ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ারবাজারে বিক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

শেয়ারবাজারে বিক্রেতাশূন্য অবস্থায়  লেনদেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আস্থাহীনতার কারণে গত কয়েকদিন আগেই ক্রেতা সংকটে ধসের কবলে পড়ে শেয়ারবাজার। দফায় দফায় দাম কমিয়েও প্রতাশ্যিত দরে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে পারছিলেন না বিনিয়োগকারীরা। ফের একই কোম্পানির শেয়ার এখন আর কেনাই যাচ্ছে না বিক্রেতা সংকটের কারণে। রবিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ১১টি কোম্পানির বিক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। আগামীতে শেয়ারবাজার আরও ভাল হবে এই প্রত্যাশায় অনেকেই হাতে থাকা শেয়ার আরও বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। শেয়ারবাজারে বড় ধসের কারণে গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে নিজ কার্যালয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর মধ্যে ৬টি নির্দেশনা দেওয়া হয় তাৎক্ষণিক বাজার ভাল করার জন্য। এই নির্দেশনা অনুুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা শুরু করেছে। যার প্রভাব পড়ল শেয়ারবাজারে। দরপতনের হাত থেকে শেয়ারবাজার টেনে তুলতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আর বিশ্লেষকরা বলছিলেন-বাজারে যে দরপতন হচ্ছে তা যুক্তিসংগত নয়। মূলত বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে বাজারে দরপতন হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নিজে শেয়ারবাজারের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গ বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আস্থা ফিরেছে। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন সরকার শেয়ারবাজার ভালো করতে চায়। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিএসইসি থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। শেয়ারবাজারের উন্নয়নে যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন সরকার ধারাবাহিকভাবে তা করে যাবে। সভায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ অচিরেই কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে - শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পর্যালোচনা, আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজারে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এমন ঘোষণার পর রবিবার ছিল শেয়ারবাজারের প্রথম কার্যদিবস। এদিন লেনদেনের শুরুতেই সূচকের বড় উত্থান ঘটে। মাত্র দুই মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গ সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের উত্থান প্রবণতা। ১০ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল সূচক বাড়ে ১৩৫ পয়েন্ট। আর প্রথম এক ঘণ্টার লেনদেনে সূচক বাড়ে ২০৪ পয়েন্ট। সূচক এমন হু হু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়তে থাকে। এতে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও অনেক কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। প্রথম ঘণ্টার লেনদেনেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায় দুটি কোম্পানি। পাশাপাশি আরও ৩১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে নেয়া উদ্যোগের বিষয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এর ফলে আশা করা যায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। আর আস্থা বাড়লে বাজারে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন লোভনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বাজার যখন ভালো হয় তখন একটা গ্রুপ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে, বিনিয়োগকারীদের উচিত এ বিষয়ে সতর্ক থাকা। বিনিয়োগকারীদের উচিত ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছিলাম। এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশাকরি এখন বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে এবং বাজার ভালো হবে।
×