ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নাট্যজন মমতাজউদদীনের জন্মদিন উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

নাট্যজন মমতাজউদদীনের জন্মদিন উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা নাটকে অনন্য তার অবদান। লিখেছেন অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটক। নির্দেশনাও দিয়েছেন নিজের রচিত নাটকে। মঞ্চনাটক রচনা ও নির্দেশনার পাশাপাশি অভিনেতা হিসেবেও দাগ কেটেছেন দর্শক হৃদয়ে। শনিবার ছিল দেশের নাট্য আন্দোলনের সেই পথিকৃৎ-ব্যক্তিত্ব মমতাজউদ্্দীন আহমদের ৮৬তম জন্মদিন। নানা আয়োজনে উদ্্যাপিত হলো এই নাট্যজনের জন্মজয়ন্তী। পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভালবাসা জানানো হলো একুশে পদকজয়ী এই শিল্পীকে। শিল্পীর জন্মদিনে তার নামাঙ্কিত পদক প্রদান করা হয় সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূরকে। প্রকাশিত হয় মমতাজউদ্দীন আহমদ স্মারকগ্রন্থ। অন্যদিকে গান, কবিতা, নাটকসহ বহুমাত্রিক আয়োজনে সব্যসাচী এই নাট্যব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারই হাতে গড়া নাট্যদল থিয়েটার। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মমতাজউদ্দীন ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উদ্্যাপন পর্ষদ। নাটক ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য আসাদুজ্জামান নূরকে ‘অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার-২০১৯’ ও পদক প্রদান করা হয়। একই অনুষ্ঠানে মমতাজউদ্দীন আহমদ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ। পুরস্কারের সম্মানী হিসেবে আসাদুজ্জামান নূরের হাতে একলাখ টাকার চেক প্রদান করেন মমতাজউদ্দীন আহমদের স্ত্রী। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আসাদুজ্জামান নূরের হাতে পুরস্কারের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন পর্ষদের সদস্য সচিব ও জুরি বোর্ডের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ। মমতাজউদ্দীন আহমদের শংসা বচন পাঠ করেন আহ্্কাম উল্লাহ্। অনুষ্ঠানে মমতাজউদ্দীন আহমদের জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। স্মারকগ্রন্থটির সম্পাদনা করেছেন আবেদ খান, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, গোলাম কুদ্দুছ, কামাল পাশা চৌধুরী, রতন সিদ্দিকী ও প্রিন্স। সন্ধ্যায় বহুমাত্রিক অনুষ্ঠানের মমতাজউদ্দীন আহমদের জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করে নাট্যদল থিয়েটার। গান, কবিতা, কথন ও নাট্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে সাজানো আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মমতাজউদ্দীনের বর্ণিল জীবন নিয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান ও মামুনুর রশীদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ। সভাপতিত্ব করেন থিয়েটারের সভাপতি নিলুফার বানু। আলোচনায় বক্তারা বলেন, বহুমাত্রিক গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ ছিলেন মমতাজউদ্দীন আহমদ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নাট্যভুবনÑসবখানেই ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। সাহিত্য রচনা, নাট্য নির্দেশনা থেকে শুরু করে রাজনৈতিকভাবেও ছিলেন দারুণ সচেতন। তার ধ্যান-জ্ঞান জুড়ে ছিল বাংলাদেশ। নানা গুণের সম্মিলনে ব্যক্তিকে ছাপিয়ে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। নাটক রচনার ক্ষেত্রে সব সময় সমকালীন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। সেই সূত্রে স্বাভাবিকভাবেই তার নাটকে উঠে এসেছে রাজনৈতিক মতাদর্শ। তার রচিত সাতঘাটের কানাকড়ি নাটকটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে অনেকেই প্রযোজনাটির সাত থেকে আটটি মঞ্চায়ন উপভোগ করেছেন। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় প্রবীর দত্ত পরিচালিত মমতাজউদ্দীনের জীবননির্ভর তথ্যচিত্র ‘চোখের আলোয় দেখেছিলাম’। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। গাওয়া হয় মমতাজউদ্দীনের পছন্দের গান। অনিমা মুক্তি গোমেজ পরিবেশন করেন লালনসঙ্গীত ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’। মমতাজউদ্দীন রচিত শ্রুতিনাটক ‘বুলনের বউ’ থেকে পাঠ করেন মুনিরা ইফসুফ মেমি ও জাহিদ হাসান শোভন। এছাড়া মমতাজউদ্দীনের লেখা ‘স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা’ শীর্ষক থিয়েটারের নতুন নাটকের অংশবিশেষ মঞ্চস্থ হয়। রফিকুল ইসলাম নির্দেশিত নাটকটি কিছুদিন পর আসবে ঢাকার মঞ্চে।
×