ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নীরব ঘাতক ট্রান্স ফ্যাট রোগের উৎস

প্রকাশিত: ১১:২৩, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

নীরব ঘাতক ট্রান্স ফ্যাট রোগের উৎস

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ ট্রান্স ফ্যাট। নিত্যদিন আমরা খাচ্ছি। কারও ভাবনাতেও আসছে না জেনেশুনে দেহের কতটা ক্ষতি করছি! হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ কত বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ট্রান্স ফ্যাট সম্পর্কে। বিশ্বে প্রথম ডেনমার্ক আইন করে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস আংশিক জারিত তেল (পার্শিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল সংক্ষেপে পিএইচও) ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ভারতের ফুড সেফটি এ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি ২০১১ সাল থেকে ট্রান্স ফ্যাট মাত্রা কমাতে শুরু করে গত বছর সীমিত পর্যায়ে এনেছে। ভারত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনবে। স্ট্রিট ফুড (পথের ধারের খাবার), ভাজাপোড়া (পুুরি, সিঙ্গারা, সমুচা, চিকেন গ্রিল ও ফ্রাই ইত্যাদি) খাবার, হোটেলে বেশি তেল ও ডালডায় তৈরি খাবার, স্বাদ আনতে উচ্চ তাপমাত্রায় রিসাইক্লিং তেলের (বারবার ব্যবহার) খাবার, বেকারিতে ডালডায় তৈরি মুখরোচক বিস্কুটে বেশি মাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট মেলে। এই খাবার দেহের অভ্যন্তরে ভাল কোলস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে খারাপ কোলস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত খারাপ কোলস্টেরল মানবদেহে হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ মৃত্যুঝুঁকির রোগগুলো দিয়ে দ্রুত আক্রান্ত করে দেয়। প্রতিনিয়ত আমরা জেনেশুনে সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবারের নামে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার খাচ্ছি। মহানগরী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি নগরী, জেলা শহর ও বড় উপজেলা সদরে নিত্যদিন ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার বিক্রি হচ্ছে। শীত মৌসুমে আরও বেশি। হোটেল রেস্তরাঁয় আয়েশ করে এবং পথের ধারে মজা করে আড্ডা দিয়ে নীরব ঘাতককে পেটের ভেতর নিয়ে রক্তনালীতে পৌঁছে দিচ্ছি। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হৃদরোগ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্যালরিভিত্তিক খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা সর্বোচ্চ দুই শতাংশ থাকা উচিত। এক শতাংশের কম হলে ভাল হয়। স্ট্রিট ফুড, হোটেল-রেস্তরাঁ, বেকারি পণ্যে এই মাত্রা অত্যধিক পাওয়া যায়। বাসা বাড়ির রান্নায় ট্রান্সফ্যাট কম থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, গত শতকের শেষের দিকে ঢাকাসহ দেশের বড় নগরী ও বড় শহরে স্ট্রিট ফুডের যাত্রা শুরু। বর্তমানে দেশজুড়ে ছেয়ে গেছে। বেড়েছে হোটেল রেস্তরাঁর সংখ্যা। খাবারের স্বাদ আনতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ট্রান্স ফ্যাট। ডালডায় এই মাত্রা পাওয়া যায় ২৫ থেকে ৪৫ শতাংশ। উদ্ভিদজাত তেল, আমদানিকৃত যে ভোজ্য তেল অল্প দিনেই জমে যায় তার মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বেশি। এই উপাদান ভোজ্য তেলকে জমিয়ে দেয়। ট্রান্স ফ্যাট এক ধরনের অস্পৃক্ত চর্বি, যা রক্তের স্বাভাবিক পরিসঞ্চালনে বাধা দেয়। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক একজন অধ্যাপক বলেন, প্রতিদিন দুই হাজার ক্যালরির খাবারে দুই দশমিক দুই গ্রাম ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ করা যায়। প্রতিদিনের মাত্রা এর বেশি হলে রক্তে খারাপ কোলস্টেরল বেড়ে যায়। বাংলাদেশের ট্রান্সফ্যাট পরিস্থিতি নিয়ে যৌথভাবে গবেষণা করছে সিটিএফকে, গ্লোবাল হেলথ এ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহায়তায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল এ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের ফুড এ্যান্ড নিউট্রিশন ইনস্টিটিউট। ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফুডমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ের সঙ্গে যুক্ত শাহরিয়ার জানান, বিশ্বের পাঁচ শ’ কোটি মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশে শহুরে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি। কারণ তারা বাড়ির খাবারের পাশাপাশি স্ট্রিট ফুড, হোটেল রেস্তরাঁর খাবার বেশি খায়। তবে শহর ও গ্রামের বাসা বাড়ির রান্নায় ট্রান্স ফ্যাট কম থাকে।
×