুল ইসলাম খান বলেন, শ্রমিক নেতা ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে শ্রমিকরা কর্মসূচী স্থগিত ঘোষাণা করে। সে অনুযায়ী তারা সকালে কাজে আসলে সকাল সোয়া ৭টায় মিল চালু করা হয়। পরে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে বেলা ১১টার দিকে কাজ বন্ধ করে চলে যায়। পরে বিকেল তিনটার দিকে তারা কাজে যোগ দেয়। বিজেএমসি (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন) খুলনার আঞ্চলিক লিয়াজো অফিসার মোঃ বনিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, খুলনার নয় মিলের শ্রমিকেরা তাদের কর্মসূচী স্থগিত করেছে। শনিবার সকালে সব মিলেই কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তবে উপস্থিতির হার ছিল কম। অনেকেই বাড়ি চলে যাওয়া বা শারীর অসুস্থ থাকায় মিলে আসতে পারেনি। ধীরে ধীরে উপস্থিতি বাড়বে বলে জানান তিনি। উল্লেখ, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা বাস্তবায়ন দাবিতে ১০ ডিসেম্বর থেকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় পাটকলের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন শুরু হয়। এতে প্রায় অর্ধলাখ পাটকল শ্রমিক অংশ নেয়।
×