ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তামান্নার জন্য মাসিক বৃত্তির প্রত্যাশা পিতার

প্রকাশিত: ০১:৫২, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

তামান্নার জন্য মাসিক বৃত্তির প্রত্যাশা পিতার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ পায়ে লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ায় প্রচারের আলোয় উঠে এসেছিল তামান্না নূরা। ‘সেই আলোয় মুখ দেখিয়ে’ অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অদম্য মেধাবী এই মেয়েটির পাশে থাকার; লেখাপড়ায় সহযোগিতা করার। কিন্তু সময় যতো গড়িয়েছে, সরে গেছে সেই আলো। আর একই সাথে সরে গেছেন প্রতিশ্রুতি দেয়া অনেকেই। আর তাই তামান্না নূরার উচ্চ মাধ্যমিকের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে তার পরিবারকে। কঠিন বাস্তবতায় মেধাবী এই মেয়েটির লেখাপড়ার ক্রমশই ঢেকে যাচ্ছে আঁধারে। তামান্নার বাবা যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের রওশন আলী বরাবর আশাবাদী মানুষ। তারপরও কষ্টের কথা বলতে গিয়ে একটু যেন হতাশার সুরও বাজলো অভিমানী কণ্ঠে। বললেন, ‘আপনারা মেয়েটিকে ভালবাসেন খোঁজখবর রাখেন। কিন্তু অনেকেই আর খোঁজ রাখেনি। যারা নানান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারাও আর পরে ফিরে তাকাননি।’ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘তামান্না নূরার সংগ্রাম ও সাফল্যের কথা’ প্রচার হওয়ায় অনেকেরই তার কথা মনে থাকবে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জেকে হাইস্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল মেয়েটি। অদম্য মেধাবী এই মেয়েটির দুই হাত ও একটি পা নেই। শুধুমাত্র একটি পা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা মেয়েটি তার পা’কেই করেছে সংগ্রামের হাতিয়ার। এক পায়ে লিখেই ছিনিয়ে এনেছে এসএসসি’র সর্বোচ্চ সাফল্য। তার এই সাফল্যের সংবাদে অনেক মানুষ ও প্রতিষ্ঠান শুভেচ্ছা ও ভালবাসা নিয়ে তার কাছে ছুটে গিয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল লেখাপড়াকে অব্যাহত রাখার জন্য সহযোগিতার। কেউ কেউ শিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তারা আর যোগাযোগ করেননি। এসএসসি পাশের পর তামান্না এখন বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। এখানেও সে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। কলেজের অধ্যক্ষ সামছুর রহমান জানিয়েছেন, তামান্না অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় কলেজে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কলেজে তার লেখাপড়ার দিকে বাড়তি নজর দেয়া হচ্ছে। তামান্নার বাবা রওশন আলী একটি ননএমপিওভুক্ত দাখিল মাদরাসার শিক্ষক। তাই টিউশনি করে সংসার চালাতে হয়। তার পক্ষে তামান্নার লেখাপড়ার খরচ বহন করাও সম্ভব হয়ে উঠছে না। তিনি জানান, ‘বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে তাকে প্রাইভেট পড়তে হয়। কিন্তু এই শিক্ষকদের নূন্যতম বেতন দেয়ার অবস্থাও আর থাকছে না। সবমিলিয়ে মাসে অন্তত দশ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে মেয়ের লেখাপড়ার পেছনে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যদি এই খরচের একটি মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করতেন তাহলে হয়তো মেয়েটি তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারতো।’ রওশন আলী আরো জানান, সংবাদ হওয়ার পর বহুলোক তামান্নার উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে যাবতীয় খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরে সেই লোকজনেরা আর খোঁজ নেয়নি। সে সময় ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন থেকেও তামান্নার লেখাপড়ার যাবতীয় দায়িত্ব নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, বাংলাদেশ ডিবেটিং সোসাইটি ও একজন কানাডা প্রবাসী কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য তা অপ্রতুল। এ প্রসঙ্গে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাধন কুমার বিশ্বাস জানান, বিদায়ী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা উপজেলার পক্ষ থেকে দুর্যোগ সহনীয় ঘরসহ কিছু সহযোগিতা করেছি। সর্বশেষ ঝিকরগাছার একটি উন্নয়ন সংস্থা ‘জেডিও’ থেকে দেড় হাজার টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও তা অপ্রতুল। মেয়েটিকে কিভাবে আরও একটু সহযোগিতা করা যায় তা আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।
×