ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেকার যুবাদের স্বপ্ন পূরণে নীলফামারী টিটিসি

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

  বেকার যুবাদের স্বপ্ন পূরণে নীলফামারী টিটিসি

বেকার যুবাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছে সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেকে আজ আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে। ইতোমধ্যে এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে গিয়ে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছেন তেইশ জন। যাওয়ার তালিকায় নারীসহ রয়েছেন আরও অন্তত পনেরো জন। দ্রুতই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে তারাও পাড়ি জমাবেন জাপান, ওমান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে। প্রতি ট্রেডে ৪০জন করে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৮১২জন প্রশিক্ষণ নিয়েছে এখানে। এছাড়াও নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে। ২০১৬ সালে ৪টি ট্রেড এবং নবম শ্রেণীতে ভোকেশনালে দুটি ট্রেড নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে এখন কারিগরি প্রশিক্ষণ বিষয়ক ১৫টি ট্রেড, পাঁচটি ভাষা শিখন কোর্স এবং ভোকেশনালে ৭টি কোর্স চালু হয়েছে এখন পর্যন্ত। ভোকেশনালে দেশের দ্বিতীয় জেলা হিসেবে রয়েছে নীলফামারী। একমাত্র বগুড়া টিটিসিতে ১১টি ট্রেড রয়েছে তারপরের জেলাই নীলফামারী। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আর্কিটেকচার ড্রাফটিং উইথ অটোক্যাড, কম্পিউটার অপারেশন, গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল হাউজওয়্যারিং, কনজুমার ইলেকট্রনিক্স, মেশিন টুলস অপারেশন, ওয়েল্ডিং এ্যান্ড ফেব্রিকেশন, মোটর ড্রাইভিং, রেফ্রিজারেশন এ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, মোবাইল সার্ভিসিং, সিএনসি অপারেশন, সলিড ওয়াকার্স এ্যান্ড মাস্টারক্যাম, ম্যাশন, হাউস কিপিং এবং প্রাক বহির্গমন ট্রেডে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। এছাড়া জাপানি, কোরিয়ান, ইংরেজী এবং চাইনিজ ভাষা শেখানো হচ্ছে এখানে। ট্রেড ভেদে একমাস থেকে শুরু করে ছয় মাস পর্যন্ত সময়কালে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থীদের। অষ্টম শ্রেণী পাস থেকে এইচএসসি পাস করা যুবারা ভর্তি হতে পারেন টিটিসিতে। প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে জর্দানে গেছেন এক নারী, হাউস কিপিংয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ওমানে চারজন, সৌদি আরবে ১৫জন এবং ড্রাইভিংয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দুবাইয়ে গেছেন তিনজন। এছাড়া জাপানী ভাষা প্রশিক্ষণ নিয়ে সেখানে যেতে দুই নারীসহ সাতজন নির্বাচিত হয়েছেন সম্প্রতি। দুবাইয়ের তালিকায় রয়েছেন ২৩ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তালিকায় রয়েছেন ৭জন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে দ্রুতই পাঠানো হবে তাদের। জাপান যেতে মনোনীত হওয়া জেলা শহরের গাছবাড়ি এলাকার গোলাম আযম সাজু বলেন, আমি অনার্স সম্পন্ন করে অনেক চেষ্টা করেও সরকারী চাকরি পাইনি। টিটিসিতে জাপানী ভাষার ওপর ছয়মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপান যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছি। আমার পরিবার নিম্ন আয়ের। সেখানে গিয়ে আমি পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে চাই। শহরের ধনীপাড়া এলাকার ঈশিতা বানু পপি জানান, আমার পক্ষে জাপান যাওয়ার চিন্তা করাটাও দুঃস্বপ্ন ছিল কিন্তু টিটিসিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেটা তৈরি হয়েছে। সেখানে গিয়ে আমি দেখাতে চাই মেয়েদেরও সমতা রয়েছে। জাপানী ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষক মাসুদ আলম বলেন, জাপানে বাংলাদেশীদের চাকরির সুযোগ অনেক। আমরা সেটা ধরতে পারছি না। এটার মূল কারণ হচ্ছে ভাষা জানা না থাকা। তিনি বলেন, সেখানে আমি ১২ বছর ছিলাম। নীলফামারীতে জাপানী ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হওয়ার ফলে বেকার যুবদের জন্য বড় একটি জায়গা তৈরি হয়েছে এটি ব্যবহার করে জাপান যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। মাত্র কয়েক বছরের এই প্রতিষ্ঠানটি সফলতা দেখালেও জনবল সঙ্কট অনেকটা পিছিয়ে রাখছে দ্রুত গতির কাজের ক্ষেত্রে। ১৮জন কর্মকর্তার স্থলে ১৩জন, ২২জন কর্মচারীর স্থলে রয়েছেন ১১জন। প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, দক্ষ জনশক্তি তৈরির কারখানা তৈরি হয়েছে টিটিসি। এটির সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা চেষ্টা করছি প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করতে। এ জন্য গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য প্রতি উপজেলা থেকে এক হাজার বেকার যুবককে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে বিদেশে পাঠানো। -তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে
×