ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্ণফুলীর তলদেশ ফুঁড়ে এগোচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল অগ্রগতি ৫০ ভাগ

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১ জানুয়ারি ২০২০

কর্ণফুলীর তলদেশ ফুঁড়ে এগোচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল অগ্রগতি ৫০ ভাগ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্ণফুলীর তলদেশে স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ রচনা করছে দু’পাড়ের সেতুবন্ধন। বিদায়ী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে পর থেকে চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। বিশালাকৃতির বোরিং মেশিন শহরপ্রান্ত থেকে সুড়ঙ্গ কেটে অগ্রসর হচ্ছে দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারার দিকে। এরমধ্যেই শেষ হয়েছে সার্বিক প্রকল্পের ৫০ ভাগ কাজ। অগ্রগতি সন্তোষজনক হওয়ায় নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যেই বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প পাল্টে দেবে চট্টগ্রামের চেহারা। বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, বিদায়ী বছরে প্রকল্প কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ। টানেলের দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য হবে ২৪৫০ মিটার। এরমধ্যে একটি টিউবের ১২২০ মিটার খননকাজ এরমধ্যেই শেষ হয়েছে। বোরিংয়ের সঙ্গে সঙ্গেই স্থাপিত হয়ে যাচ্ছে রিং। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে টানেল নির্মাণের কাজ চলছে। সুড়ঙ্গ খননের পাশাপাশি দু’পাশের প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। নির্মিত হচ্ছে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে ওভারব্রিজ। তিনি জানান, টানেলের জন্য ৩৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আর কোন জটিলতা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। তবে এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্বপ্নের এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। টানেল নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প ঋণ হিসাবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ মিটার করে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি হচ্ছে। এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে একটি দৈত্যাকার বোরিং মেশিন। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এ টানেল নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) এবং কাফকো (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড) কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে। কর্ণফুলীর মধ্যভাগে বঙ্গবন্ধু টানেল যাবে ১৫০ ফুট গভীরে। দুটি টিউবের একটি দিয়ে যানবাহন যাবে এবং আরেকটি দিয়ে ফিরবে। প্রতিটি টিউব হবে দুই লেনের, অর্থাৎ দুই টিউব মিলে চার লেনের সুড়ঙ্গপথ তৈরি হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলের জন্য থাকবে সার্বক্ষণিক বিদ্যুত ব্যবস্থা। সে কারণে তৈরি করা হচ্ছে ৩৩ কেভির দুটি নিজস্ব সাবস্টেশন ও সঞ্চালন লাইন। জরুরী প্রয়োজনে যেন এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাওয়া যায় সে জন্য তিনটি স্থানে থাকবে সংযোগ ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু টানেল হবে বাংলাদেশের প্রথম ও দক্ষিণ এশিয়ার অত্যাধুনিক সুড়ঙ্গপথ। এ টানেলে সংযুক্ত হবে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড। মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন রোড প্রকল্পকে বিবেচনায় নিয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। দেশের পর্যটনের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান কক্সবাজারের দূরত্ব কমিয়ে দেবে বঙ্গবন্ধু টানেল। একদা স্বপ্ন থাকলেও তা এখন বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্নে চট্টগ্রাম। টানেল নির্মিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি যেমন সাধিত হবে, তেমনি বাড়বে সৌন্দর্য। কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামকে পরিণত করবে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউনে। দু’পাড়ের এ সেতুবন্ধনে দক্ষিণ চট্টগ্রামেও গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা।
×