ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাজারীবাগে তুরাগ তীরে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

   হাজারীবাগে তুরাগ তীরে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার হাজারীবাগে তুরাগ নদের সীমানা পিলার বসানোর পাইলিং করার সময় বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে দুই ভাইসহ তিন শ্রমিকের মৃত্যু ও এক শ্রমিক আহত এবং বনানীতে রাস্তা পারাপারের সময় এক বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বেলা পৌনে এগারোটার দিকে হাজারীবাগ থানাধীন শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেছনে তুরাগ নদের সীমানা পিলার বসানোর জন্য পাইলিং করার সময় বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হচ্ছেন জরু শেখ (৩৫) ও তার সহোদর সাইফুল শেখ (৩০) এবং মঞ্জু (৩০) নামের আরেক শ্রমিক। আহত হয় এক শ্রমিক। তাকে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহত দুই ভাইয়ের পিতার নাম মুজিবুর রহমান। বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ থানাধীন জাহাঙ্গীরবাদ গ্রামে। নিহত মঞ্জুর পিতার নাম তালাত। বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট থানাধীন তারাগঞ্জ গ্রামে। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জনকণ্ঠকে জানান, পাইলিং করার সময় শ্রমিকের হাতে থাকা লোহার পাইপ ওপর দিয়ে যাওয়া ১১শ’ ভোল্টেজের বিদ্যুতের তার সঙ্গে লেগে যায়। এতে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ওই তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এক শ্রমিক আহত হন। তাকে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক মোঃ আবু জাফর জনকণ্ঠকে জানান, বিআইডব্লিউটিএ-এর তরফ থেকে তুরাগ নদের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পর নদের সীমানা পিলার বসানোর জন্য মাটি পরীক্ষার পর পাইলিংয়ের কাজ চলছে। পাইলিং করার সময় শ্রমিকদের হাতে থাকা লোহার পাইপ উপরে থাকা বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে স্পর্শ লাগে। এতে করে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নিহতদের লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে সংবাদ দেয়া হয়েছে। পোস্টমর্টেম শেষে লাশ নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। পরিবারের তরফ থেকে মামলা দায়ের হতে পারে। আবার বিআইডব্লিউটিএ-এর তরফ থেকে বা পুলিশের তরফ থেকেও মামলা হতে পারে। বিষয়টি বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। লাশ হস্তান্তর করার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিবারকে বিআইডব্লিউটিএ-এর তরফ থেকে বা অন্য কোন সংস্থার তরফ থেকে আর্থিক কোন সহায়তা দেয়া কথা জানা যায়নি। হতাহতরা সবাই একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দিনমজুর বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দূষণ বন্ধ ও নাব্য ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেন। এ কাজে বরাদ্দ দেয়া হয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাইতে শুরু হয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প। ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত নদী রক্ষায় যুগান্তকারী রায় দেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে নদ-নদী ঘিরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। ইতোমধ্যেই বুড়িগঙ্গা নদী ও তুরাগ নদে তিন দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর নদ-নদীর সীমানা পিলার বসানোর কাজ চলছে। এদিকে মঙ্গলবার রাত এগারোটার দিকে ঢাকার বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নুরুল ইসলাম (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহতের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। চিকিৎসার জন্য সোমবার বনানী টি এ্যান্ড টি কলোনিতে তার ভাই সালামের বাসায় এসেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে মালিবাগের একটি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পর বাসায় ফেরার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সময় তিনি রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় বেপরোয়া গতির একটি বাস তাকে ধাক্কা দিলে তিনি মারাত্মক আহত হন। দ্রুত তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়। বনানী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানাধীন হোগলা গ্রামে। ঘাতক বাস ও বাসটির চালককে আটক করা হয়েছে।
×