ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে খোলা আকাশের নিচে লাখ লাথ বস্তা সার

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে খোলা আকাশের নিচে লাখ লাথ বস্তা সার

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ উত্তরাঞ্চলের নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দর এলাকায় দেশি বিদেশ লাখ লাখ বস্তা রাসায়নিক সার খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত অবস্থায় ষ্ট্যাক দিয়ে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন খোলা জায়গায় পড়ে থাকায় রোদে পুড়ে, কুয়াশা ও বৃষ্টিতে ভিজে সারের গুনগতমান কমে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতি বস্তা সারের ওজণ দুই থেকে তিন কেজি কমে যাচ্ছে। এই সার কিনে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে বলে ডিলাররা জানিয়েছে। এদিকে মাসের পর মাস ষ্ট্যাক দিয়ে রাখা সারের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন। জানা যায়, বিসিআইসি আমদানীকারকদের মাধ্যমে চীন, মিশর, সৌদি আরব, তিউনিশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি ও টিএসপি সার আমদানি করছে। পরে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে ওই সার বাফার গুদামে পৌঁছে দেয়া হয়। সুমুদ্র পথে বড় জাহাজে সার আমদানি করা হয়। পরে লাইটারেজ জাহাজে সার আনলোড করে বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী বন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে সার মজুদের জন্য পাঠানো হয়। বাফার গুদামগুলোতে জায়গা না থাকায় বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীর উত্তর-দক্ষিণ পাড়ে এবং নগরবাড়ীতে যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাব্যাপী সারের বস্তা ষ্ট্যাক দিয়ে রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকিয়ে শক্ত ও জমাট বেঁধে সারের গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে। বাঘাবাড়ী বন্দরের ট্রান্সপোর্ট এজেন্ট ও বিসিআইসি’র বাঘাবাড়ি বাফার গুদাম সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের পাবনা, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী, বগুড়া, শান্তাহার, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নাটোর, রংপুর, লালমনিহাটের মহেন্দ্রনগর, দিনাজপুর, পার্রতীপুর চরকাট, ঠাকুরগা, বিরামপুর ও গাইবান্ধায় বাফার গুদাম রয়েছে। গত বছরের সারে বাফার গুদামগুলো ভরা রয়েছে। ফলে বন্দরে যে পরিমান সার আসছে, তা বন্দর এলাকাতেই পড়ে থাকছে। দীর্ঘ দিন পড়ে থাকা সারের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এদিকে সারের ঝাঁঝালো গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বাঘাবাড়ী বন্দরে প্রায় ছয় মাস ধরে লাখ লাখ বস্তা রাসায়নিক সার মাটিতে ষ্ট্যাক দিয়ে রাখা হয়েছে। বৃষ্টি ও কুয়াশাতে ভিজে রোদে পুড়ে সারের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাঘাবাড়ী বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলছে। বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের বিভিন্ন স্থানে সারের বড় বড় ষ্ট্যাক পড়ে আছে। বাতাসে ভাসছে সারের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। আশপাশের এলাকায় এই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। সারের ঝাঁঝালো গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মসকর আলী জানিয়েছেন, নগরবাড়ী নৌবন্দরে সংরক্ষনাগার না থাকায় রাসায়নিক সার খোলা আকাশের নিচে ষ্ট্যাক দিয়ে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পড়ে থাকায় সারের কার্যক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। এই সার জমিতে প্রযোগ করে কাঙ্খিত ফলন নাও পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বাঘাবাড়ী ও নগড়বাড়ী বন্দরসহ এ অঞ্চলের ১৪ টি বাফার গুদামে প্রায় এক লাখ টন রাসায়নিক সার মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে চায়না থেকে আমদানিকৃত সার রয়েছে। এই সারের গুণগতমান বাংলাদেশের কাফকো ও যমুনা সারের চেয়ে অনেক নিন্মমানের। এই নিন্মমানের সার আমদানি ও সরবরাহের ক্ষেত্রে এক শ্রেনীর আমদানিকারক, বাফার গুদাম ইনচার্জরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
×