ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পিপলস লিজিং ॥ আমানত পেতে আরও অপেক্ষা!

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২০ জানুয়ারি ২০২০

পিপলস লিজিং ॥ আমানত পেতে আরও অপেক্ষা!

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পিপলস লিজিংয়ের সম্পদ ও দায়দেনা সংক্রান্ত নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় অর্থ ফেরত পেতে গ্রাহকদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। টাকা পেতে কবে নাগাদ এই প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং শুরু হলে শেষ হতে কতদিন লাগবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। ফলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত বাবদ পিপলস লিজিংয়ের কাছে পাওনা থাকা ২ হাজার কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পিপলস লিজিংয়ের গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার আগে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ও দায়দেনা নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। আর ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকদের অর্থ আনুপাতিক হারে পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এইজন্য গত সেপ্টেম্বর থেকে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস নামক একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি পিপলসের ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার বছরের আয় ব্যয়, সম্পদ ও দায়দেনা নিরীক্ষা করে গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে একনাবিন নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। ফলে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে আরো তিন মাস সময় চাইলে আদালত আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে। ফলে গ্রাহকদের দায়দেনা পরিশোধ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে এই প্রতিবেদন আগে দরকার। তারপর পিপলসের সাধারণ ঋণ ও খেলাপি ঋণ আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের অর্থ অনুপাতিক হারে পরিশোধ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান বলেন, পিপলস লিজিংয়ের নিরীক্ষা কার্যক্রম গত ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নিরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান একনাবিন পিপলসের অডিট শেষ না করতে আরো তিন মাস সময় চেয়েছে। তবে আদালত ৪৫ দিন সময় দিয়েছেন। নতুন সময় আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। তিনি বলেন, পিপলসের সম্পদ ও দায় দেনা সংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন পেলে গ্রাহকদের অগ্রাধিবার ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে দায় দেনা পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে এটা কবে নাগাদ শুরু হবে তা নির্ভর করছে নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং পিপলসের বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে পাওনা টাকা উদ্ধার সাপেক্ষে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের জন্য আবেদন করলে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ দেয়। এতে পিপলসের কাছে ৬ হাজার বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত রাখা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আটকে পড়েছে। এই টাকা আমানতকারীরা আদৌ ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত পিপলস লিজিংয়ের কাছে ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। একই সময়ের হিসাব অনুযায়ী পিপলসের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। ফলে আমানত ও সম্পদের ব্যবধান ৬৯৮ কোটি টাকা। আবার সম্পদের ৬৬.১৪ শতাংশ অর্থ খেলাপি। ফলে এই টাকা আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের আমানতের অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে গত ৬ মাসে মাত্র ১২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক অবস্থা: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যনুযায়ী গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পিপলস লিজিংয়ের বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। আমানতের বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। আমানতের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর। এছাড়াও পিপলস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণ পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬.১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
×