ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড!

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড!

বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র প্রতিদিনের গণমাধ্যমের যেন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, বিশিষ্টজন এবং সংসদ সদস্যরাও এ নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। ঘৃণ্য এমন কার্যকলাপ অর্ধাংশ এই গোষ্ঠীকে নিরাপত্তাহীনতার কবলেও ফেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। কথিত ধর্ষকরা আটকও হচ্ছে, তাদের হীন মনোবৃত্তির পরিচয় জনসম্মুখে উন্মোচিত হলেও আজ অবধি অপরাধীরা তেমন শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। বিচারিক আদালতে চাঞ্চল্যকর রুপা ধর্ষণ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান দেয়া হলেও রায় কাগজে-কলমেই থেকে গেছে সীমাবদ্ধ। শাস্তির দ্বার পর্যন্ত এখনও পৌঁছাতে পারেনি। ২০১৯ সালের মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে অধ্যক্ষ কর্তৃক লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হয়। তবে রায় বাস্তবায়নের ব্যাপারটি কত সুদূর পরাহত হবে কিংবা আদৌ করা যাবে কি না, তা বলা মুশকিল। ইতোমধ্যে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা কমার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ার বীভৎসতা সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্নতায় ফেলে দিয়েছে। আগে ধর্ষণের অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাভোগই ছিল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনী বিধান। ইতোমধ্যে তা সংস্কার করে মৃত্যুদ-ের নির্দেশ দেয়া হয় আদালতের পক্ষ থেকে। বর্তমানে দাবি উঠেছে ধর্ষকদের চিহ্নিত করার পরপরই তাদের ক্রসফায়ারে যেন মেরে দেয়া হয়। তেমন তাৎক্ষণিক কার্যক্রমের আওতায় ধর্ষকদের আনা জরুরী বলে জাতীয় সংসদেই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। মাদকাসক্তসহ আরও অনেক অপরাধীকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়। সংসদ সদস্যরা বলেন, বিচারিক ব্যবস্থা যত তাড়াতাড়ি এবং কঠোর হয়, অপরাধ কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়ে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করলে বিচার নিয়ে হরেক রকম পরামর্শ এবং নতুন আইনী কার্যক্রম সুধী সমাজকে সচকিত করে। নারীর প্রতি এমন পাশবিক আক্রমণ সারা বিশ্বকেই আন্দোলনে-প্রতিবাদে সোচ্চার করে তোলা হচ্ছে। সেখানে হ্যাস ট্যাগ মি টু (# সব ঃড়ড়)-এর ব্যানারে সংশ্লিষ্টরা আতঙ্কিত অবস্থায় রাস্তায় জড়ো হচ্ছে। তারপরেও এমন মরণ কামড়কে সেভাবে থামানো যাচ্ছে না। শাস্তি, ভয় আর জেল দিয়ে জঘন্য অপরাধকে সাময়িকভাবে দমানো গেলেও চিরস্থায়ী কোন পথ এটা নয়। মানুষের পশুবৃত্তি আর মনোবিকৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে সুস্থ মানবিক বোধ আর মনুষ্যত্বের নিয়ত চর্চাকে এগিয়ে নিতে ভেতরের যৌক্তিক আর বুদ্ধিভিত্তিক চেতনাকে জাগিয়ে তোলাই সব থেকে বেশি জরুরী। তার মানে এটা নয় অপরাধী শাস্তি পাবে না। শাস্তিযোগ্য অপরাধ যাতে মানুষকে তাড়িত করতে না পারে সেজন্য শুভবুদ্ধির উদয়কে ধারণ করা ছাড়া বিকল্প পথ আর কি থাকতে পারে? সমস্যাকে যদি মূল থেকে উপড়ে ফেলা না যায় তাহলে নতুন সঙ্কট তৈরি হতে বেশি সময় লাগে না। তবে এটাও জরুরী যে, অপরাধীর শাস্তি কঠিন আর কঠোরতমের পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে বিচার করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়াটা সময়ের দাবি। এজন্য প্রয়োজন সমাজের সব মানুষের সচেতন দায়বদ্ধতায় একটি সুস্থ ও নিরাপদ বলয় তৈরি করা। এ কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তো বটেই, জনগোষ্ঠীরও একটি নৈতিক কর্তব্য এখানে বর্তায়। একজন নারীকে শুধু তার শরীর দিয়ে নয়, মনুষ্যত্বের মাপকাঠিতে যথার্থ মানুষ ভাবার সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে প্রতিনিয়ত। সেটা ক্ষুদ্র পারিবারিক প্রতিষ্ঠান থেকে বৃহত্তর সামাজিক অঙ্গনের সর্বক্ষেত্রে। মানবতার স্খলন আর মনুষ্যত্বের অপমানে একটি সমাজের কেউকে যেন সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পদে পদে হোঁচট খেতে না হয়।
×