ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শীত-বসন্ত একীভূত !

পাল্টে গেল মাঘ -ফুলেরা চোখ মেলছে, বাতাসে ফাগুনের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

পাল্টে গেল মাঘ -ফুলেরা  চোখ মেলছে, বাতাসে ফাগুনের ছোঁয়া

সমুদ্র হক ॥ দুই দিনেই চিত্র পাল্টে গেল মাঘের! যেন ফাগুন বলছে... এবার না হয় আগেই আসি! ফুলেরাও ফাগুনের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে। চোখ মেলেছে আগেই। গাছেরা কিশলয়ে নতুন রূপে সাজবার পালায় পাতা ঝরিয়ে দিচ্ছে। শীতের মাস মাঘের মুখ বেজার। ক্ষেপে বলছে-যাবই তো, থাকতে তো আসিনি। আরেকটু থাকব। এই আরেকটুখানি থাকতে গিয়ে কখনও শীতের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কখনও ফাগুনের সঙ্গে পাল্লায় না পেরে দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে উষ্ণতা। আর ঋতুবৈচিত্র্যের পরিণামে প্রাকমাঘেই ফাগুনের দিনে বুঝি শীত-বসন্ত একীভূত হওয়ার পালা শুরু হলো। এই সময়টায় পথ চলতে প্রকৃতির এমনই ছোঁয়া অনুভূত হয়। দৃশ্যমান হয় : কেমন করে দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে শীতের দিনগুলো। এবার প্রায় শুরু থেকেই শীতের রাখঢাক ভাব। এই শীত তো এই নেই। অতীতের ‘সেইসব দিনের শীতের’ মতো এখন আর তেমন শীত পড়ে না। শীত এখন শুধু জানিয়ে দেয়, সে আছে এবং থাকবেও আরও কিছুদিন। আসলে প্রকৃতির ওপর মানুষ যে নির্দয় আচরণ শুরু করেছে, তাতে মানুষ এখন যেভাবে শীতকে রাখতে চায়, ঠিক সেভাবেই থাকবে সে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির মতো হয়ত আর ফিরে আসতে পারবে না। তবু প্রকৃতিতে শীত-বসন্তের একীভূত হওয়া এমন বিচিত্র কিছু নয়। এই সময়টায় অধিকাংশ গাছের পাতা হলদেটে হতে শুরু করে। কারণ, এটা যে পাতা ঝরার দিন। তাই এখন তরু তলে হাঁটলে শুকনো ঝরা পাতার মর্মর শব্দ কানের মধ্যে এক ধরনের মাধুর্য সৃষ্টি করে। আর এভাবেই সে আগাম জানান দেয়, বৃক্ষের নতুন সজীবপত্র মঞ্জরিতে সাজিয়ে দেবে প্রকৃতিকে। কোন কোন বৃক্ষ ইতোমধ্যে সবুজের নবপত্রে সেজেছে। দেখলে মনে হয় এ যেন কোন এক মায়াকানন। প্রতিমুহূর্তে সে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ‘বসন্তের সেই মাতাল সমীরণ’র দিনের কাছে। কতই না মায়া প্রকৃতির। বাগানের ফুলগুলো ফাগুনে হাওয়ায় নেচে উঠেছে। ফুলের টবেও পাপড়ি মেলছে। তরুণ-তরুণীরা অপেক্ষায় আছে হলদে গাঁদা ও গোলাপ ফুলের ফাল্গুনের মুহূর্তের জন্য। বসন্তে তরুণীদের খোঁপায় গাঁদা না থাকলে বসন্ত যে বেমানান। এই সময়টায় বয় ফুরফুরে হাওয়া। একটু ধূলি ওড়ে সামান্য পাক দিয়ে। নবপত্রের ছন্দে সুর তোলে মানব মনকে করে দিচ্ছে আরও সবুজ, আরও সজীব। মাঘে এবার এমনই দিন। মৃদু বাতাসের তালে নবপত্রের নাচন চোখে পড়ে। মনে হবে নিসর্গের চরাচর। এবারের শীত বেশি। তবে সুদূর অতীতের সেই ‘মাঘের শীতে বাঘ পালানোর’ মতো শীত নয়। জলবায়ু বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদগণ কতই না কথা বলছেন। কেউ বলছেন, পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। উত্তপ্ত হবে সামনের দিনগুলো। ধরিত্রী মানব জীবনকে অসহনীয় করে তুলবে। বৃক্ষ তার আপন নিয়মেই নিত্য বছর পুরনো পাতা ঝরিয়ে নতুন পাতায় সাজিয়ে নেয়। প্রশান্তি এনে দেয় ছায়া দিয়ে। মাঠের কৃষক বুঝতে পারে শীত মৌসুমের বহুমুখী ধারা। বগুড়ার সোনাতলার রানীরপাড়া গ্রামের কৃষক বাসেত আলী বললেন ‘ভিওত চারা আর্জিবার সময় এ্যানা করে বাতাস ওটে। দিনত ওদও মনে হয় তাপ্যে আসিচ্ছে।’ অর্থাৎ জমিতে চারা রোপণের সময় একটু করে বাতাস ওঠে, রোদে মনে হয় তাপ বাড়ছে। এখন বিকেল কিছুটা সময় ধরে থাকে। ক’দিন আগেই কখন বিকেল হলো তা টের পাওয়া যায়নি। বিকেলের পরের হলদেটে গোধূলি আভা বসন্তের মনকে নাড়া দেয়। বারতা দেয় নতুনের। কবিরা কবিতা লেখে। গীতিকাররা সেই কবিতায় সুরও তোলেন। আর সাহিত্যিকগণ মনের মাধুরীতে লেখার নতুন প্লট খুঁজে পান...।
×