ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৫০ বছরের পরিকল্পনা করার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৫০ বছরের পরিকল্পনা করার তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য্ আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা করার তাগিদ দিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর রফিকুল ইসলাম। একইসঙ্গে যন্ত্রপাতি কেনায় স্বচ্ছতা রাখারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। কেনাকাটায় স্বচ্ছতা রাখার তাগিদ দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। যন্ত্রপাতির কিছু স্বল্পতা আছে। সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের যা যা যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজন আছে, সেটা অবশ্যই সরকারি ক্রয়ের যে নীতিমালা পিপিআর আছে সেটা অনুসরণ করে কিনতে হবে। কেনাকাটায় আমরা কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করিনি, পূর্ণ স্বাধীনতা বন্দরের আছে। তবে কিনতে হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। কারণ কেনাকাটা নিয়ে মাঝে মাঝে নানা অভিযোগ আসে। কিছু অভিযোগ হয়ত সত্য। কিছু কিছু অভিযোগের তদন্ত আমরা করেছি। কারণ আমাদের কাছে চট্টগ্রাম বন্দর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীরও চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর বিশেষ নজর আছে।’ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে আগামী ৫০ বছর পর কতগুলো জাহাজ আসতে পারে, তার জন্য কতগুলো জেটি দরকার সেটা নিয়ে এখনই পরিকল্পনা দরকার। যেহেতু ডেল্টা প্ল্যানের কথা বলছি, এর পরের ৫০ বছরের কথাও মাথায় রাখতে হবে। আমরা যদি ধরে নিই যে, আমাদের ১০০টা কিংবা ৬০টা জেটি দরকার, তাহলে সেই পরিমাণ জেটি করার জায়গা আমার আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। না হলে অন্য জায়গায় করা যায় কি না এখনই ভাবতে হবে।’ আমরা যদি ৫০ বছরের পরিকল্পনা এখনই না করি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যতে বন্দর নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আগেও আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কিছু সমাধান হয়েছে। তবে আরও কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা রয়ে গেছে। ৫০ বছর আগে যদি আজকের চিন্তা করতাম, তাহলে বন্দরে আজ যে সমস্যা আছে সেগুলো থাকতো না। কাজেই আমাদের চিন্তা করতে হবে ৫০ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর কি ধরনের চাপ পড়বে, কি ধরনের অবকাঠামো লাগবে।’ চলমান প্রকল্প শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের পরিপূরক হচ্ছে পায়রা এবং মোংলা। মাতারবাড়ি বন্দর যখন হয়ে যাবে, তখন আমাদের সক্ষমতা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে।’ তবে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা বিশেষায়িত সড়ক ও রেলরুট নির্মাণের তাগিদ দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু সড়ক করলে হবে না, সেটা হতে হবে শুধুমাত্র কার্গো পরিবহনের জন্য ডেডিকেটেড রোড। ডেডিকেটেড রেলপথ করতে হবে। তাহলেই বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। ৫০ বছরের পরের কথা ভাবতে হলে ডেডিকেটেড রুটের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। নির্মাণাধীন বে-টার্মিনালকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা পর্যন্ত সম্প্রসারণের ঘোষণা এখনই দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা এখনই গেজেট করা দরকার যে, বে-টার্মিনাল কুমিরা পর্যন্ত যাবে। এখানে কেউ যেন নতুন কোনো স্থাপনা কেউ না করে।’ পায়রা বন্দর একটি বিশেষায়িত বন্দর হবে বলে মনে করছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পায়রা চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সক্ষম, এত তাড়াতাড়ি হবে না। সময় লাগবে। এটা একটা স্পেশালাইজড পোর্ট হোক। গার্মেন্টস আইটেম এদিকে (চট্টগ্রাম বন্দর) নিয়ে এসে কোল, সিমেন্ট ক্লিংকার পায়রার দিকে পাঠালে আমার মনে হয় ভালো হবে। মোংলার সক্ষমতাও দ্বিগুণ হবে। পদ্মা সেতুর কাজ আগামী বছরের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হলে আরও পরিবর্তন আসবে।’ চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতাও দেখছেন সাবেক মন্ত্রী রফিকুল। তিনি বলেন, ‘যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান খুব কঠিন বিষয় না। বন্দরের সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয় জড়িত। নৌপরিবহন ও অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী সমস্যা জিইয়ে থাকুক, সেটা চান না। দুই মন্ত্রী যদি একমত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান, সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সমন্বয়টা নেই, কাউকে দোষারোপ করব না। তবে এটা সমস্যা।’ কাস্টমসের নিলাম নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, এভাবে একটা বন্দরে অকশন চলতে পারে না। আমি ছবি নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমি ছবিগুলো দেখাব। চিঠিও দেব, আমি নিজে গিয়েও দেখাব। বন্দরের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করব, সংসদীয় কমিটি যখন উন্নত বন্দর ভিজিট করতে যায়, কাস্টমসের পলিসি মেকিংয়ে যারা থাকেন, তাদেরও যেন পাঠায়। তারা সেখানে গিয়ে দেখুক, উন্নত দেশের কাস্টমস কিভাবে কাজ করে। না দেখলে তাদের চিন্তার পরিবর্তন আসবে না।’ কর্ণফুলী নদীর দুইপাড় বিভিন্ন স্থাপনার জন্য ইজারা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে আষ্ঠেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই নদী বাঁচাতে না পারলে, নদীকে সুস্থ রাখতে না পারলে বন্দর বাঁচবে না। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরকে অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কালুরঘাটের ব্রিজ হয়েছিল। তখনও নদীর ওপর কিছু প্রভাব পড়েছিল। ব্রিজ করলে কিছুটা প্রভাব পড়ে। আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সেটা মোকাবেলা করা যায়। আমরা নদী রক্ষা কমিশনকে এই জায়গাটা দেখার জন্য পাঠাব। চেয়ারম্যানকে বলব, তিনি একটা টিম পাঠাবেন এবং স্টাডি করে দেখবেন, কি করা প্রয়োজন।’ মতবিনিময় সভায় সংসদীয় কমিটির সদস্য রণজিৎ কুমার রায়সহ আরও চার সদস্য এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ, সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মহিদুল হাসান চৌধুরী ছিলেন।
×