ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুকুর খনন শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

  পুকুর খনন শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার \ ভিন্ন যুক্তিতে ‘পুকুর খনন শিখতে’ কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের পক্ষে মত দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পুকুর খননে দক্ষতা লাভ করতে রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১৬ কর্মকর্তার বহুল আলোচিত বিদেশ সফর নিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক ভাইয়েরা পুকুর কাটা নিয়ে বিদেশ যাওয়া সম্বন্ধে একটি নিউজ করেছিলেন। সারাদেশে আলোচিত। সেই সুবাদে একনেক সভায় ও আমাদের ক্যাবিনেটে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেকে নানা ধরনের মন্তব্যও করেছেন। তারা অনেক কষ্ট করেন, দূর-দূরান্তে থাকেন। বেতন-ভাতা দিতে পারি না আমরা। একটু মাঝে মাঝে যদি আমেরিকা যায় বা অস্ট্রেলিয়া যায় যাক, ঘুরে আসুক। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দেশের ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচে ব্যবহার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। গত ২৭ আগস্ট একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৬ কর্মকর্তা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের যেকোনো একটি দেশ সফর করবেন। আজ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘হাওর এবং পাহাড়ি এলাকায় বাড়তি ভাতার প্রয়োজন আছে। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে উদার। এর আগে আমরা দেখেছি, কর্মীরা বেতন-ভাতা পেত না। মাঠে গিয়ে খেটে-খুটে অনেকে কাজ ফেলে রাখত। এবার তেমনটা হবে না। টাকাটা সঙ্গে সঙ্গে দেয়া হবে। এছাড়া ভাতা বাড়ানো হয়েছে চারগুণ। আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।’ সভায় জানানো হয়, আগামী বছরের ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে দেশের ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা। চলবে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবারই প্রথম জনশুমারিতে গণনারা আওতায় আনা হচ্ছে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি (প্রবাসী) ও দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে শুমারির ক্ষণগণনা শুরু হবে। অর্থবছরকে ক্যালেন্ডার ইয়ারের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকে ক্যালেন্ডার ইয়ার অনুসরণ করতে বলেছেন। আমিও ক্যালেন্ডার ইয়ারের পক্ষে। কারণ আমাদের বছর জুন-জুলাই হওয়ার কারণে অনেক সময় ব্যতিক্রম লাগে। আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কথা হয়েছিল। অন্তত মার্চ মাস থেকে যদি শুরু করা যায় তাহলে ভালো হয়।’ বিশ্ব সংস্থাগুলো বাংলাদেশের পরিসংখ্যান কোড করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফ-ওয়াল্ড ব্যাংক একটু নাক উঁচু সংস্থা। তবে এখন তারাও আমাদের পরিসংখ্যান তথ্যগুলো ব্যবহার করছে। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো এখন বিশ্বমানের। আলাপ আলোচনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো স্বীকার করেছে, তারা তাদের তথ্যের সঙ্গে আমাদের তথ্যের মিল পাচ্ছেন। আমাদের ব্যুরোর তথ্য অনেক এগিয়েছে। আপনারা যদি একটু কষ্ট করেন তাহলে তা আরও ভালো হবে।’ তিনি বলেন, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজকে আরও নির্ভুল করতে উপজেলা নির্বাহীদের কাজে লাগাতে হবে। শুধু উপজেলা নির্বাহী নয়, তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কাজে লাগানো যাবে। জনশুমারির একটি ফরম উপজেলায় টাঙিয়ে রাখলে জনগণ তা দেখতে পারবে।’ শুমারি থেকে পাওয়া সব তথ্য প্রকাশ হবে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা নির্ভুলভাবে এ কাজ করতে চাই। ফলাফল যা-ই আসুক, আমরা সঠিক তথ্যটাই জনগণের কাছে তুলে ধরতে চাই। কারণ জনগণের জানার অধিকার আছে। সেটা যত ভয়ঙ্কর হোক না কেন। তবে ভয়ঙ্কর কোনো তথ্য আসবে না, কারণ বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। জনশুমারি ও গৃহগণনা করতে গিয়েও কিছু ভুল হয়। কিন্তু আমরা এবার খুব ভালোভাবে জনশুমারি ও গৃহগণনা করতে চাই।’ শুমারি গণনায় যোগ্য জনশক্তিকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ন্যূনতম এইচএসসি পাস তরুণরা এখানে কাজ করতে পারবেন। এছাড়া অনার্স-মাস্টার্স যোগ্যতার অনেকে তো আসবেনই। অনেকে অভিযোগ করেছেন, দলীয় লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে। যোগ্যতা থাকলে তাকে নেয়া হবে। দলীয় লোক হলে সমস্যা নেই।’ রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক হতে আহ্বান জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের অতিথি। তাদের প্রতি আমাদের মানবিক হতে হবে। তারা মার খেয়ে পানিতে ভেসে এসেছে। তাদের প্রতি আমরা মানবিক আচরণ করব। তাদের যাতে সম্মান রক্ষা হয়, সেই বিষয়টি দেখতে হবে।’ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক (জনশুমারি) জাহিদুল হক সরদারসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক (জনশুমারি) জাহিদুল হক সরদার জনশুমারি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগামী বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা পরিচালিত তবে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় শুমারির প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম হিসেবে আগামী মাসে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে দেশব্যাপী খানা তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রম শুরু হবে। এবারই প্রথম জনশুমারিতে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের গণনা করবে সরকার।
×