জাতীয় মহাসড়কের উন্নয়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়নও অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়ে যায়, যদি সেটি প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগে ভূমিকা রাখে। ১৯০ কিমি দীর্ঘ এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। প্রায় বারো হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনে উন্নীত হতে যাচ্ছে এই মহাসড়কটি। দ্বিতীয় সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এডিবির আর্থিক সহযোগিতায় এ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। প্রকল্পটি শুধু দেশের পাঁচ জেলাকেই সংযুক্ত করবে না, আগামী বছর থেকে এটি হয়ে উঠবে বাংলাদেশসহ তিন দেশের (ভারত, নেপাল, ভুটান) যান চলাচলের অন্যতম মাধ্যম। ভবিষ্যতে আরও অন্তত একটি দেশের (মিয়ানমার) যানও চলবে এই মহাসড়কে। মহাসড়কটি টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া-গাইবান্ধা-রংপুর- এ পাঁচ জেলাকে যুক্ত করবে। এরপর রংপুর থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা পর্যন্ত সাসেক প্রকল্প-৩-এর কাজ শেষ হলে পাঁচ দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে এই মহাসড়ক।
বিমসটেক চতুর্থ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রচেষ্টা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলার মাধ্যমে বিমসটেক ফোরামে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার এবং মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ। বিমসটেকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূলের দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করা। ব্যবসা, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, পর্যটন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, মৎস্যসম্পদ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক ও চামড়া শিল্পসহ আরও অনেক ক্ষেত্র বিমসটেকের মূল উদ্দেশ্যভুক্ত। সম্মেলনে শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছিলেন যে, বিশ্ব জনসংখ্যার ২২ শতাংশের বসবাসকারী এই অঞ্চলে আন্তঃবাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। চার লেনের এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর এই মহাসড়কটি হবে এশিয়ান হাইওয়ে বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ে করিডরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কাজ শেষ হওয়ার পর গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে ব্যাপক উন্নতি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সুফল পেতে হলে বাড়াতে হবে কাজের গতি। কেননা গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ১১ দশমিক ৫৩ ভাগ। বাকি দশ মাসে প্রায় ৮৯ ভাগ কাজ শেষ করা চ্যালেঞ্জের বিষয় বটে। ’২১ সাল নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর শুরু হবে সাসেক প্রকল্প-৩ বা শেষ ধাপের কাজ। রংপুর থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা পর্যন্ত সাসেক প্রকল্প-৩-এর কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক রূপ পাবে। তখন এ মহাসড়ক দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের যানবাহন চলাচল করবে।
এটা লক্ষণীয় যে, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখান থেকে আঞ্চলিক সম্প্রীতি কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের সুযোগ রয়েছে। তাই দেশের অব্যাহত প্রবৃদ্ধিও উন্নতি ঘটানোর একটি সহজ পথ হচ্ছে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্প্রীতি জোরদার করা। এজন্য দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পণ্য, সেবা এবং বিনিয়োগের পথ সহজ করা দরকার। এগুলো সম্ভব হলে কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। মহাসড়কের গুরুত্ব সম্মন্ধে সম্পূর্ণ সচেতন বর্তমান সরকার। আর বিষয়টি যে দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তা বলাই বাহুল্য।
শীর্ষ সংবাদ: