ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

থানা হেফাজতে এফডিসি কর্মকর্তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২০ জানুয়ারি ২০২০

  থানা হেফাজতে এফডিসি কর্মকর্তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা হেফাজতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) এক কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তির নাম আবু বক্কর সিদ্দিক বাবু (৪৫)। তিনি এফডিসির ফ্লোর ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ তার লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, আবু বক্কর সিদ্দিক বাবু থানার হাজতখানায় গলায় চাদর পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার স্ত্রী আলেয়া বেগমের সন্দেহ, বাবুকে থানায় ‘নির্যাতন চালিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, নিহতের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। তিনি হাজতের গ্রিলের সঙ্গে চাদর পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ওই সময় হাজতে অন্য আসামি থাকলেও তারা কেউ টের পায়নি বলে জানান তিনি। হাজতের সামনে সেন্ট্রির দায়িত্বে কেউ ছিল কিনা জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘সেন্ট্রিরা সাধারণত থানার গেটে থাকে। হাজতের সামনে কেউ ডিউটি করেন না। জানা গেছে, শনিবার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ সন্ধ্যার পর বাবুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রোকসানা আক্তার নামে এক নারী তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। পরিদর্শক ইফতেখার ইসলাম রবিবার ভোর ৪টায় অচেতন অবস্থায় বাবুকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন। রবিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতের সাবেক স্ত্রী আলেয়া ফেরদৌসি তার লাশ শনাক্ত করেন। আলেয়া ফেরদৌসি বলেন, তাকে গতকাল রাস্তা থেকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। পুলিশই জানিয়েছে- আবু বক্কর সিদ্দিক ঢামেক হাসপাতালে রয়েছেন। পরে এসে তার মৃতদেহ দেখতে পাই। নিহত বাবু নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে মোহাম্মদপুর চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন। এফডিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাত পৌনে ৮টায় ফোনে পুলিশ আবু বক্কর সম্পর্কে জানতে চায়। এসময় আবু বক্কর সিদ্দিক এফডিসিতে চাকরি করেন বলে জানাই। পরে শুনেছি পুলিশ হেফাজতে তিনি মারা গেছেন। বাবুর সহকর্মী ক্যামেরাম্যান জিএম সাঈদ বলেন, শনিবার বিকেলে আমরা একসঙ্গে চা খেয়েছি। পরে শুনেছি তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পুলিশের কাছ থেকে জানতে পেরেছি রোকসানা আক্তার নামে এক নারী আবু বক্করের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে থানায় অভিযোগ করেছেন। ওই মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। জিএম সাঈদ বলেন, পুলিশ বলছে বাবু থানায় আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু বাবু আত্মহত্যা করার মতো ছেলে নয়। থানায় সে কিভাবে আত্মহত্যা করবে। এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার মৃত্যুর জন্য পুলিশই দায়ী। আমরা তার মৃত্যুর বিচার চাই। এফডিসির ফ্লোর ইনচার্জ বাবুকে শনিবার নারী নির্যাতন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সম্পর্কে শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আলী হোসেন বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়া এবং ছবি তুলে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে এক নারী বাবুর বিরুদ্ধে ওই মামলা করেন। গ্রেফতার করার পর তাকে থানা হাজতে রাখা হয়েছিল। মধ্যরাতের পর হাজতের গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ভোর ৪টার দিকে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। অন্যদিকে বাবুর স্ত্রী আলেয়া বেগম ঢাকা মেডিক্যালে সাংবাদিকদের বলেন, বাবুকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। থানায় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এফডিসিতে বাবুর সহকর্মী সাইফ আহমেদ জানান, শনিবার তারা একসঙ্গেই কাজ করেছেন। রাতে তাদের উর্ধতন কর্মকর্তাকে থানা থেকে ফোন করে বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি জানানো হয়। আলেয়ার মতো সাইফেরও সন্দেহ, থানা হাজতে বাবুর মৃত্যুর কারণ ‘নির্যাতন’। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে সহকর্মীর লাশ দেখে আসার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ওর শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। গলায় ফাঁস লাগলে যেমন হয়, তেমন কোন চিহ্ন তো দেখিনি। নর্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, তাদের পরিবার হত্যার অভিযোগ করতেই পারে। রাত ৩টার পরের ঘটনা। থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চাদর দিয়ে ফাঁস নেয়ার চেষ্টার বিষয়টি স্পষ্ট দেখা গেছে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নজরে আসামাত্র তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মইনুল হাসান বলেন, বাবু এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন।
×