ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএলের ফাইনালেও আমিরের ঝলক

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 বিপিএলের ফাইনালেও আমিরের ঝলক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সর্বশেষ ৫ ম্যাচেই ১৩ উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ আমির। অথচ আগের ৭ ম্যাচে তার ঝুলিতে ছিল মাত্র ৫ উইকেট। আর এতেই তার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার স্বরূপটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) শুরুতে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও পাকিস্তানের এ বাঁহাতি পেসার শেষদিকে এসে যেন জ্বলন্ত অগ্নিগোলক ছুড়েছেন। আর তাতেই এবারের আসরে খেলতে এসেই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা পূরণের পথে এগিয়ে যান তিনি। এ বাঁহাতি শুক্রবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালেও মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাজশাহীর বিপক্ষে নিয়েছেন ২ উইকেট। প্রথমে আফিফ হোসেনের উইকেট নিয়ে নিজ দল খুলনা টাইগার্সকে ভাল শুরু এনে দিয়েছিলেন, পরে হাফ সেঞ্চুরিয়ান ইরফান শুক্কুরকে ফিরিয়ে দলকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন আমির। এই দুই উইকেটে তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি ঠিকই, কিন্তু আরও তিনজনের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বাধিক ২০ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ১৩ ম্যাচে মাত্র ৬.৯৯ ইকোনমি রেটে ২০ উইকেট নিয়ে তিনি অবশ্য আরেক বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের পেছনেই আছেন। কারণ মুস্তাফিজ ১২ ম্যাচেই ২০ উইকেট শিকার করেছেন। আমিরের পেছনে আছেন রুবেল হোসেন ১৩ ম্যাচে ও সতীর্থ রবি ফ্রাইলিঙ্ক ১৪ ম্যাচে ২০ উইকেট করে ঝুলিতে পুরে। আগে মাত্র দুইবার বিপিএল টি২০ আসরে খেলেছেন পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমির। ২০১৫ সালে প্রথমবার চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে খেলেছিলেন ৯ ম্যাচ, নিতে পেরেছিলেন ১৪ উইকেট। ৫.৫৬ ইকোনমি রেটে সেই আসর শেষ করে তাক লাগিয়ে দেন আমির। আর ২০১৭ বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। কোন আসরেই ফাইনাল খেলা হয়নি। ২০১৭ সালের ফাইনালে দল পৌঁছুলেও খেলতে পারেননি আমির। এবারই প্রথম পুরো আসর খেলেছেন, ফাইনালে নামার আাগে ১২ ম্যাচে শিকার করেন ১৮ উইকেট। নিজ দলেরই সতীর্থ ফ্রাইলিঙ্ক ও শহীদুল ইসলামের সঙ্গে তার ছিল এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। শুক্রবার রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে ফাইনালে এ তিন বোলারই দুর্দান্ত ছিলেন। আমির শুরুটা করেছিলেন আফিফ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই তাকে সাজঘরে ফিরিয়ে। এরপর তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা শহীদুলও (ফাইনালের আগে ১২ ম্যাচে ১৮ উইকেট) জ্বলে ওঠেন। তিনি শিকার করেন আরেক ওপেনার লিটন দাসকে। শহীদুল, আমিরের উইকেট সংখ্যা সমান ১৯টি হয়ে যায়। আর এই ম্যাচে নামার আগেই তাদের সতীর্থ ফ্রাইলিঙ্কের শিকার সংখ্যা ১৩ ম্যাচে ছিল ১৯। দুই সতীর্থ ছুঁয়ে ফেলাতেই যেন উইকেট শিকার করতে উন্মুখ হয়ে ওঠেন ফ্রাইলিঙ্ক। খুব বেশি বিলম্ব করেননি তিনি। পাক তারকা শোয়েব মালিককে সাজঘরে ফিরিয়ে সর্বাধিক উইকেট শিকারি দুই বোলার মুস্তাফিজ ও রুবেলকে স্পর্শ করেন তিনি। তিন সতীর্থের মধ্যে এই উইকেট শিকারের লড়াইটা জমে ওঠে দারুণভাবে। ফ্রাইলিঙ্ক ও শহীদুল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত। নিয়মিত দলকে দারুণ কিছু উপহার দিয়েছেন। তবে আমিরকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। প্রথম ৭ ম্যাচ খেলে মাত্র ৫ উইকেট নিতে পেরেছিলেন তিনি। তবে পরের ৫ ম্যাচেই নিজেকে চিনিয়েছেন। বিশেষ করে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বিপিএলের ইতিহাস সৃষ্টি করেন রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে ১৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। এবারের আসরে খেলতে এসেই আমির ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে চান। সেই লক্ষ্য থেকে মাত্র ৩ উইকেট দূরে ছিলেন। ফাইনালেও দারুণ বোলিং করতে আশাবাদী ছিলেন। সেই লক্ষ্য ছুঁতেই যেন দুর্বার হয়ে উঠেছিলেন। এর আগে কোন বোলার বিপিএলের এক ম্যাচে ৬ উইকেট নিতে পারেননি। ১৪ জন বোলার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। এবার আমির ১৭ রানেই দখল করেন ৬ উইকেট। ফাইনালেও জ্বলে ওঠা আমির পরবর্তীতে খুলনাকে চাপে ফেলা শুক্কুরকে সাজঘরে ফিরিয়ে দলকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন, ফলে মুস্তাফিজ, রুবেল ও ফ্রাইলিঙ্কের মতো তার উইকেট সংখ্যাও দাঁড়ায় ২০। এককভাবে সর্বাধিক উইকেট নিতে না পারলেও যৌথভাবে সেরা হয়েই শেষ করলেন এবার বিপিএল। তবে এ ৪ জনকে ছুঁতে পারতেন শহীদুলও। কিন্তু তার বলে আন্দ্রে রাসেল ক্যাচ তুলে দেয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্ত তা লুফতে পারেননি, তাই ১৯ উইকেট নিয়ে পিছিয়ে থেকেই আপাতত শেষ করতে হলো তরুণ শহীদুলকে।
×