ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লঙ্কানদের উড়িয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২০ জানুয়ারি ২০২০

  লঙ্কানদের উড়িয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

জাহিদুল আলম জয় ॥ শঙ্কার কালো মেঘ দূর করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। রবিবার রাতে ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে লাল-সবুজের দেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়ের নায়ক ফরোয়ার্ড মতিন মিয়া। বসুন্ধরা কিংসের এই তারকা করেন জোড়া গোল। অপর গোলটি করেন আরেক ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ইব্রাহিম। সেমিফাইনাল নিশ্চিতের পর এবার বাংলাদেশের মিশন ফাইনাল মঞ্চের টিকেট কাটা। এ লক্ষ্যে শেষ চারে লাল-সবুজের দেশ খেলবে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন বুরুন্ডির বিরুদ্ধে। একই ভেন্যুতে ম্যাচটি হবে আগামী বৃহস্পতিবার। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হার মানে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকেও একই ব্যবধানে হারায় ফিলিস্তিন। যে কারণে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি দু’দলের জন্যই হয়ে ওঠে বাঁচা-মরার। বিশেষ করে স্বাগতিক বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি ছিল ইজ্জত রক্ষার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ এই আসরের গ্রুপপর্ব থেকে বাংলাদেশ বিদায় নিলে নিশ্চিত করেই টুর্নামেন্টের ঔজ্জ্বলই কমে যেত। যে কারণে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে নিজেদের সেরাটা দেয়ার বিকল্প ছিল না ফুটবলারদের। এই চ্যালেঞ্জে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে সিংহদের বিরুদ্ধে সেরাটাই দিয়েছেন বাংলার বাঘ মতিন, ইব্রাহিম, সাদ, রহমত, সুফিলরা। আর তাতেই বিদায়ের শঙ্কা দূর করে সেরা চারের মঞ্চে উঠে এসেছে কোচ জেমি ডে’র দল। বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই দেখতে কয়েক হাজার দর্শক জড়ো হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। বিশেষ করে স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারির পুরোটাই ছিল দর্শকে ঠাসা। সমর্থকরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন। দলের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স তাদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়। চোটের কারণে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারেননি নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। আর জ্বরের কারণে ছিলেন না রক্ষণভাগের কান্ডারি ইয়াসিন খান। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে এর প্রভাব পড়েনি। মতিন-ইব্রাহিমদের উজ্জীবিত পারফর্মেন্স তাদের অভাব বুঝতে দেয়নি। জামালের ইনজুরিতে কপাল খুলে মানিকগঞ্জের তরুণ মিডফিল্ডার মানিক হোসেন মোল্লার। অভিষেক ম্যাচে মাঝ মাঠে ভালই সামাল দিয়েছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর এ মিডফিল্ডার। জামাল না থাকায় প্রথমবার অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেন ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। অধিনায়কত্বের অভিষেক ম্যাচে জয় পেলেও লালকার্ড দেখতে হয়েছে তাকে। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখায় ম্যাচের শেষদিকে মাঠ ছাড়তে হয় তপুকে। যে কারণে সেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না তিনি। ম্যাচের শুরু থেকেই লঙ্কার দুর্গে হানা দিয়ে খেলতে থাকে স্বাগতিক বাংলাদেশ। কাক্সিক্ষত গোল পেতেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ম্যাচের ১৭ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে রিয়াদুল হাসানের উড়ন্ত ক্রস বাঁ পায়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সঙ্গে লেগে থাকা লঙ্কান এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে ডান পায়ের শটে দৃষ্টিনন্দন গোল করেন মতিন মিয়া (১-০)। লিড নেয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধেও আধিপত্য বিস্তার করে খেলে। ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন সাদ উদ্দিন, সুফিলরা। কাউন্টার এ্যাটাকে পাকির আলীর লঙ্কা দলও মাঝে মধ্যে বাংলাদেশের রক্ষণকে পরীক্ষায় ফেলে। তবে তপু-বিশ্বনাথরা আগের ম্যাচের মতো ভুল করেননি। দারুণ বোঝাপড়ার আরেকটি ফল আসে ম্যাচের ৬৪ মিনিটে। এবারও নায়ক সেই মতিন মিয়া। লঙ্কান ডিফেন্ডার জুদে সুপানের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে একক প্রচেষ্টায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেয়ে গোলরক্ষককে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় প্লেসিংয়ে লক্ষ্যভেদ করেন সিলেটের এ ফরোয়ার্ড (২-০)। মতিনের মতো পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ইব্রাহিম গোল করেন ম্যাচের ৮৩ মিনিটে। বদলি ফরোয়ার্ড রাব্বি হোসেনের মাইনাসে শুধু পায়ের আলতো পরশ বুলিয়ে দেন বসুন্ধরা কিংসের এ ফরোয়ার্ড (৩-০)। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সবার মধ্যমণি ছিলেন মতিন মিয়া। তরুণ এই ফরোয়ার্ড নিজের করা দ্বিতীয় গোলটিকে ক্যারিয়ার সেরা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচের নায়ক মতিন বলেন, ‘আমি আগে একাদশে জায়গা পেতাম না। এখন আর পজিশনটা হারাতে চাই না। জোড়া গোল করেছি। আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম গোল। ম্যাচসেরা হয়েছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় বিষয়। তবে নিজের অর্জনের চেয়েও ম্যাচটি জিততে পেরেছি এটাই বড় কথা।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের জন্য গোল করতে পেরেছি এ জন্য খুব ভাল লাগছে। মাঠে আমরা সেরাটা খেলেছি এবং জিতেছি’। বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্সের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। আর শ্রীলঙ্কা কোচ পাকির আলি আফসোস করেছেন নিজেদের পাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পেরে। তবে তিনি বাংলাদেশের পারফর্মেন্সের প্রশংসা করেন।
×