ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

যার গান মানুষের মুখে মুখে

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

যার গান মানুষের মুখে মুখে

সব্যসাচী দাশ ॥ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এই নামটি শুনলে কত যে গান- এক নিমিষে মনের জানালায় উকিমারে, তার কোন ইয়াত্তা নেই। বলতে হয় ঢাকাই সিনেমার শ্রোতাপ্রিয় যত গান বেশিরভাগ তার-ই সৃষ্টি। তার মত গুণী সুরকার, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচাক এই বাংলায় অদ্বিতীয়! সঙ্গীতের অনেক ঘরানা থাকলেও, উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশে জনরুচির প্রথম প্রছন্দ সিনেমার গান। গান শুনে আনন্দ পাওয়া বা গানে গানে দর্শক ধরে রাখার ক্ষমতা এ অঞ্চলে কেবল সিনেমার বেলাতে দেখা গিয়েছে। এ অঞ্চলের সিনেমার গানে মানুষের সব ধরনের আবেগের জায়গা হয়েছে। যে কারণে, ভারতবর্ষে হাজার রকমের গানের প্রচলন থাকলেও এরমধ্যে সিনেমার গান মানুষের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। আলাদা করে বলতে গেলে বলিউড ফিল্মের গান সে দেশের গন্ডি পেরিয়ে অনেক দেশের শ্রোতাদের কাছে নন্দিত। তেমনি আমাদের দেশেও অনেক ধরনের গান থাকলেও সিনেমার গান সব থেকে মানুষের মুখে মুখে। এখানেই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কৃতিত্ব। ব্যক্তিগত জীবনে এই মানুষটি ছিল তার সৃষ্ট গানের মতোই নির্মল। হৃদয়ের সব প্রেম উজাড় করে গান বেঁধেছেন, সুর করেছেন এবং যথাযথ পরিবেশন করেছেন, গানের জন্য তার হৃদয় ছিল উর্বর। বর্তমান সময়ে আমাদের অন্যান্য অঙ্গনের মতো গানের ভুবনে যে খরা চলছে তার একটি কারণ এই মানুষটির অকালে চলে যাওয়া। এখন আর কেউ তার মতো করে হৃদয়ে টোকা দেয়ার গান রচনা করে না। যেমন, সব ক’টা জানালা খুলে দাও না, একাত্তরের মা জননী, আমার বুকের মধ্যে খানে, তুমি মোর জীবনের ভাবনা হৃদয়ে সুখের দোলা, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, কিংবা আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, আম্মাজান আম্মাজান, জীবনে বসন্ত এসেছে এমন মনোমুগ্ধকর গান কেউ আর শ্রোতাদের জন্য লেখে না বা সুর করে না। বড় আফসোস মাত্র ৬৩ বছর বয়েসে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়া এই মানুষটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। রেখে গেছেন আমাদের সীমাহীন শূন্যতায়... গত ২২ জানুয়ারি ছিল আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের প্রথম মৃত্যুবর্ষিকী। বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রের গানের যে বেহাল দশা, তাতে করে তার মতো একজন গীতি কবির হঠাৎ চলে যাওয়া কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। হয়ত তার মতো করে কেউ আর আমাদের জন্য ওমন হৃদয় পাগল করা গান বাঁধবেন না। দিন শেষে বেঁচে থাকুক তার প্রিয় গানেরা... ।
×