ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ারবাজারে করুন দশা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৯ জানুয়ারি ২০২০

 শেয়ারবাজারে করুন দশা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ধারাবাহিক দরপতন থেকে যেনো কোনোভাবেই রেহাই পাচ্ছে না পুঁজিবাজার। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের পতনেই লেনদেন শেষ হয়েছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচক ও লেনদেন দুটোই কমেছে। সবমিলে শেয়ারবাজারে এখন করুণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে; যা গত ৩ বছর ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল এই সূচকের অবস্থান ছিল ৪ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯৪৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০৬ পয়েন্টে। দিনটিতে ডিএসইতে ৩০১ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা গত কার্যদিবস থেকে ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বেশি। বুধবারের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ডিএসইতে ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১২৬টির, কমেছে ১৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৩টির। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে। সিএসইতে টাকার অংকে ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এদিকে শেয়ারবাজারের করুণ দশার মধ্যে ২০১৩-১৯ সালের মধ্যে আইপিও অথবা রাইট শেয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি ৮৫৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ৬৪১ কোটি ৯৩ লাখ, ২০১৮ সালে ৬৫৫ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৭ সালে ১৪৪১ কোটি ৩৯ লাখ, ২০১৬ সালে ৯৫০ কোটি ১২ লাখ, ২০১৫ সালে ৬৭৫ কোটি ৭২ লাখ, ২০১৪ সালে ৩২৬৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং ২০১৩ সালে ৯১০ কোটি ৮০ লাখ তুলেছে বিভিন্ন কোম্পানি। এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি যুক্ত হচ্ছে। আইপিও এবং রাইটের মাধ্যমে কোম্পানি টাকা তুলছে। কিন্তু বাজার পরিস্থির উন্নতি হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছেন। আমরা তাদের সান্তনা দেয়ার ভাষা পাচ্ছি না। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ২০১৩ সালের থেকে অনেক খারা। কারণ ২০১৩ সালে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান ছিল এখন তার থেকে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সূচক ওই সময়ের কাছাকাছি অবস্থান করছে। অর্থাৎ নতুন নতুন কোম্পানি বাজারে না আসলে দেখা যেত এতো দিন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক চার হাজার পয়েন্টের অনেক নিচে নেমে গেছে। প্রধান মূল্য সূচকের থেকেও করুণ দশা বিরাজ করছে ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসই-৩০। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালুর সময় এ সূচকটি ছিল এক হাজার ৪৬০ পয়েন্টে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে এ সূচকটি বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে এক হাজার ৪০৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর আরেকটি সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ্’। ইসলামী শরিয়াহ্ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সূচকটি সাত পয়েন্ট কমে ৯৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বৃহৎ বা বড় মূলধনের কোম্পানির জন্য চলতি বছরে ‘সিএনআই-ডিএসই সিলেক্ট ইনডেক্স (সিডিএসইটি)’ নামে নতুন সূচক চালু করেছে ডিএসই। বছরের প্রথমদিন ১ জানুয়ারি থেকে অফিসিয়ালি ডিএসইর ওয়েবসাইটে সূচকটি উন্মুক্ত করা হয়। ৪০টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়া সূচকটির ভিত্তি ভ্যালু ধরা হয় ১০০০ পয়েন্ট। তবে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে এ সূচকটি ৮৪৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
×